, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর, আংশিক সেনা প্রত্যাহার করল ইসরায়েল

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি সেনারা শুক্রবার সকালে কিছু এলাকা থেকে অর্ধেকের বেশি সেনা প্রত্যাহার করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তারা বলছে, চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে তারা পিছু হটেছে, তবে এখনও গাজার প্রায় অর্ধেক অংশ দখলে রেখেছে সেনারা। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পরে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি গাজার উত্তরাঞ্চলের দিকে হাঁটতে দেখা গেছে, যা সম্প্রতি বেশ কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছিল। অনেকেই ক্ষুধার্ত, দুর্বল ও নিঃস্ব হয়ে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটছেন, সঙ্গে তাদের হাতে কিছু অবশিষ্ট সামান্য জিনিসপত্র। এই যুদ্ধবিরতি একটি চুক্তির অংশ, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়েছে, এবং বুধবার ইসরায়েলি সরকার তা অনুমোদন করে। চুক্তি অনুযায়ী, সোমবার দুপুরের মধ্যে হামাসকে সব ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি দিতে হবে, এর মধ্যে ২০ জন জীবিত ও আরও ২৮ জনের মরদেহ থাকতে পারে।
এছাড়াও, ইসরায়েলি বাহিনী ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে, যাদের মধ্যে ১০০ জন পশ্চিম তীর থেকে এবং ৫ জন পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিরবেন। গাজা থেকে আটক ১,৭০০ ফিলিস্তিনিকেও ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, গাজার ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জন্য মানবিক সহায়তার ট্রাকগুলো অবাধে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক দিন প্রায় ৬০০ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে গাজার ভেতরে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সহায়তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে প্রথমবারের মতো গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। সেখানে ৫ লাখের বেশি মানুষ ‘ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমাদের বাহিনী হালনাগাদ মোতায়েন লাইনে অবস্থান নিয়েছে এবং যে কোনো তাত্ক্ষণিক হুমকি প্রতিরোধে কাজ চালিয়ে যাবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০ মার্কিন সেনা গাজায় যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য ইসরায়েলে পাঠানো হচ্ছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টেলিভিশনে বলেন, ‘আমরা প্রতিশ্রুতি পূরণ করছি—সব বন্দিকে ফেরত আনা হবে।’ তিনি আরও জানান, ইসরায়েলি বাহিনী এখনও ‘হামাসকে ঘিরে রেখেছে’ এবং যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পর্যায়ে ‘হামাসকে নিরস্ত্র ও গাজাকে সামরিকভাবে নিষ্ক্রিয়’ করা হবে। অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা গাজায় কোনো বিদেশি তত্ত্বাবধান মেনে নেবে না। সংগঠনটি দাবি করেছে, এটি সম্পূর্ণ ‘আভ্যন্তরীণ ফিলিস্তিনি বিষয়’। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, শুক্রবার প্রায় দুই লাখ মানুষ গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরে গেছেন। তাদের অনেকেরই ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, তবুও তারা ফিরে আসছেন নিজ ভূমিতে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে এ পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি শিশু। জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছেন, যা ইসরায়েল ‘মিথ্যা ও বিকৃত প্রতিবেদন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এখন দেখার বিষয়—গাজায় শান্তি ফিরে আসবে না কি এটি কেবল স্বল্পমেয়াদি বিরতি মাত্র।
সূত্র: বিবিসি


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর, আংশিক সেনা প্রত্যাহার করল ইসরায়েল

আপডেট সময় ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি সেনারা শুক্রবার সকালে কিছু এলাকা থেকে অর্ধেকের বেশি সেনা প্রত্যাহার করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তারা বলছে, চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে তারা পিছু হটেছে, তবে এখনও গাজার প্রায় অর্ধেক অংশ দখলে রেখেছে সেনারা। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পরে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি গাজার উত্তরাঞ্চলের দিকে হাঁটতে দেখা গেছে, যা সম্প্রতি বেশ কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছিল। অনেকেই ক্ষুধার্ত, দুর্বল ও নিঃস্ব হয়ে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটছেন, সঙ্গে তাদের হাতে কিছু অবশিষ্ট সামান্য জিনিসপত্র। এই যুদ্ধবিরতি একটি চুক্তির অংশ, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়েছে, এবং বুধবার ইসরায়েলি সরকার তা অনুমোদন করে। চুক্তি অনুযায়ী, সোমবার দুপুরের মধ্যে হামাসকে সব ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি দিতে হবে, এর মধ্যে ২০ জন জীবিত ও আরও ২৮ জনের মরদেহ থাকতে পারে।
এছাড়াও, ইসরায়েলি বাহিনী ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে, যাদের মধ্যে ১০০ জন পশ্চিম তীর থেকে এবং ৫ জন পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিরবেন। গাজা থেকে আটক ১,৭০০ ফিলিস্তিনিকেও ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, গাজার ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জন্য মানবিক সহায়তার ট্রাকগুলো অবাধে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক দিন প্রায় ৬০০ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে গাজার ভেতরে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সহায়তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে প্রথমবারের মতো গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। সেখানে ৫ লাখের বেশি মানুষ ‘ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমাদের বাহিনী হালনাগাদ মোতায়েন লাইনে অবস্থান নিয়েছে এবং যে কোনো তাত্ক্ষণিক হুমকি প্রতিরোধে কাজ চালিয়ে যাবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০ মার্কিন সেনা গাজায় যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য ইসরায়েলে পাঠানো হচ্ছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টেলিভিশনে বলেন, ‘আমরা প্রতিশ্রুতি পূরণ করছি—সব বন্দিকে ফেরত আনা হবে।’ তিনি আরও জানান, ইসরায়েলি বাহিনী এখনও ‘হামাসকে ঘিরে রেখেছে’ এবং যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পর্যায়ে ‘হামাসকে নিরস্ত্র ও গাজাকে সামরিকভাবে নিষ্ক্রিয়’ করা হবে। অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা গাজায় কোনো বিদেশি তত্ত্বাবধান মেনে নেবে না। সংগঠনটি দাবি করেছে, এটি সম্পূর্ণ ‘আভ্যন্তরীণ ফিলিস্তিনি বিষয়’। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, শুক্রবার প্রায় দুই লাখ মানুষ গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরে গেছেন। তাদের অনেকেরই ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, তবুও তারা ফিরে আসছেন নিজ ভূমিতে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে এ পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি শিশু। জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছেন, যা ইসরায়েল ‘মিথ্যা ও বিকৃত প্রতিবেদন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এখন দেখার বিষয়—গাজায় শান্তি ফিরে আসবে না কি এটি কেবল স্বল্পমেয়াদি বিরতি মাত্র।
সূত্র: বিবিসি


প্রিন্ট