, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

গাজায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনে বহু দেশ আগ্রহী: মার্কো রুবিও

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৯:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৬ বার পড়া হয়েছে

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গাজায় আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী গঠনে অনেক দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই বাহিনী গঠনে অংশ নেওয়া দেশগুলোকে ইসরায়েলকে নিশ্চিন্ত থাকতে হবে। ইসরায়েলে অবস্থানকালীন সময়ে রুবিও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী’ (আইএসএফ) তৈরির ব্যাপারে আলোচনা চলছে এবং সেটি যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা হবে। তবে হামাসের সঙ্গে সমঝোতা না থাকলে এই বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে স্পষ্টতা এখনও আসেনি। রুবিও আরো বলেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির পর দুই সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যদিও ভবিষ্যতে উত্থান-পতন আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই পরিকল্পনা বিকল্প কোন পথ নয়। এটি একমাত্র বিকল্প ও সফলতার আশা করা যায়।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যেন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের মতো হামলা আর কখনো না ঘটে। গাজাকে এমন জায়গায় রূপান্তরিত করতে হবে যেখানে কেউ আর ইসরায়েল বা নিজের জনগণের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে না পারে।’ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রক, যা জাতিসংঘও স্বীকার করেছে। রুবিও বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে। ‘যদি তারা নিরস্ত্র হতে অস্বীকার করে, তা চুক্তি লঙ্ঘনের মতো গণ্য হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’ তিনি মন্তব্য করেন। আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে গাজা শাসনে হামাস কোনোভাবেই অংশ নিতে পারবে না।’ এই সফর এমন সময় হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েল সফর করেছেন। ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হলো ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনা সফল করা, যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কিছু পদক্ষেপে মার্কিন প্রশাসন উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলি গণমাধ্যমে এই পরিস্থিতিকে রসিকভাবে বলা হচ্ছে ‘বিবি-সিটিং’, অর্থাৎ নেতানিয়াহুকে ‘তদারকি’ করা। সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরায়েলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে গত সপ্তাহে হামাসকে দায়ী করে ইসরায়েল যে হামলা চালায় তাতে বহু বেসামরিক নিহত হয়। তাছাড়া, পশ্চিম তীর দখলের পক্ষে ইসরায়েলি সংসদে ভোট হওয়ার ঘটনাও মার্কিন অসন্তোষ বাড়িয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের মতো অপ্রত্যাশিত কোন পদক্ষেপ তারা সহ্য করবেন না—এবং ইসরায়েলের যেকোনো সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার আগে তাদের জানানো উচিত। তবে নেতানিয়াহু বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে—এমন ধারণা ভুল। তিনি এই সম্পর্ককে ‘সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তবে সবচেয়ে বড় মিত্র দেশের চাপের মুখে নেতানিয়াহুর সরকার কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। গাজা যুদ্ধকে দেশের অভ্যন্তরে ‘বিজয়’ হিসেবে উপস্থাপন করার কৌশল এখন হুমকির মুখে, যা ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রুবিও ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স দুজনই প্রকাশ্যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে। তবে তারা স্বীকার করেছেন, অন্যান্য ইস্যু—যেমন সেনা প্রত্যাহার, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও আইএসএফ গঠনের বিষয়গুলো আলোচনা দীর্ঘ ও কঠিন হবে। রুবিও বলেন, ‘অনেক দেশ আইএসএফ-এ অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এমন দেশগুলোকেই অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাদের উপস্থিতিতে ইসরায়েল স্বস্তি অনুভব করবে।’ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিনি সম্ভবত তুরস্কের অংশগ্রহণের বিষয়টি ইঙ্গিত করেছেন, যাকে ইতিমধ্যে ইসরায়েল আপত্তি জানিয়েছে। আইএসএফের নির্দিষ্ট দায়িত্ব এখনো জানা যায়নি। অনেক দেশ আশঙ্কা করছে, হামাসের সঙ্গে চুক্তি না হলে তাদের সেনারা গাজায় হামাস যোদ্ধাদের মুখোমুখি হতে পারে। রুবিও শেষ পর্যন্ত বলেন, ‘এই শান্তি পরিকল্পনা সহজ হবে না। বাধা আসবে, সময় লাগবে, কিন্তু আমাদের এটি সফল করতে হবে।’ সূত্র: বিবিসি


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনে বহু দেশ আগ্রহী: মার্কো রুবিও

আপডেট সময় ০৯:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গাজায় আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী গঠনে অনেক দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই বাহিনী গঠনে অংশ নেওয়া দেশগুলোকে ইসরায়েলকে নিশ্চিন্ত থাকতে হবে। ইসরায়েলে অবস্থানকালীন সময়ে রুবিও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী’ (আইএসএফ) তৈরির ব্যাপারে আলোচনা চলছে এবং সেটি যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা হবে। তবে হামাসের সঙ্গে সমঝোতা না থাকলে এই বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে স্পষ্টতা এখনও আসেনি। রুবিও আরো বলেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির পর দুই সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যদিও ভবিষ্যতে উত্থান-পতন আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই পরিকল্পনা বিকল্প কোন পথ নয়। এটি একমাত্র বিকল্প ও সফলতার আশা করা যায়।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যেন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের মতো হামলা আর কখনো না ঘটে। গাজাকে এমন জায়গায় রূপান্তরিত করতে হবে যেখানে কেউ আর ইসরায়েল বা নিজের জনগণের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে না পারে।’ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রক, যা জাতিসংঘও স্বীকার করেছে। রুবিও বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে। ‘যদি তারা নিরস্ত্র হতে অস্বীকার করে, তা চুক্তি লঙ্ঘনের মতো গণ্য হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’ তিনি মন্তব্য করেন। আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে গাজা শাসনে হামাস কোনোভাবেই অংশ নিতে পারবে না।’ এই সফর এমন সময় হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েল সফর করেছেন। ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হলো ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনা সফল করা, যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কিছু পদক্ষেপে মার্কিন প্রশাসন উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলি গণমাধ্যমে এই পরিস্থিতিকে রসিকভাবে বলা হচ্ছে ‘বিবি-সিটিং’, অর্থাৎ নেতানিয়াহুকে ‘তদারকি’ করা। সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরায়েলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে গত সপ্তাহে হামাসকে দায়ী করে ইসরায়েল যে হামলা চালায় তাতে বহু বেসামরিক নিহত হয়। তাছাড়া, পশ্চিম তীর দখলের পক্ষে ইসরায়েলি সংসদে ভোট হওয়ার ঘটনাও মার্কিন অসন্তোষ বাড়িয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের মতো অপ্রত্যাশিত কোন পদক্ষেপ তারা সহ্য করবেন না—এবং ইসরায়েলের যেকোনো সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার আগে তাদের জানানো উচিত। তবে নেতানিয়াহু বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে—এমন ধারণা ভুল। তিনি এই সম্পর্ককে ‘সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তবে সবচেয়ে বড় মিত্র দেশের চাপের মুখে নেতানিয়াহুর সরকার কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। গাজা যুদ্ধকে দেশের অভ্যন্তরে ‘বিজয়’ হিসেবে উপস্থাপন করার কৌশল এখন হুমকির মুখে, যা ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রুবিও ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স দুজনই প্রকাশ্যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে। তবে তারা স্বীকার করেছেন, অন্যান্য ইস্যু—যেমন সেনা প্রত্যাহার, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও আইএসএফ গঠনের বিষয়গুলো আলোচনা দীর্ঘ ও কঠিন হবে। রুবিও বলেন, ‘অনেক দেশ আইএসএফ-এ অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এমন দেশগুলোকেই অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাদের উপস্থিতিতে ইসরায়েল স্বস্তি অনুভব করবে।’ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিনি সম্ভবত তুরস্কের অংশগ্রহণের বিষয়টি ইঙ্গিত করেছেন, যাকে ইতিমধ্যে ইসরায়েল আপত্তি জানিয়েছে। আইএসএফের নির্দিষ্ট দায়িত্ব এখনো জানা যায়নি। অনেক দেশ আশঙ্কা করছে, হামাসের সঙ্গে চুক্তি না হলে তাদের সেনারা গাজায় হামাস যোদ্ধাদের মুখোমুখি হতে পারে। রুবিও শেষ পর্যন্ত বলেন, ‘এই শান্তি পরিকল্পনা সহজ হবে না। বাধা আসবে, সময় লাগবে, কিন্তু আমাদের এটি সফল করতে হবে।’ সূত্র: বিবিসি


প্রিন্ট