, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী নেবে জাপান

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০২:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ থেকে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে জাপানের ‘ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস’ (এনবিসিসি) এর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। ‘ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস’ হলো ৬৫টির বেশি জাপানি কোম্পানির একটি ব্যবসায়ী সংগঠন। যারা সম্প্রতি দক্ষ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সুবিধার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো জাপানে বাংলাদেশের কর্মীদের প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেশন এবং কর্মসংস্থানের জন্য একটি কাঠামো গড়ে তোলা। এর ফলে ভবিষ্যতের পাঁচ বছর ধরে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (টিআইটিপি) ও নির্দিষ্ট দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমিক (এসএসডব্লিউও) এর মতো কর্মসূচির আওতায় এক লাখের বেশি কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিনিধি দল জানায়, প্রথম ধাপ হিসেবে আগামী বছর দুই হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া চলমান। পরবর্তী সময়ে ২০২৭ সালে ছয় হাজার ও ২০২৮ সালে অর্ধদ্রুত ১৮ হাজার কর্মী নিয়োগের লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে নির্মাণ, সেবা, এভিয়েশন, গার্মেন্টস ও কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মীর প্রয়োজন বলে জানান তারা। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে গাড়িচালক, অটোমোবাইল ও রিসাইক্লিং খাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য খুলনা ও গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সম্ভাব্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এনবিসিসি প্রতিনিধিরা দুটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা কর্মীদের প্রশিক্ষণে কোনও সমস্যা বা ঘাটতি থাকলে তা জানতে চান। প্রতিনিধিদলের প্রধান, এনবিসিসি চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা বলেন, ‘আমি গত মার্চ মাসে এই দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছিলাম। এবার এসে দেখলাম অনেক অগ্রগতি হয়েছে। প্রশিক্ষণের মানে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। আমরা আশাবাদী, আগামী বছরে দুই হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগ সম্ভব হবে।’ তবে ভাষাগত দক্ষতা উন্নত করা গেলে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে বলেও তিনি মত ব্যক্ত করেন। ‘ভাষাগত দক্ষতা অর্জন বড় চ্যালেঞ্জ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ জন্য ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করা যেতে পারে। জাপান থেকে শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নেবেন। পাশাপাশি, জাপান থেকে প্রশিক্ষক এনে এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।’ এসময় বাংলাদেশের নারীদের পারদর্শিতা ও কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কেয়ারগিভিং সেক্টরে বাংলাদেশের নারীরা এক বিশেষ স্থান দখল করে রাখে। তারা অত্যন্ত যত্নশীল। ভাষাগত দক্ষতা ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের মেয়েরা জাপানের কেয়ারগিভিং সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কিছুটা কঠিন মনে হলেও, একবার প্রশিক্ষণ শেষ হলে তারা অন্যদেরও শেখাতে পারবে। একবার শুরু হলে অন্যরাও উৎসাহিত হবে।’ এনবিসিসি প্রতিনিধিরা জানান, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জাপানে চার লাখের বেশি দক্ষ নার্সের প্রয়োজন হবে। তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি নার্স নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। বৈঠকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, সরকার জাপানে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রণালয় থেকে জাপানে কর্মী নিয়োগের সমস্যা সমাধানে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।


প্রিন্ট
ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী নেবে জাপান

আপডেট সময় ০২:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ থেকে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে জাপানের ‘ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস’ (এনবিসিসি) এর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। ‘ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস’ হলো ৬৫টির বেশি জাপানি কোম্পানির একটি ব্যবসায়ী সংগঠন। যারা সম্প্রতি দক্ষ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সুবিধার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো জাপানে বাংলাদেশের কর্মীদের প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেশন এবং কর্মসংস্থানের জন্য একটি কাঠামো গড়ে তোলা। এর ফলে ভবিষ্যতের পাঁচ বছর ধরে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (টিআইটিপি) ও নির্দিষ্ট দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমিক (এসএসডব্লিউও) এর মতো কর্মসূচির আওতায় এক লাখের বেশি কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিনিধি দল জানায়, প্রথম ধাপ হিসেবে আগামী বছর দুই হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া চলমান। পরবর্তী সময়ে ২০২৭ সালে ছয় হাজার ও ২০২৮ সালে অর্ধদ্রুত ১৮ হাজার কর্মী নিয়োগের লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে নির্মাণ, সেবা, এভিয়েশন, গার্মেন্টস ও কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মীর প্রয়োজন বলে জানান তারা। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে গাড়িচালক, অটোমোবাইল ও রিসাইক্লিং খাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য খুলনা ও গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সম্ভাব্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এনবিসিসি প্রতিনিধিরা দুটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা কর্মীদের প্রশিক্ষণে কোনও সমস্যা বা ঘাটতি থাকলে তা জানতে চান। প্রতিনিধিদলের প্রধান, এনবিসিসি চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা বলেন, ‘আমি গত মার্চ মাসে এই দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছিলাম। এবার এসে দেখলাম অনেক অগ্রগতি হয়েছে। প্রশিক্ষণের মানে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। আমরা আশাবাদী, আগামী বছরে দুই হাজার দক্ষ কর্মী নিয়োগ সম্ভব হবে।’ তবে ভাষাগত দক্ষতা উন্নত করা গেলে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে বলেও তিনি মত ব্যক্ত করেন। ‘ভাষাগত দক্ষতা অর্জন বড় চ্যালেঞ্জ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ জন্য ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করা যেতে পারে। জাপান থেকে শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নেবেন। পাশাপাশি, জাপান থেকে প্রশিক্ষক এনে এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।’ এসময় বাংলাদেশের নারীদের পারদর্শিতা ও কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কেয়ারগিভিং সেক্টরে বাংলাদেশের নারীরা এক বিশেষ স্থান দখল করে রাখে। তারা অত্যন্ত যত্নশীল। ভাষাগত দক্ষতা ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের মেয়েরা জাপানের কেয়ারগিভিং সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কিছুটা কঠিন মনে হলেও, একবার প্রশিক্ষণ শেষ হলে তারা অন্যদেরও শেখাতে পারবে। একবার শুরু হলে অন্যরাও উৎসাহিত হবে।’ এনবিসিসি প্রতিনিধিরা জানান, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জাপানে চার লাখের বেশি দক্ষ নার্সের প্রয়োজন হবে। তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি নার্স নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। বৈঠকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, সরকার জাপানে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রণালয় থেকে জাপানে কর্মী নিয়োগের সমস্যা সমাধানে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।


প্রিন্ট