খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে সুখবর দিলেন তথ্য উপদেষ্টা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক ইউপি সদস্যের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা অন্তত ১৯৩
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু
হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গেলেন তামিম ইকবাল
নোয়াখালীতে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় কোরআন খতম ও দোয়া
মসজিদে বিয়ে ও সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন শবনম ফারিয়া
দেশে বাড়লো সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম
ইসরায়েলি হামলার গাজায় নিহত ৭০ হাজারের বেশি
খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস
খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের নাশকতার পরিকল্পনা: আইএসপিআর
- আপডেট সময় ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৯ বার পড়া হয়েছে
চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির রামসু বাজার এলাকায় ইউপিডিএফের লোকে вооруж সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিন পাহাড়ি যুবক প্রাণ হারান। এর পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকাগুলোতে যেখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প নেই, সেসব স্থানে দীর্ঘমেয়াদী অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে আইএসপিআর-এর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, অভিযানের প্রস্তুতিমূলক হিসেবে গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, ২৮ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফের অস্ত্রধারী সদস্যরা খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকার বিভিন্ন পাড়া থেকে এসে রামসু বাজারে সেনা ও সাধারণ জনগণের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। এই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য এলাকার মতো খাগড়াছড়ির বর্মাছড়িতে ১৮ অক্টোবর থেকে সেনা অভিযান শুরু করে। অভিযানের অংশ হিসেবে সেনা টহল দল মূল ক্যাম্প থেকে দূরে অস্থায়ী পেট্রোল বেস তৈরি করে বর্মাছড়ি থেকে ইউপিডিএফের সশস্ত্র দলের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালানো শুরু করে। আইএসপিআর জানায়, এই সময়ে বর্মাছড়িতে সেনা অভিযান চলাকালে একটি বনাঞ্চলপূর্ণ এলাকায় অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপন করে, যা বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এবং বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহার থেকে ৫০০ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত। সেনা উপস্থিতি ও অভিযানের কারণে ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যরা দ্রুত পাড়া ছেড়ে দুর্গম কালাপাহাড় ও ফটিকছড়ির দুর্গম এলাকায় অবস্থান নেয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, দীর্ঘমেয়াদী সেনা অভিযানের কারণে খাগড়াছড়িতে সামনে মাসগুলোতে ইউপিডিএফের চাঁদা আদায় ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে বাধা আসার আশঙ্কায় তারা ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে অস্থায়ী সেনা পেট্রোল বেসের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী, নারী ও শিশুদের জোরপূর্বক জমায়েত করে আন্দোলন শুরু করে।
বন বিভাগের সংরক্ষিত জমিতে স্থাপিত এই অস্থায়ী অবস্থানটিকে তারা বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহারের অংশ বলে দাবি করে, পাশাপাশি দেশ-বিদেশের প্রচুর অনলাইন প্রচারনা চালিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের ইউপিডিএফের আধিপত্যের এলাকাগুলোতে পোস্টার লাগিয়ে পাহাড়ি জনতাকে উত্তেজিত করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ অক্টোবর ইউপিডিএফের নেতৃত্বে বর্মাছড়ির এই পেট্রোল বেসের কাছে এক হাজারেরও বেশি নারী, শিশু ও পুরুষের জমায়েত হয় এবং সেনা সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তারা দাবি করে যে, এই অস্থায়ী পেট্রোল বেসটি আর্য কল্যাণ বিহারের অংশ এবং সেনাবাহিনীর কাছে স্মারকলিপি দেয়। কিন্তু দাবি সমর্থনের জন্য কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকাটি পাহাড়ি জনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং নিকটবর্তী স্থানে কোনো সেনা ক্যাম্প না থাকার কারণে ইউপিডিএফ দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি, এই এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়কযোগে যুক্ত থাকায় এটি দেশের অভ্যন্তরে অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আইএসপিআর জানায়, বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য ও ইউপিডিএফ নেতাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে জানা যায়, সংগঠনের অর্থসম্পাদক অর্কিড চাকমা বর্মাছড়ি এলাকার এক নেতাকে বলে যে, সেনা পেট্রোল বেসটি আর্য কল্যাণ বিহারের জমি নয়, তবে হেডম্যান ওই জমি ‘ব্যাকডেট’ (পূর্বের তারিখ) দিয়ে দলিল তৈরি করে বিহারের জন্য লিখে দেবে। এই বিষয়ে ভিক্ষু সংঘের বিবৃতি দেওয়ার কথাও বলা হয়। গোয়েন্দা বিশ্লেষণে জানা যায়, প্রসীত বিকাশ খীসা আগামী ২৭-৩০ অক্টোবরের মধ্যে আর্য কল্যাণ বিহারে বড় আকারে ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে ১০ থেকে ১৫ হাজার পাহাড়ি মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে জোরপূর্বক অংশ নেবে। এই জন্য অর্কিড চাকমা বর্মাছড়ির এক নেতা জানিয়েছেন, এর জন্য প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিতে। আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের একজন অধ্যাপক ও খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার জ্যোতিমারা বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের একজন ধর্মীয় নেতা এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, সেনাবাহিনীর অভিযানকে বিতর্কিত করার জন্য বক্তব্য ও সমর্থন দেবেন। এই অনুষ্ঠানের সফলতা নিশ্চিত করতে পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন স্থানে ২৯ অক্টোবর আর্য কল্যাণ বিহারের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ শুরু হয়, যেখানে অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে প্রচার চালানো হয়। একই সময়ে ইউপিডিএফের দেশি-বিদেশি অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও ধর্মীয় নেতারা সেনা ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রকাশ করে চলেছেন।
বিশ্লেষণে আইএসপিআর নিশ্চিত করেছে, ২৩ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাগড়াছড়ি ও রামসু বাজারে ইউপিডিএফের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের আড়ালে পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করার ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিকল্পনা সক্রিয়। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা (যারা ঢাকায় ও দেশের বিভিন্ন অংশে গোপন অবস্থানে আছেন) এই পরিকল্পনাগুলো খুবই সুসংগঠিতভাবে দেশের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অর্থায়নে ‘মৃতদেহের রাজনীতি’ ও ঘৃণার রাজনীতি চালিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছেন। তারা নারীরা, শিশু ও যুবকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। মহিলাদের বিক্ষোভ ও আন্দোলনে ব্যবহার করে সেনা নেতৃত্বের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে ইউপিডিএফ। আইএসপিআর বলছে, এই সীমাবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা পার্বত্য অঞ্চলকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে তারা নিজেদের জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে গুলি চালিয়ে হত্যার মতো জঘন্য কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে। এর মধ্যে ২৮ সেপ্টেম্বর রামসু বাজারে ইউপিডিএফের গুলিতে তিনজন পাহাড়ি নিহতের ঘটনাটিও উল্লেখযোগ্য। পরিস্থিতি পরিষ্কার করতে ২৭ অক্টোবর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর মাঠপ্রতিনিধি ও মিডিয়ার উপস্থিতিতে এলাকাবাসীর কাছে দাবির প্রমাণ উপস্থাপন করতে বলা হলে তারা ব্যর্থ হয়। ইউপিডিএফের অযৌক্তিক দাবির ভিত্তিতে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমিতে অস্থায়ী সেনা পেট্রোল বেস স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা খাগড়াছড়ির সংবেদনশীল ধর্মীয় ও আবেগপ্রবণ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি মাত্র, যেখানে ধর্মীয় ইস্যু ও আবেগকে কেন্দ্র করে পাহাড় অশান্ত করার চেষ্টা চলেছে। সেনা সব ধর্ম ও গোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধকে সম্মান করে এবং অভিযান চালানোর সময় সব স্তরের কমান্ডারদের কঠোর নির্দেশনা দেয়। পার্বত্য অঞ্চলে সেনার নেতৃত্ব ও সেনা সদস্যরা প্রতিবার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেনাবাহিনী পুরো পরিস্থিতি খুবই ধৈর্য্য ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করছে। তবে ইউপিডিএফের এই অপপ্রচেষ্টা কেবল স্বল্পমেয়াদি নয়, বরং এই এলাকায় অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার গভীর ষড়যন্ত্র মাত্র। এই রাজনৈতিক কূটকৌশল ও সমস্যা সমাধানে সরকারের সব সংস্থা একযোগে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা সম্ভব। আইএসপিআর আরও জানায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় অশান্তি রোধে সেনা অস্থায়ী পেট্রোল বেস অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য সেনা অভিযান অব্যাহত থাকবে। সেনা কর্মকর্তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ইউপিডিএফসহ অন্যান্য শত্রু সংগঠনগুলির ষড়যন্ত্র ভেঙে দিয়ে দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করবে।
প্রিন্ট














