, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

সুদানে আরএসএফের গুলিতে নিহত শতাধিক

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৫ বার পড়া হয়েছে

সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশ শহর দখলের পর শতাধিক পুরুষকে ধরে এনে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) বিরুদ্ধে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করেছে। আলখেইর ইসমাইল নামের একজন বলেন, উটের পিঠে আসা যোদ্ধারা শতাধিক পুরুষকে ধরে এনে একটি জলাধার পাশে জড়ো করে বর্ণবাদী গালিগালাজ করে গুলি চালায়। তিনি বেঁচে যান কারণ বন্দিদের একজন তাকে চিনতে পারেন এবং তাকে রক্ষা করেন। ইসমাইল বলেন, ‘তারা সবাইকে হত্যা করেছে—আমার বন্ধুরা, সবাই।’ রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা আরও কিছু সাক্ষী ও ছয়জন ত্রাণকর্মী জানিয়েছেন, এল-ফাশ থেকে পালানো মানুষদের সরিয়ে পাশের গ্রামগুলোতে নিয়ে গিয়ে পুরুষদের আলাদা করা হয়, পরে গুলির শব্দ শোনা যায়। জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর জানিয়েছে, তারা শত শত বেসামরিক ও নিরস্ত্র ব্যক্তির হত্যার অভিযোগ পেয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে আরএসএফ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংগঠনের এক শীর্ষ কমান্ডার বলেছেন, এগুলো ‘মিডিয়ার অতিরঞ্জন’ এবং সেনাবাহিনী নিজেদের পরাজয় ঢাকার জন্য এ ধরনের তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, আরএসএফ কেবল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কিছু সৈন্যকে আটক করেছে এবং বেসামরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সহায়তা করেছে। রয়টার্সের যাচাইয়ে দেখা গেছে, অন্তত তিনটি ভিডিওতে আরএসএফ সদস্যদের নিরস্ত্র মানুষদের গুলি করতে দেখা গেছে। আরও কয়েকটি ভিডিওতে গুলিবিদ্ধ মৃতদেহের স্তূপ দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা মেডসাঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে (ডাক্তারস উইদাউট বর্ডার্স) জানিয়েছে, ২৬ অক্টোবর প্রায় ৫০০ বেসামরিক ও সেনা পালানোর চেষ্টা করলে বেশিরভাগকেই হত্যা বা আটক করে আরএসএফ। জীবিতদের মুক্তির বিনিময়ে অনেককে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি সুদানি পাউন্ড পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবি করা হয়। প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো এক ভাষণে বলেন, বেসামরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে এবং যারা আইন ভঙ্গ করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি আটক ব্যক্তিদের মুক্তির নির্দেশ দেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, এল-ফাশেরের অধিকাংশ প্রতিরোধ যোদ্ধা জাঘাওয়া জাতিগোষ্ঠীর, যাদের সঙ্গে আরব বংশোদ্ভূত আরএসএফ যোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে। গণহত্যা বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স ডি ওয়াল বলেন, এল-ফাশে যা ঘটছে, তা আগের দারফুর যুদ্ধ ও জেনেইনা শহরের হত্যাযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি। যুক্তরাষ্ট্র জেনেইনায় আরএসএফের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তদন্তাধীন। এর পাশাপাশি, সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা নারীরা জানিয়েছেন, আরএসএফ যোদ্ধারা তাদের তল্লাশি করে মারধর ও অপমান করেছে। তাহানি হাসান নামে এক নারী বলেন, ‘তারা আমাদের কাপড় ছিঁড়ে মাটিতে ফেলেছে, খাবার ও পানি নষ্ট করেছে। পুরুষদের আলাদা করে নিয়ে গেছে—আমার ভাই ও ভাশুরদের আর দেখি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা যদি তোমাকে গুলি না করে, তাহলে ক্ষুধা বা তৃষ্ণায় মরতেই হবে।’ সূত্র: রয়টার্স


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

সুদানে আরএসএফের গুলিতে নিহত শতাধিক

আপডেট সময় ১১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশ শহর দখলের পর শতাধিক পুরুষকে ধরে এনে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) বিরুদ্ধে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করেছে। আলখেইর ইসমাইল নামের একজন বলেন, উটের পিঠে আসা যোদ্ধারা শতাধিক পুরুষকে ধরে এনে একটি জলাধার পাশে জড়ো করে বর্ণবাদী গালিগালাজ করে গুলি চালায়। তিনি বেঁচে যান কারণ বন্দিদের একজন তাকে চিনতে পারেন এবং তাকে রক্ষা করেন। ইসমাইল বলেন, ‘তারা সবাইকে হত্যা করেছে—আমার বন্ধুরা, সবাই।’ রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা আরও কিছু সাক্ষী ও ছয়জন ত্রাণকর্মী জানিয়েছেন, এল-ফাশ থেকে পালানো মানুষদের সরিয়ে পাশের গ্রামগুলোতে নিয়ে গিয়ে পুরুষদের আলাদা করা হয়, পরে গুলির শব্দ শোনা যায়। জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর জানিয়েছে, তারা শত শত বেসামরিক ও নিরস্ত্র ব্যক্তির হত্যার অভিযোগ পেয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে আরএসএফ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংগঠনের এক শীর্ষ কমান্ডার বলেছেন, এগুলো ‘মিডিয়ার অতিরঞ্জন’ এবং সেনাবাহিনী নিজেদের পরাজয় ঢাকার জন্য এ ধরনের তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, আরএসএফ কেবল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কিছু সৈন্যকে আটক করেছে এবং বেসামরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সহায়তা করেছে। রয়টার্সের যাচাইয়ে দেখা গেছে, অন্তত তিনটি ভিডিওতে আরএসএফ সদস্যদের নিরস্ত্র মানুষদের গুলি করতে দেখা গেছে। আরও কয়েকটি ভিডিওতে গুলিবিদ্ধ মৃতদেহের স্তূপ দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা মেডসাঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে (ডাক্তারস উইদাউট বর্ডার্স) জানিয়েছে, ২৬ অক্টোবর প্রায় ৫০০ বেসামরিক ও সেনা পালানোর চেষ্টা করলে বেশিরভাগকেই হত্যা বা আটক করে আরএসএফ। জীবিতদের মুক্তির বিনিময়ে অনেককে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি সুদানি পাউন্ড পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবি করা হয়। প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো এক ভাষণে বলেন, বেসামরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে এবং যারা আইন ভঙ্গ করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি আটক ব্যক্তিদের মুক্তির নির্দেশ দেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, এল-ফাশেরের অধিকাংশ প্রতিরোধ যোদ্ধা জাঘাওয়া জাতিগোষ্ঠীর, যাদের সঙ্গে আরব বংশোদ্ভূত আরএসএফ যোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে। গণহত্যা বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স ডি ওয়াল বলেন, এল-ফাশে যা ঘটছে, তা আগের দারফুর যুদ্ধ ও জেনেইনা শহরের হত্যাযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি। যুক্তরাষ্ট্র জেনেইনায় আরএসএফের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তদন্তাধীন। এর পাশাপাশি, সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা নারীরা জানিয়েছেন, আরএসএফ যোদ্ধারা তাদের তল্লাশি করে মারধর ও অপমান করেছে। তাহানি হাসান নামে এক নারী বলেন, ‘তারা আমাদের কাপড় ছিঁড়ে মাটিতে ফেলেছে, খাবার ও পানি নষ্ট করেছে। পুরুষদের আলাদা করে নিয়ে গেছে—আমার ভাই ও ভাশুরদের আর দেখি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা যদি তোমাকে গুলি না করে, তাহলে ক্ষুধা বা তৃষ্ণায় মরতেই হবে।’ সূত্র: রয়টার্স


প্রিন্ট