, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শরাআ

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৮:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৪৭ বার পড়া হয়েছে

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ শরাআ যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সফরে ওয়াশিংটনে উপস্থিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসী’ তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার দুই দিন পর এই সফর শুরু হলো। আসন্ন সোমবার হোয়াইট হাউসে তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রায় এগারো মাস আগে শরাআর নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী জোট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা আগে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী আইএস নামে পরিচিত সংগঠনের সন্দেহভাজন সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করে। সেই অভিযানে অস্ত্র ও বিস্ফোরকও উদ্ধার করা হয়। সিরিয়ায় আইএস-এর অবশিষ্ট উপস্থিতি দমন করতে যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার যৌথ প্রচেষ্টা চলমান থাকায় এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে শরাআ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিরিয়ার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ একনায়কতন্ত্র ও ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর তিনি দেশটিকে ‘পুনর্জন্মের পথে’ নিয়ে যেতে চান। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সিরিয়া আবারও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মাঝে তার স্বাভাবিক স্থান ফিরে পাচ্ছে’, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এই সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়, যেখানে সিরিয়ার ওপর থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুমতি দেওয়া হয়। একই সময়ে ওয়াশিংটন ধাপে ধাপে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। গত শুক্রবার শরাআ ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস হাসান খাত্তাবকে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী অর্থায়নের অভিযোগে সন্দেহভাজন তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়। ট্রেজারি বিভাগ জানায়, ‘সিরীয় নেতৃত্বের ইতিবাচক অগ্রগতি স্বীকৃতি স্বরূপ’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে শরাআ ‘মুহাম্মদ আল-জাওলানি’ নামে পরিচিত ছিলেন, যিনি এক সময় আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠন ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস)-এর নেতৃত্ব দিতেন। ২০১৬ সালে তিনি সংগঠনটির আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এইচটিএস-এর নেতৃত্বে আসার আগে শরাআ ইরাকে আল-কায়েদার হয়ে লড়াই করেছেন এবং এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বন্দীও ছিলেন। তার মাথার দাম এক সময় এক কোটি মার্কিন ডলার ঘোষণা করা হয়েছিল। এই বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র হায়াত তাহরির আল-শামের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। চলতি বছরের মে মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে এক সম্মেলনে ট্রাম্প শরাআর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে ‘একজন দৃঢ়চেতা নেতা, যার অতীতও শক্তিশালী’ বলে মূল্যায়ন করেন। অতীতের বিতর্কিত পরিচয় থাকা সত্ত্বেও শরাআ এখন এমন একটি মধ্যপন্থী সরকার গঠনের অঙ্গীকার করেছেন, যা দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলসমূহের সমর্থন পেতে পারে। সম্প্রতি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সুন্নি বেদুইন যোদ্ধা ও দ্রুজ মিলিশিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে দেশটির স্থিতিশীলতা ফেরানোর জন্য শরাআ সরকারের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, যা দেশটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে বিধ্বস্ত। সূত্র- বিবিসি


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শরাআ

আপডেট সময় ০৮:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ শরাআ যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সফরে ওয়াশিংটনে উপস্থিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসী’ তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার দুই দিন পর এই সফর শুরু হলো। আসন্ন সোমবার হোয়াইট হাউসে তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রায় এগারো মাস আগে শরাআর নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী জোট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা আগে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী আইএস নামে পরিচিত সংগঠনের সন্দেহভাজন সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করে। সেই অভিযানে অস্ত্র ও বিস্ফোরকও উদ্ধার করা হয়। সিরিয়ায় আইএস-এর অবশিষ্ট উপস্থিতি দমন করতে যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার যৌথ প্রচেষ্টা চলমান থাকায় এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে শরাআ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিরিয়ার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ একনায়কতন্ত্র ও ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর তিনি দেশটিকে ‘পুনর্জন্মের পথে’ নিয়ে যেতে চান। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সিরিয়া আবারও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মাঝে তার স্বাভাবিক স্থান ফিরে পাচ্ছে’, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এই সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়, যেখানে সিরিয়ার ওপর থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুমতি দেওয়া হয়। একই সময়ে ওয়াশিংটন ধাপে ধাপে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। গত শুক্রবার শরাআ ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস হাসান খাত্তাবকে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী অর্থায়নের অভিযোগে সন্দেহভাজন তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়। ট্রেজারি বিভাগ জানায়, ‘সিরীয় নেতৃত্বের ইতিবাচক অগ্রগতি স্বীকৃতি স্বরূপ’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে শরাআ ‘মুহাম্মদ আল-জাওলানি’ নামে পরিচিত ছিলেন, যিনি এক সময় আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠন ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস)-এর নেতৃত্ব দিতেন। ২০১৬ সালে তিনি সংগঠনটির আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এইচটিএস-এর নেতৃত্বে আসার আগে শরাআ ইরাকে আল-কায়েদার হয়ে লড়াই করেছেন এবং এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বন্দীও ছিলেন। তার মাথার দাম এক সময় এক কোটি মার্কিন ডলার ঘোষণা করা হয়েছিল। এই বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র হায়াত তাহরির আল-শামের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। চলতি বছরের মে মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে এক সম্মেলনে ট্রাম্প শরাআর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে ‘একজন দৃঢ়চেতা নেতা, যার অতীতও শক্তিশালী’ বলে মূল্যায়ন করেন। অতীতের বিতর্কিত পরিচয় থাকা সত্ত্বেও শরাআ এখন এমন একটি মধ্যপন্থী সরকার গঠনের অঙ্গীকার করেছেন, যা দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলসমূহের সমর্থন পেতে পারে। সম্প্রতি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সুন্নি বেদুইন যোদ্ধা ও দ্রুজ মিলিশিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে দেশটির স্থিতিশীলতা ফেরানোর জন্য শরাআ সরকারের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, যা দেশটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে বিধ্বস্ত। সূত্র- বিবিসি


প্রিন্ট