দেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন স্থগিতের কারণে আওয়ামী লীগ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা প্রকাশ করেন তিনি। আলোচনা সভায় তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন—আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, অবৈধ অভিবাসন রোধ, ব্যবসার প্রসার, রোহিঙ্গা সংকট, এবং বিমান ও সমুদ্র পরিবহন খাতে সহযোগিতা জোরদারসহ অন্যান্য বিষয়। ড. ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন নির্ধারিত সময়সূচির উপর ভিত্তি করে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক, যেখানে ব্যাপক সংখ্যক ভোটার অংশ নেবে।’ গত ১৬ বছর ধরে স্বৈরশাসনের কারণে তিনটি কারচুপিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ায় এবার প্রথমবারের মতো কোটি কোটি তরুণ ভোট দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের জাতীয় সনদ বাংলাদেশের জন্য নতুন সূচনার সূচনা। যা গত বছরের জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।’ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বের জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী চ্যাপম্যান বলেন, জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিশন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চলমান সংলাপের প্রশংসা করেন। যুক্তরাজ্যের আশ্রয়প্রবাহের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন চ্যাপম্যান, যা বাংলাদেশসহ অন্য দেশের অভিবাসীদের মাধ্যমে ঘটছে। তিনি নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসনের গুরুত্ব ও শোষণ বন্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে এবং আরও বেশি বাংলাদেশিকে বৈধ পথে বিদেশে যেতে উৎসাহিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ উভয়ে রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশে বসবাসরত এক কোটি ঊর্ধ্ব শরণার্থীকে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তরুণরা আশা ছাড়াই বড় হচ্ছে। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’ বৈঠকে ঢাকা–লন্ডনের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা আরও বাড়ানোর সুযোগ নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা জানান, বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক গবেষণার জন্য বাংলাদেশ একটি ব্রিটিশ গবেষণা জাহাজ কিনছে। মন্ত্রী চ্যাপম্যান দুদেশের মধ্যে বিমান পরিবহন সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।’ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক।