, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

জেল থেকে বেরিয়ে রেলের জমিতে আ. লীগ নেতার মার্কেট নির্মাণ

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০১:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৩ বার পড়া হয়েছে

ময়মনসিংহে জেল থেকে মুক্তির পর রেলওয়ের জমিতে আওয়ামী লীগ নেতার নির্মাণ করা মার্কেটের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ অবৈধভাবে নির্মিত এই মার্কেট ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মুসা মিয়া রেলওয়ের জমি দখল করে আসছেন। এর ফলে মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা ঘটছে। ৪৬ দিনের জেল খাটার পর ৭ অক্টোবর ময়মনসিংহ নগরীর তিনকোনা পুকুর পাড়ের বাসিন্দা আলহাজ্ব মুসা মিয়া জামিনে মুক্তি পান। জামিন পাওয়ার পর তিনি বাড়ির পাশে রেললাইনের ধারে টিনশেডের মার্কেট নির্মাণ করেন। সেই মার্কেটে ১২টি দোকান বসিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে নগদ টাকা নেন তিনি। গত বুধবার (১৯ নভেম্বর) মার্কেট নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও মুসা মিয়ার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে যান। রেলজমির মধ্যে অবস্থিত এই মার্কেট ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এখনো পর্যন্ত মার্কেটটি ভাঙা হয়নি, ফলে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তিনকোনা পুকুর পাড়ের বাসিন্দা ইমন হাসান বলেন, এই এলাকায় রেললাইনের একপাশে ৪৬ ফুট আর অন্যপাশে ১৮ ফুট করে রেলের জমি রয়েছে। যেখানে ১৮ ফুটের দিকের রেললাইন থেকে পাঁচ ফুট দূরত্বে মুসা মিয়া মার্কেট নির্মাণ করেছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। অন্য এক স্থানীয় আয়নাল হক বলেন, গুগল মানছে ২৪১ দাগ পুরোপুরি রেলজমি। তাহলে মুসা মিয়া কীভাবে নকশা অনুযায়ী সেই স্থান দাবি করে মার্কেট নির্মাণ করলেন? তিনি জামিনে মুক্তির পরই এই কাজ করেছেন, যা এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। জামতলা মোড় এলাকার মো. জনি বলেন, মুসা মিয়া আওয়ামী লীগ নেতা ও সংগঠনের অর্থের জোগানদাতা। ৪৬ দিন জেল খাটার পর তিনি আবারো জোড়পূর্বক রেলজমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। জুলাইয়ের অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। হোটেল ব্যবসায়ী মো. রোকন বলেন, মুসা মিয়ার বাড়ির কাছাকাছি রেললাইন রয়েছে। তাই প্রায় ৮—১০ বছর আগে আমার বাবা তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মাসিক ভাড়ায় রেলের জায়গায় একটি দোকান দেন। সম্প্রতি বাবার মৃত্যু হওয়ার পর আমি সেই দোকান পরিচালনা করছি। মুসা মিয়া জমির নকশা অনুযায়ী দাবি করে বলেন, ১৯৬৫ সালে তার বাবা ১৪ শতাংশ জমি কিনেছেন। এর মধ্যে ১০ শতাংশের মধ্যে তিনি নিজ বাসা করেছেন। বাকি ৪ শতাংশ জমির মধ্যে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। বড় ভাই তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের হয়রানি চালাচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে মামলায় তার নাম দিয়ে জেল খাটিয়েছে। তিনি বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থক হলেও কোনও নাম বা পদবি দিয়ে পরিচিত নন। কোতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জমি-জমা নিয়ে মুসা মিয়া ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষই জানাতে পারবে প্রকৃত মালিক কে। রেলওয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান বলেন, নির্মাণাধীন মার্কেটটি সম্পূর্ণ রেলের জমির মধ্যে পড়েছে। তার বাড়ির কিছু অংশও থাকতে পারে। তাই প্রথমে মার্কেট ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী মার্কেট ভাঙা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

জেল থেকে বেরিয়ে রেলের জমিতে আ. লীগ নেতার মার্কেট নির্মাণ

আপডেট সময় ০১:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

ময়মনসিংহে জেল থেকে মুক্তির পর রেলওয়ের জমিতে আওয়ামী লীগ নেতার নির্মাণ করা মার্কেটের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ অবৈধভাবে নির্মিত এই মার্কেট ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মুসা মিয়া রেলওয়ের জমি দখল করে আসছেন। এর ফলে মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা ঘটছে। ৪৬ দিনের জেল খাটার পর ৭ অক্টোবর ময়মনসিংহ নগরীর তিনকোনা পুকুর পাড়ের বাসিন্দা আলহাজ্ব মুসা মিয়া জামিনে মুক্তি পান। জামিন পাওয়ার পর তিনি বাড়ির পাশে রেললাইনের ধারে টিনশেডের মার্কেট নির্মাণ করেন। সেই মার্কেটে ১২টি দোকান বসিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে নগদ টাকা নেন তিনি। গত বুধবার (১৯ নভেম্বর) মার্কেট নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও মুসা মিয়ার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে যান। রেলজমির মধ্যে অবস্থিত এই মার্কেট ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এখনো পর্যন্ত মার্কেটটি ভাঙা হয়নি, ফলে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তিনকোনা পুকুর পাড়ের বাসিন্দা ইমন হাসান বলেন, এই এলাকায় রেললাইনের একপাশে ৪৬ ফুট আর অন্যপাশে ১৮ ফুট করে রেলের জমি রয়েছে। যেখানে ১৮ ফুটের দিকের রেললাইন থেকে পাঁচ ফুট দূরত্বে মুসা মিয়া মার্কেট নির্মাণ করেছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। অন্য এক স্থানীয় আয়নাল হক বলেন, গুগল মানছে ২৪১ দাগ পুরোপুরি রেলজমি। তাহলে মুসা মিয়া কীভাবে নকশা অনুযায়ী সেই স্থান দাবি করে মার্কেট নির্মাণ করলেন? তিনি জামিনে মুক্তির পরই এই কাজ করেছেন, যা এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। জামতলা মোড় এলাকার মো. জনি বলেন, মুসা মিয়া আওয়ামী লীগ নেতা ও সংগঠনের অর্থের জোগানদাতা। ৪৬ দিন জেল খাটার পর তিনি আবারো জোড়পূর্বক রেলজমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। জুলাইয়ের অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। হোটেল ব্যবসায়ী মো. রোকন বলেন, মুসা মিয়ার বাড়ির কাছাকাছি রেললাইন রয়েছে। তাই প্রায় ৮—১০ বছর আগে আমার বাবা তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মাসিক ভাড়ায় রেলের জায়গায় একটি দোকান দেন। সম্প্রতি বাবার মৃত্যু হওয়ার পর আমি সেই দোকান পরিচালনা করছি। মুসা মিয়া জমির নকশা অনুযায়ী দাবি করে বলেন, ১৯৬৫ সালে তার বাবা ১৪ শতাংশ জমি কিনেছেন। এর মধ্যে ১০ শতাংশের মধ্যে তিনি নিজ বাসা করেছেন। বাকি ৪ শতাংশ জমির মধ্যে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। বড় ভাই তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের হয়রানি চালাচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে মামলায় তার নাম দিয়ে জেল খাটিয়েছে। তিনি বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থক হলেও কোনও নাম বা পদবি দিয়ে পরিচিত নন। কোতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জমি-জমা নিয়ে মুসা মিয়া ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষই জানাতে পারবে প্রকৃত মালিক কে। রেলওয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান বলেন, নির্মাণাধীন মার্কেটটি সম্পূর্ণ রেলের জমির মধ্যে পড়েছে। তার বাড়ির কিছু অংশও থাকতে পারে। তাই প্রথমে মার্কেট ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী মার্কেট ভাঙা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রিন্ট