, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বগুড়া-৭ আসন থেকে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ Logo শরীয়তপুরে যুবলীগ নেতাকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা Logo দলীয় প্রার্থীর প্রচারে থেকেও মনোনয়নপত্র নিলেন সাক্কু Logo জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় Logo সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ, বিজিবির হাতে বিএসএফ সদস্য আটক Logo ফেনী টেলিভিশন জার্নালিস্ট ক্লাবের কমিটি গঠন Logo শেরপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১ Logo আগুনে পুড়িয়ে মারা ও প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়া বরদাস্ত করবে না সরকার: ধর্ম উপদেষ্টা Logo ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২ Logo নেত্রকোনায় বসতঘরে পড়েছিল কৃষকের গলাকাটা মরদেহ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

মানিকগঞ্জ বিআরটিএ যেন ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ৫ ঘন্টা আগে
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষার কার্যক্রম বর্তমানে এক সক্রিয় দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে। প্রকাশ্যে ঘুষের বিনিময়ে কাজ চলছে। নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নিশ্চিত করা হয়। এ ধরনের অনিয়ম চোখে পড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে সেবা প্রত্যাশীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অভিযোগের বিষয়ে বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা নানা ব্যাখ্যা দিলেও দালাল চক্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারেননি। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এক মাসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বেশির ভাগ আবেদনকারী প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় ফেল করেন। অথচ লাইসেন্সের মূল ধাপ এই পরীক্ষায় দালাল চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যেক পরীক্ষার্থী থেকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা উৎকোচ নিলে পাস দেওয়া হয়। দেখা গেছে, পরীক্ষার পাস-ফেল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বিআরটিএর বোর্ডের সদস্য সচিব মো. কাফিউল হাসান মৃধা ও দালালচক্র। দিন শেষে এই অর্থ ভাগ-বাটোয়ারায় চলে যায় দালাল ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। বিআরটিএ সূত্র জানায়, প্রতি বুধবার চার সদস্যের বোর্ডের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা হয়। বোর্ডের সভাপতি হিসেবে থাকেন জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদস্য সচিব হিসেবে বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক, জেলা ট্রাফিক পুলিশের একজন পরিদর্শক ও একজন মনোনীত ডাক্তার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে। গত বুধবার মানিকগঞ্জের কালেক্টরেট স্কুল মাঠে সরেজমিন দেখা গেছে, মোটরসাইকেল পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের ডাকাডাকি থেকে শুরু করে পাস-ফেল নির্ধারণে দালালদের সরাসরি ভূমিকা। পরীক্ষার নিয়ন্ত্রকদের অনেক ক্ষেত্রেই সক্রিয় নজরদারি না করে দালালদের ইঙ্গিত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বড় মোটরসাইকেল পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে দালালরা নিজস্ব মোটরসাইকেল ভাড়া বাবদ ১০০ থেকে ২০০ টাকা অতিরিক্ত দাবি করছে—এমন অভিযোগও উঠেছে। প্রাইভেটকার পরীক্ষাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। প্রশিক্ষণ আর পরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য বোঝা কঠিন। দালাল ও কিছু ইন্সট্রাক্টর সরাসরি নির্দেশনা দিয়ে পুরো কার্যক্রম চালাচ্ছে। মাঠের মাঝখানে বসে দালালদের কথামতো পাস-ফেল নির্ধারণের অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও। গোপন পরিচয়ে একাধিক পরীক্ষার্থী জানান, দালালদের সঙ্গে চুক্তি থাকলে পরীক্ষায় না পারলেও পাস হয়। একজন বলেন, ‘পারলেও পাস, না পারলেও পাস, সবটাই টাকার খেলায়।’ অন্য একজন বলেন, প্রথমে ফেল দেখালেও পরে যোগাযোগ করলে ফল পরিবর্তন হয়। এই বিষয়ে ড্রাইভিং বোর্ডের সভাপতি জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. রবীন শীষ বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। কার্যত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সেবা খাতে স্বচ্ছতা না থাকলে সড়কে ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা করে সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসনের আশ্বাস কাগজে-কলমে পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না, নাকি সত্যিই দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

মানিকগঞ্জ বিআরটিএ যেন ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া

আপডেট সময় ৫ ঘন্টা আগে

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষার কার্যক্রম বর্তমানে এক সক্রিয় দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে। প্রকাশ্যে ঘুষের বিনিময়ে কাজ চলছে। নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নিশ্চিত করা হয়। এ ধরনের অনিয়ম চোখে পড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে সেবা প্রত্যাশীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অভিযোগের বিষয়ে বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা নানা ব্যাখ্যা দিলেও দালাল চক্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারেননি। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এক মাসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বেশির ভাগ আবেদনকারী প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় ফেল করেন। অথচ লাইসেন্সের মূল ধাপ এই পরীক্ষায় দালাল চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যেক পরীক্ষার্থী থেকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা উৎকোচ নিলে পাস দেওয়া হয়। দেখা গেছে, পরীক্ষার পাস-ফেল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বিআরটিএর বোর্ডের সদস্য সচিব মো. কাফিউল হাসান মৃধা ও দালালচক্র। দিন শেষে এই অর্থ ভাগ-বাটোয়ারায় চলে যায় দালাল ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। বিআরটিএ সূত্র জানায়, প্রতি বুধবার চার সদস্যের বোর্ডের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা হয়। বোর্ডের সভাপতি হিসেবে থাকেন জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদস্য সচিব হিসেবে বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক, জেলা ট্রাফিক পুলিশের একজন পরিদর্শক ও একজন মনোনীত ডাক্তার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে। গত বুধবার মানিকগঞ্জের কালেক্টরেট স্কুল মাঠে সরেজমিন দেখা গেছে, মোটরসাইকেল পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের ডাকাডাকি থেকে শুরু করে পাস-ফেল নির্ধারণে দালালদের সরাসরি ভূমিকা। পরীক্ষার নিয়ন্ত্রকদের অনেক ক্ষেত্রেই সক্রিয় নজরদারি না করে দালালদের ইঙ্গিত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বড় মোটরসাইকেল পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে দালালরা নিজস্ব মোটরসাইকেল ভাড়া বাবদ ১০০ থেকে ২০০ টাকা অতিরিক্ত দাবি করছে—এমন অভিযোগও উঠেছে। প্রাইভেটকার পরীক্ষাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। প্রশিক্ষণ আর পরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য বোঝা কঠিন। দালাল ও কিছু ইন্সট্রাক্টর সরাসরি নির্দেশনা দিয়ে পুরো কার্যক্রম চালাচ্ছে। মাঠের মাঝখানে বসে দালালদের কথামতো পাস-ফেল নির্ধারণের অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও। গোপন পরিচয়ে একাধিক পরীক্ষার্থী জানান, দালালদের সঙ্গে চুক্তি থাকলে পরীক্ষায় না পারলেও পাস হয়। একজন বলেন, ‘পারলেও পাস, না পারলেও পাস, সবটাই টাকার খেলায়।’ অন্য একজন বলেন, প্রথমে ফেল দেখালেও পরে যোগাযোগ করলে ফল পরিবর্তন হয়। এই বিষয়ে ড্রাইভিং বোর্ডের সভাপতি জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. রবীন শীষ বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। কার্যত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সেবা খাতে স্বচ্ছতা না থাকলে সড়কে ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা করে সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসনের আশ্বাস কাগজে-কলমে পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না, নাকি সত্যিই দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।


প্রিন্ট