রাজবাড়ীর জন্মান্ধ বৃদ্ধ আব্দুল গফুর মল্লিকের (৮০) পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামে গফুর মল্লিকের বাড়িতে এসে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের প্রতিনিধি দলসহ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা তুলে দেন। জানা গেছে, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে অন্ধ গফুরের সংগ্রাম’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের নজরে আসে। পরে তিনি সংগঠনের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনকে নির্দেশ দেন গফুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী গফুর মল্লিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রিজভী বলেন, ‘আমাদের সংগঠন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছি। যে সকল ব্যক্তি শারীরিকভাবে অসুস্থ, অক্ষম বা অন্ধ, পঙ্গু বা নিহতের পরিবারের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। তিনি মানবিকতার প্রতিচ্ছবি। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে পাহাড় ডিঙেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা রাজবাড়ীর গফুর মল্লিকের বাড়িতে এসেছি। যার দুটো চোখই অন্ধ। সে কিছু মিষ্টি বিক্রি করে জীবন চালায়। তারেক রহমান তার জীবনের সংগ্রাম দেখেছেন। তার শাশুড়িও দেখেছেন। সবাই গফুর মল্লিকের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’ অর্থ সহায়তা পেয়ে গফুর মল্লিক বলেন, ‘আল্লাহর হুকুমে তারেক রহমান আমাকে আর্থিক সহায়তা করেছেন। সেই অর্থ দিয়ে আমি একটি পাখির জন্য জমি কিনব এবং বাড়িতে কিছু সামগ্রী নিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করব। ট্রেনে নারকেলের নাড়ু বিক্রি করব না, বরং নিজের তৈরি কিছু পণ্য বিক্রি করব বা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তারেক রহমানের জন্য দোয়া করি। জিয়া পরিবারের জন্য দোয়া করি। যদি তারেক রহমান নির্বাচনে জয় লাভ করেন, তাহলে আমার ভাগ্য বদলে যাবে।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোছখেদুল মোমির মিথুন, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়া, রেজাউল করিম পিন্টু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ ও রাজবাড়ী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. খালেদ পাভেলসহ দলের নেতাকর্মীরা। উল্লেখ্য, গফুর মল্লিক জীবনের অধিকাংশ সময় বাস বা ট্রেনে নারকেলের নাড়ু, বাদাম ও টেস্টি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি একজন মানসিকভাবে স্বনির্ভর ব্যক্তি, যিনি কখনো ভিক্ষা করতে চাননি। বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে গেছেন এবং শরীরের বেশির ভাগ শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তার স্ত্রীসহ সংসার হলেও তাদের সন্তান নেই। নিজের সম্মান রক্ষায় তিনি নিজের হাতে তৈরি নারকেলের নাড়ু ও বাদাম বিক্রি করেই জীবন চালিয়ে আসছেন। ২০২৩ সালের ২১ মার্চ ‘সংসার চলে না, তবুও ভিক্ষা করেন না’ শিরোনামে সময়ের সংবাদে গফুর মল্লিকের সংগ্রামময় জীবন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর তার গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। কন্টেন্ট নির্মাতা মুন্সী এনায়েত সেই কাহিনী নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেন, যা ৪০ মিলিয়ন বার দেখা হয়। এর ফলে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আর্থিক সহায়তা আসে এবং বাদাম বিক্রির পেশা থেকে তিনি অবসর নেন।