আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের মনোনয়ন ঘোষণা করেছে। ২৩৭টি আসনের জন্যপ্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। মনোনয়ন প্রকাশের পরে বিভিন্ন আসনে প্রার্থীর যোগ্যতা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে জামায়াত ইসলামীকে। সেজন্য বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর শক্তি বা দুর্বলতা নিয়ে ব্যাপক চর্চা চলছে। মনোনয়নের পর বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে, বিশেষ করে বগুড়া কেন্দ্রীয় জেলাকে কেন্দ্র করে। এই অঞ্চল সাধারণত বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে জয়পুরহাট অন্যতম। স্বৈরশাসনের সময় ‘রাতের ভোট’ এবং ডামি নির্বাচন বাদ দিলে এই জেলার দুটি আসনেই বিএনপির প্রভাব দৃঢ় ছিল। গত মঙ্গলবার মনোনয়ন ঘোষণা হওয়ার পর বিষয়টি আরও নিশ্চিত হয়েছে। পাশের জেলা বগুড়ার ৬ ও ৭ নম্বর আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মনোনীত প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। ১৯৮৪ সালে গঠিত জয়পুরহাট-১ আসনটি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির ঐতিহ্যবাহী ও শক্তিশালী আসন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ১৯৮৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত দশটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে চারবার এই আসনে বিজয় অর্জন করে বিএনপি। এবারের নির্বাচনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সল আলিম ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা মনোনীত হয়েছেন। ফয়সল আলিম হচ্ছেন প্রয়াত আব্দুল আলিমের সন্তান, যিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ধারাবাহিকভাবে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, জয়পুরহাট ও নওগাঁওসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে যদি শক্তিশালী প্রার্থী না দাঁড় করানো হয়, তাহলে নির্বাচনে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনও খবর উঠছে যে, জামায়াত নেতারা এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মনোনয়নের পরই জয়পুরহাটের অনেক নেতা বিএনপির কাছ থেকে জামায়াতের দিকে ঝুঁকেছেন বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে এই আসনটি জামায়াতের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা) ঐতিহ্যবাহী বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত। মো. মাসুদ রানা প্রধানের মনোনয়ন এই এলাকায় কিছুটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে পাশের বগুড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোর প্রার্থীদের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, এই জেলাগুলোর প্রার্থীর শক্তি না থাকলে নির্বাচনে জয় পাওয়া কঠিন হতে পারে। জয়পুরহাট-১ আসনে মনোনীত প্রার্থীকে জামায়াত নেতারা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা মনে করেন, এই মনোনয়ন জামায়াতের জন্য অপ্রত্যাশিত সুবিধা সৃষ্টি করতে পারে, ফলে এই আসনে বিএনপির জয় নিশ্চিত না হয়ে যেতে পারে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, জামায়াত বিএনপির দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরছে, যেমন চাঁদাবাজি, আওয়ামী লীগ কর্মীদের পুনর্বাসনে বাধা, আত্মীয়তা ও অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের অভিযোগ। স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য, জয়পুরহাট-১ এর মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৬৩ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার ভোটের নিজস্ব ব্যালট ব্যাংক এখনও সক্রিয় রয়েছে, যা ফয়সল আলিম সহজেই কাজে লাগাতে পারবেন বলে ধারণা।