স্বাধীনতার পঞ্চান্ন বছর অতিবাহিত হওয়ার পর অবশেষে শরীয়তপুরের বীরাঙ্গনা যোগমায়া মালো একটি নতুন বাসস্থানে প্রবেশ করেছেন। স্বাধীনতার সংগ্রামে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে সব কিছু হারানো এই নারীর জন্য মহান বিজয় দিবসের উপলক্ষে জেলা প্রশাসন একটি ঘর উপহার দিয়েছে। তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী এই নারীর জন্য সরকারের চিকিৎসার দায়িত্ব দাবি করছে স্বজন ও এলাকাবাসী। জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২২ মে শরীয়তপুর সদর উপজেলার মনোহর বাজারের দক্ষিণ মধ্যপাড়ার হিন্দু এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের তাণ্ডব চালানো হয়। প্রতিটি ঘর থেকে তুলে নেওয়া হয় যুবতী নারীদের। সেই সময় নেপাল চন্দ্র মালোর স্ত্রী যোগমায়া মালোকে তুলে নেওয়া হয়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। পরবর্তীতে মধ্যপাড়া এলাকায় গুলি করে কয়েকজনকে হত্যা করার পর কমপক্ষে ১০০ নারী-পুরুষকে নিয়ে যাওয়া হয় মাদারীপুরের আর হাওলাদার জুট মিলটি। সেখানে অনেক পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়, আর নারীদের তিন রাত ধরে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে এরপর তিনি ফিরে আসেন স্বামীর কাছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ২০১৮ সালে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পান তিনি। তবে মনোবেদনা বহন করে চলা এই বীরাঙ্গনার ছিল না নিজের কোনও বাসস্থান। এ বিষয়ে গত বছর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) একদিন আগেই সরকারিভাবে তার জন্য স্থায়ী ঘর তৈরি করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই উদ্যোগে এলাকাবাসী খুশি। তবে শেষ বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলে, বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী যোগমায়া মালো। স্বজনরা সরকারের চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় হাজী মোতালেব মাদবর বলেন, “যোগমায়া মালোর জন্য আরও আগে থেকেই সুবিধা থাকা উচিত ছিল। শেষ বয়সে এসে তাকে একটি ঘর দেওয়া হয়েছে, এটাই তার জীবনের বড় অর্জন। তবে তিনি এখন খুব অসুস্থ। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আমরা সবাই সরকারের কাছে তার চিকিৎসার দাবি জানাই।” যোগমায়ার ছেলে অশোক মালো বলেন, “আমার মা একজন বীরাঙ্গনা। আমরা অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি। ঘর না থাকায় অন্যের আশ্রয়ে থাকতাম। অনেক বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় ঘরের জন্য গিয়েছি। সংবাদ প্রকাশের পর আজ সরকারিভাবে আমাদের একটি ঘর পাওয়া হয়েছে। আমরা খুব খুশি। তবে আমার মা এখন ক্যান্সারে ভুগছেন, তার চিকিৎসার জন্য অর্থের অভাব। যদি সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো, তাহলে সে আরও কিছুদিন বাঁচতেন।” তার পুত্রবধূ ডলি মালো বলেন, “আমরা ঘর পেয়ে অনেক খুশি। তবে শাশুড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। যদি সরকার আর্থিক সহায়তা করতো, তাহলে তার চিকিৎসা সহজ হত।” জেলা প্রশাসক এই উদ্যোগে খুশি, আর তার চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, “গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরে আমরা বিষয়টি জেনেছি। অবশেষে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে তার জন্য একটি নতুন ঘর তৈরি করতে পেরেছি, এতে আমরা আনন্দিত। আমরা সব সময় মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের পাশে আছি। বর্তমানে যোগমায়া মালো ক্যান্সারে আক্রান্ত, তা আমাদের জানা ছিল না। আমরা তার জন্য সরকারি ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”