, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

শরীয়তপুরে যুবলীগ নেতাকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ৩ ঘন্টা আগে
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার মধ্যে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। একজন যুবলীগ নেতাকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে একজন বিএনপি নেতার নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে এই ঘটনা ঘটে। এতে দৈনিক নয়া দিগন্তের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার রাসেল শিকদার ও এশিয়ান টেলিভিশনের স্থানীয় প্রতিনিধি রুহুল আমীন জুয়েল মারধর এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে শনিবার সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনকে আটক করা হয়। থানায় হেফাজতে থাকাকালে তাকে ছেড়ে দিতে থানায় আসেন সখিপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মাজহারুল ইসলাম সরদার ও তার কয়েকজন সহযোগী। এসময় তারা পুলিশকে অনুরোধ করেন যে, আটক যুবলীগ নেতা আক্তার হোসেনকে ছেড়ে দিতে। এর ফলে থানার ভিতরে পরিস্থিতির উত্তেজনা বাড়লে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিক রাসেল শিকদার ও রুহুল আমীন জুয়েল পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ছবি তোলেন। এক পর্যায়ে পুলিশ যদি ওই যুবলীগ নেতাকে না ছাড়ে, তবে বিএনপি নেতাসহ তার সহযোগীরা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে হামলা চালায়, মারধর করে এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের দ্রুত ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। আহত সাংবাদিক রাসেল শিকদার বলেন, ‘আমরা জানতে পারি যে, আটক যুবলীগ নেতাকে মুক্ত করতে থানায় আসার সময় বিএনপি নেতারা হট্টগোল করছে। পরে আমি ও আমার দুই সহকর্মী থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের কাছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। এরপর আমি থানার ভেতর থেকে বের হয়ে থানার ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে মাজহারুল ইসলাম সরদারসহ কয়েকজন আমাদের দিকে তেড়ে আসে। তারা মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং মারধর করে। আমি বলতে চাই, আমাদের জন্য ওই যুবলীগ নেতাকে ছাড়া দিতে পারেননি। থানার মতো জায়গায় সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমরা এই ঘটনাকে ঘিরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ অপর এক আহত সাংবাদিক রুহুল আমীন জুয়েল বলেন, ‘আমি একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। হঠাৎ বিএনপি নেতা ও তার লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং কিল-ঘুসি মারতে থাকে। থানার ভিতরে কি নিরাপত্তা না থাকলে আমরা কোথায় নিরাপদ থাকব?’ এই ঘটনায় জেলার সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘শরীয়তপুর ইলেকট্রনিক সাংবাদিক মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব নুরুল আমিন রবিন বলেন, এই ধরনের হামলা আমাদের গণমাধ্যমের মুক্ততা ও স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের মিডিয়া কর্মীরা তথ্য সংগ্রহের সময় যদি রাজনৈতিক নেতাদের আক্রমণের শিকার হন, তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক। এই ধরনের হামলা আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।’ হামলার অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম সরদারকে ফোন করলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি কোথায় আছেন? আসুন চা খেয়ে যান, ঘটনা জেনে যান।’ তবে হামলার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ফোনের অপর প্রান্ত থেকে চুপ থাকেন। তাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণ বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি। যদি আওয়ামী লীগের দোসররা বিএনপির টানায় থানায় যান, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার আমি নিন্দা জানাই। আমি খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’ সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের সময় শনিবার সন্ধ্যায় একটি যুবলীগ নেতাকে আটক করা হয়। এরপর তাকে ছাড়াতে যান বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম। আমি তাকে বলেছি যে, তথ্য যাচাই-বাছাই ছাড়া তাকে ছাড়তে পারব না। এই ঘটনা থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এটা দুঃখজনক। যদি অভিযোগ আসে, আমি ব্যবস্থা নেবো।’


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

শরীয়তপুরে যুবলীগ নেতাকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা

আপডেট সময় ৩ ঘন্টা আগে

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার মধ্যে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। একজন যুবলীগ নেতাকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে একজন বিএনপি নেতার নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে এই ঘটনা ঘটে। এতে দৈনিক নয়া দিগন্তের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার রাসেল শিকদার ও এশিয়ান টেলিভিশনের স্থানীয় প্রতিনিধি রুহুল আমীন জুয়েল মারধর এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে শনিবার সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনকে আটক করা হয়। থানায় হেফাজতে থাকাকালে তাকে ছেড়ে দিতে থানায় আসেন সখিপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মাজহারুল ইসলাম সরদার ও তার কয়েকজন সহযোগী। এসময় তারা পুলিশকে অনুরোধ করেন যে, আটক যুবলীগ নেতা আক্তার হোসেনকে ছেড়ে দিতে। এর ফলে থানার ভিতরে পরিস্থিতির উত্তেজনা বাড়লে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিক রাসেল শিকদার ও রুহুল আমীন জুয়েল পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ছবি তোলেন। এক পর্যায়ে পুলিশ যদি ওই যুবলীগ নেতাকে না ছাড়ে, তবে বিএনপি নেতাসহ তার সহযোগীরা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে হামলা চালায়, মারধর করে এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের দ্রুত ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। আহত সাংবাদিক রাসেল শিকদার বলেন, ‘আমরা জানতে পারি যে, আটক যুবলীগ নেতাকে মুক্ত করতে থানায় আসার সময় বিএনপি নেতারা হট্টগোল করছে। পরে আমি ও আমার দুই সহকর্মী থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের কাছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। এরপর আমি থানার ভেতর থেকে বের হয়ে থানার ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে মাজহারুল ইসলাম সরদারসহ কয়েকজন আমাদের দিকে তেড়ে আসে। তারা মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং মারধর করে। আমি বলতে চাই, আমাদের জন্য ওই যুবলীগ নেতাকে ছাড়া দিতে পারেননি। থানার মতো জায়গায় সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমরা এই ঘটনাকে ঘিরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ অপর এক আহত সাংবাদিক রুহুল আমীন জুয়েল বলেন, ‘আমি একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। হঠাৎ বিএনপি নেতা ও তার লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং কিল-ঘুসি মারতে থাকে। থানার ভিতরে কি নিরাপত্তা না থাকলে আমরা কোথায় নিরাপদ থাকব?’ এই ঘটনায় জেলার সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘শরীয়তপুর ইলেকট্রনিক সাংবাদিক মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব নুরুল আমিন রবিন বলেন, এই ধরনের হামলা আমাদের গণমাধ্যমের মুক্ততা ও স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের মিডিয়া কর্মীরা তথ্য সংগ্রহের সময় যদি রাজনৈতিক নেতাদের আক্রমণের শিকার হন, তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক। এই ধরনের হামলা আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।’ হামলার অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম সরদারকে ফোন করলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি কোথায় আছেন? আসুন চা খেয়ে যান, ঘটনা জেনে যান।’ তবে হামলার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ফোনের অপর প্রান্ত থেকে চুপ থাকেন। তাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণ বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি। যদি আওয়ামী লীগের দোসররা বিএনপির টানায় থানায় যান, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার আমি নিন্দা জানাই। আমি খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’ সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের সময় শনিবার সন্ধ্যায় একটি যুবলীগ নেতাকে আটক করা হয়। এরপর তাকে ছাড়াতে যান বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম। আমি তাকে বলেছি যে, তথ্য যাচাই-বাছাই ছাড়া তাকে ছাড়তে পারব না। এই ঘটনা থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এটা দুঃখজনক। যদি অভিযোগ আসে, আমি ব্যবস্থা নেবো।’


প্রিন্ট