, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

রমজান ও নির্বাচনের আগে নিত্যপণ্যের বাজারে চাপের আশঙ্কা

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

আগামী পবিত্র রমজান ও জাতীয় নির্বাচন একই সময়ে পালিত হবে বলে ধারণা করছে সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। এই দুটির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে বাজারে পণ্যের সরবরাহ দ্রুত বাড়ানো ও পর্যবেক্ষণ জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ‘নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি’ শীর্ষক বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন অংশগ্রহণকারীরা। এফবিসিসিআই’র পরিচালক আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে বাজার বেশ স্থিতিশীল থাকলেও রমজানে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। এ জন্য রোজার সময় ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে সহজতর করার জন্য এলসি মার্জিন কমানো হয়েছে। এখন বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা, উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হতে হবে। তিনি আরও বলেন, চাঁদাবাজি ও পরিবহন ব্যবস্থায় যেন কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের দাম বৃদ্ধির নামে চাঁদাবাজি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। এফবিসিসিআই’র পরিচালক ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, পণ্যের দাম সঠিক, স্বাভাবিক ও সহজলভ্য রাখতে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, দায়িত্ববোধও থাকতে হবে। পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীর সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে সমস্যা হবে না। বর্তমানে ‘আন্ডাররেট’ চর্চা চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, তেলের দাম বাড়লে বাজারে তেল পাওয়া যায় না, কারণ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নির্ধারিত দামের থেকে কম দামে তেল কিনে পরে বেশি দামে বিক্রি করেন। এ জন্য এই ডিও লেটার ব্যবস্থার ওপর নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। টিকে গ্রুপের পরিচালক আতাহার তাসলিম বলেন, দেশে বছরে ২২-২৩ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানির প্রয়োজন হয়, যার বেশিরভাগ সরবরাহ করে তিনটি বড় কোম্পানি। রমজানে বাড়তি চাহিদা মেটাতে সরকারকে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, শীতকালে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সমস্যা রোধে মিলগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে হবে। মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুল হক বলেন, পোর্টে শুল্ক বৃদ্ধি পেয়ে আমদানির খরচ বাড়ছে, ফলে পণ্যের দাম আরও বাড়বে। এছাড়া লাইটার জাহাজের স্বল্পতার কারণে সরবরাহে ব্যাঘাতের শঙ্কাও রয়েছে। শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা বাজারে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করছে। তারা তিন টাকার প্যাকেটে ৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে, সরকারের কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে ফড়িয়া ও দালালদের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, পুলিশ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর না থাকায় তারা অব্যাহতভাবে কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু সরবরাহ বাড়ানো এবং দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। স্বতন্ত্র বাজার বিশ্লেষক কাজী আবদুল হান্নান বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে বাজারে অতিরিক্ত টাকা প্রবাহিত হয়, যা চাহিদা বাড়ায়। রমজানেও একই অবস্থা হয়। এই দুটি পরিস্থিতি বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য দায়ী। তিনি আরও জানান, মাত্র পাঁচ দিনে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে যা স্বাভাবিক নয়। নতুন সরকারের সময় ব্যবসায়ীরা ভয়ের মধ্যে রয়েছে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোনো বাজার নিয়ন্ত্রণের কৌশল আবার শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

রমজান ও নির্বাচনের আগে নিত্যপণ্যের বাজারে চাপের আশঙ্কা

আপডেট সময় ১০:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

আগামী পবিত্র রমজান ও জাতীয় নির্বাচন একই সময়ে পালিত হবে বলে ধারণা করছে সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। এই দুটির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে বাজারে পণ্যের সরবরাহ দ্রুত বাড়ানো ও পর্যবেক্ষণ জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ‘নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি’ শীর্ষক বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন অংশগ্রহণকারীরা। এফবিসিসিআই’র পরিচালক আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে বাজার বেশ স্থিতিশীল থাকলেও রমজানে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। এ জন্য রোজার সময় ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে সহজতর করার জন্য এলসি মার্জিন কমানো হয়েছে। এখন বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা, উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হতে হবে। তিনি আরও বলেন, চাঁদাবাজি ও পরিবহন ব্যবস্থায় যেন কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের দাম বৃদ্ধির নামে চাঁদাবাজি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। এফবিসিসিআই’র পরিচালক ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, পণ্যের দাম সঠিক, স্বাভাবিক ও সহজলভ্য রাখতে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, দায়িত্ববোধও থাকতে হবে। পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীর সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে সমস্যা হবে না। বর্তমানে ‘আন্ডাররেট’ চর্চা চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, তেলের দাম বাড়লে বাজারে তেল পাওয়া যায় না, কারণ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নির্ধারিত দামের থেকে কম দামে তেল কিনে পরে বেশি দামে বিক্রি করেন। এ জন্য এই ডিও লেটার ব্যবস্থার ওপর নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। টিকে গ্রুপের পরিচালক আতাহার তাসলিম বলেন, দেশে বছরে ২২-২৩ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানির প্রয়োজন হয়, যার বেশিরভাগ সরবরাহ করে তিনটি বড় কোম্পানি। রমজানে বাড়তি চাহিদা মেটাতে সরকারকে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, শীতকালে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সমস্যা রোধে মিলগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে হবে। মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুল হক বলেন, পোর্টে শুল্ক বৃদ্ধি পেয়ে আমদানির খরচ বাড়ছে, ফলে পণ্যের দাম আরও বাড়বে। এছাড়া লাইটার জাহাজের স্বল্পতার কারণে সরবরাহে ব্যাঘাতের শঙ্কাও রয়েছে। শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা বাজারে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করছে। তারা তিন টাকার প্যাকেটে ৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে, সরকারের কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে ফড়িয়া ও দালালদের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, পুলিশ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর না থাকায় তারা অব্যাহতভাবে কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু সরবরাহ বাড়ানো এবং দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। স্বতন্ত্র বাজার বিশ্লেষক কাজী আবদুল হান্নান বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে বাজারে অতিরিক্ত টাকা প্রবাহিত হয়, যা চাহিদা বাড়ায়। রমজানেও একই অবস্থা হয়। এই দুটি পরিস্থিতি বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য দায়ী। তিনি আরও জানান, মাত্র পাঁচ দিনে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে যা স্বাভাবিক নয়। নতুন সরকারের সময় ব্যবসায়ীরা ভয়ের মধ্যে রয়েছে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোনো বাজার নিয়ন্ত্রণের কৌশল আবার শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।


প্রিন্ট