জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার কিছু পরে সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনী প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হন হাদি। এরপর তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। ছয় দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হাদির অকাল মৃত্যুতে পুরো দেশ শোকাহত। শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের বিনোদন অঙ্গনেও। সামাজিক মাধ্যমে শোক, ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ভাষায় বিভিন্ন তারকা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, শহীদ ওসমান বিন হাদী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে থাকবেন। চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ হাদি ও তার শিশুপুত্রের ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, প্রাণদান করলেও ক্ষয় নেই তার। অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক গভীর শোক প্রকাশ করে বললেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নামটা মনে রাখো—শহীদ, বীর শরীফ ওসমান হাদি। পরে একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি বাকস্বাধীনতা, ভিন্নমত ও রাষ্ট্রীয় সহনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, সে কোনো এমপি-মন্ত্রী ছিল না, কারও হক আত্মসাৎ করেনি। তবুও সামান্য কথার জন্য একটা জীবন এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে? আজ হাদি, কাল কে? মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুল হাদি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে লিখেছেন, এটা সত্যিই খুব কষ্টের এবং মেনে নেওয়া যায় না। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দেন এবং তার ছোট সন্তানসহ পরিবারকে ধৈর্য্য ধারণের শক্তি দেন। আমরা চাই এমন এক ভবিষ্যৎ যেখানে মানুষের জীবনের মূল্য সবার আগে থাকবে। অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান বলেন, ওসমান হাদীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অস্থিরতা দূর হোক, দেশে শান্তি ফিরে আসুক। তরুণ অভিনেতা আরশ খান ক্ষমতা ও মানবজীবনের মূল্য নিয়ে লিখেছেন, একেকটা করে নিভে যাওয়া বাতির মতো সবাই কারও না কারও সন্তান ছিল। নির্মাতা আশফাক নিপুণ বলেন, তারা হয়তো আপনাকে হত্যা করেছে, কিন্তু আপনার শুরু করা লড়াই থামাতে পারবে না। খুনিদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। এদিকে, হাদির মৃত্যুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মিছিল ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের অফিসে হামলার ঘটনায় তারকারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আশফাক নিপুণ বলেন, শহীদ হাদির অকাল মৃত্যুতে প্রতিবাদে ভাঙচুরের ভাষা অস্পষ্ট। এই সময় সবাইকে একসাথে থাকা জরুরি। সংবাদমাধ্যমে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পিয়া জান্নাতুল লিখেছেন, আগুন ভবন ধ্বংস করতে পারে, সাহস নয়। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার মানুষের হৃদয়ে থাকবেন। রুকাইয়া জাহান চমক আক্ষেপ করে লিখেছেন, বিশ্বমিডিয়ায় আলোচনায় আসবে অগ্নিসংযোগ, কিন্তু হাদির বীরত্ব ও খুনের বিচার নিয়ে কথা হবে না। এ দেশে মানুষ মারা গেলে শোকও নিরাপদ থাকে না। উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান হাদি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯৩ সালে। তার অকাল মৃত্যুতে দেশ হারাল এক সাহসী কণ্ঠস্বর, আর এক শিশু হারাল তার বাবাকে।