ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ উসকে দেওয়ার’ অভিযোগ তুলেছেন। ক্যারিবিয়ান সাগরের দিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পর তিনি এ মন্তব্য করেন। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ভূমধ্যসাগর থেকে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী ‘ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড’ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দিকে পাঠানোর আদেশ দেন। এই রণতরী সর্বোচ্চ ৯০টি যুদ্ধবিমান বহন করতে সক্ষম। মাদুরো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, ‘তারা নতুন করে এক অনন্ত যুদ্ধের সৃষ্টি করছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আর কখনো যুদ্ধ শুরু করবে না। অথচ এখন নিজেরাই যুদ্ধের আগুন জ্বালাচ্ছে।’ যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। মাদক চোরাচালান রোধের নামে তারা যুদ্ধজাহাজ, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। গত কিছু সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ১০টি বিমান হামলা চালিয়েছে কথিত মাদক ব্যবসায়ীদের জাহাজে। সর্বশেষ শুক্রবারের হামলায় ‘ছয়জন পুরুষ নরকো-সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে’ বলে জানানো হয় হেগসেথের মাধ্যমে। তিনি বলেছেন, এই হামলা ক্যারিবিয়ান সাগরে ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ নামের ভেনেজুয়েলান অপরাধী সংগঠনের মালিকানাধীন এক জাহাজে চালানো হয়। তবে এসব হামলার বৈধতা নিয়ে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, তারা মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কংগ্রেস সদস্য ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে এই অভিযান ভেনেজুয়েলার সরকারকে অস্থিতিশীল করার কৌশল। চ্যাথাম হাউসের লাতিন আমেরিকা–বিষয়ক বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার সাবাতিনি বলেছেন, ‘এটি সরাসরি শাসন পরিবর্তনের ইঙ্গিত। তাদের লক্ষ্য আক্রমণ নয়, বরং ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী ও মাদুরোর ঘনিষ্ঠদের ভয় দেখানো।’ মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাউদার্ন কমান্ড’ অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান এলাকা। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল বলেন, এই মোতায়েন ‘আন্তর্জাতিক অপরাধী সংগঠনগুলোর মাদক পরিবহন নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার সক্ষমতা আরও বাড়াবে’। রণতরীটি স্থলভিত্তিক লক্ষ্যেও হামলার সক্ষমতা রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে বলেছেন, ‘আমরা সাগর নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, এখন স্থল অভিযানের কথাও ভাবছি।’ সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরের কোকেন উৎপাদন কেন্দ্র ও পাচার রুটে হামলার পরিকল্পনা বিবেচনা করছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই রণতরীটি তিন দিন আগে শেষবার ক্রোয়েশিয়ার উপকূলে দেখা গিয়েছিল। এর নতুন মোতায়েনকে লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতার বড়সড় ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন কথিত মাদক চোরাচালানবিরোধী অভিযানে অন্তত ১০টি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩ জন নিহত হয়েছে বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তবে মার্কিন কংগ্রেসের অনেক সদস্য এসব হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পল বলেছেন, ‘এ ধরনের সামরিক হামলার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন।’ ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের আইনি অধিকার আছে এসব পদক্ষেপ নেওয়ার। আমরা চাইলে স্থল অভিযানেও যেতে পারি।’ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘যদি কেউ চায় আর তাদের নৌকা উড়িয়ে দেওয়া না হোক, তবে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাঠানো বন্ধ করতে হবে।’ সূত্র: বিবিসি