যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এশিয়া সফরে যাচ্ছেন চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনা ও চুক্তির সম্ভাবনা পরীক্ষা করতে। এই সফরে মালয়েশিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণের পরে এটি তার সবচেয়ে দীর্ঘ বিদেশ সফর। ট্রাম্প শুক্রবার রাতে ওয়াশিংটন থেকে রওনা দিয়েছেন। পঞ্চদশ দিনের এই সফরে তিনি বৈঠক করবেন বাণিজ্য, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ এবং অস্ত্রবিরতির বিষয়ে একাধিক চুক্তি করার লক্ষ্য নিয়ে। সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে আগামী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য পরিস্থিতি তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ। উভয় দেশ তাদের পণ্যদ্রব্যে শুল্ক বৃদ্ধি করেছে এবং প্রযুক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানি বন্ধের হুমকি দিয়েছে। এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আপাতত কোনো বড় অগ্রগতি আশা করা যাচ্ছে না। তবে কিছু সীমিত শুল্ক ছাড় বা মার্কিন সয়াবিন ও বোয়িং বিমান কেনার প্রতিশ্রুতি আসতে পারে বলে সূত্রের খবর। মার্কিন ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, ট্রাম্প-শি বৈঠকটি আনুষ্ঠানিক নয়, বরং সাধারণ আলোচনা হবে। তবে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমাদের দীর্ঘ সময়ের বৈঠক হবে, যেখানে অনেক প্রশ্নের উত্তর এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব।’ এশিয়া সফরের শুরুতে ট্রাম্প অংশ নেবেন মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনে। সেখানে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতের পর একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, যেখানে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা রয়েছে। এর পরে তিনি জাপানে পৌঁছেন নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন। জাপান যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচশত পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবশেষে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে পৌঁছে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই বৈঠককে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে চুক্তি না হলে ট্রাম্প নভেম্বরের মধ্যে চীনা পণ্যগুলোর ওপর ১৫৫ শতাংশ পর্যন্ত নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। বাণিজ্য ছাড়াও এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তাইওয়ান, রাশিয়া এবং রুশ তেল আমদানির নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলোও উঠে আসতে পারে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী পত্রিকা অ্যাপল ডেইলির প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাইয়ের মুক্তির বিষয়টিও তিনি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এশিয়া সফরে ট্রাম্প মালয়েশিয়া ও ভারতের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তি আরও শক্তিশালী করতে চান। তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। সফরকালে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। ট্রাম্প মজা করে সাংবাদিকদের বললেন, ‘তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন—কারণ ওদের দেশে টেলিফোন পরিষেবা ঠিকমতো নেই।’ সূত্র : রয়টার্স