, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

গাজায় চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে শিশু

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২ ঘন্টা আগে
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে

গাজায় হাজারো মানুষের জীবন এখনো ঝুলে আছে অস্থিতিশীলতার ছায়ায়। নাসের হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পড়ে রয়েছে অসংখ্য শিশু ও রোগী—তাদের মধ্যে রয়েছে দুই দশকের শিশু। একজন ইসরায়েলি গুলিতে ঘাড় থেকে নিচ পর্যন্ত পঙ্গু হয়েছেন, অপরজনের মস্তিষ্কে টিউমার দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বর্তমানে গাজায় প্রায় ১৫ হাজার রোগী জরুরি চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অপেক্ষায় আছেন। তবে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের বেশিরভাগই মৃত্যুর মুখে আটকে রয়েছে। দক্ষিণ গাজার একটি তাঁবুতে বসে নিজের সন্তান আমারের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন ওলা আবু সাঈদ। পরিবারের দাবি, ইসরায়েলি ড্রোনের গুলিতে আমার আহত হয়েছেন এবং গুলিটি তার মেরুদণ্ডের দুই হাড়ের মাঝে আটকে আছে, ফলে সে সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। ওলা বললেন, ‘আমার ছেলেটির দ্রুত অস্ত্রোপচারের দরকার, কিন্তু এখানকার হাসপাতালে সম্ভব নয়। ডাক্তাররা বলেছেন, অস্ত্রোপচারে তার মৃত্যু বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই ভালো সজ্জিত হাসপাতালে তার চিকিৎসা দরকার।’ গাজার হাসপাতালগুলো এখন কার্যত ভাঙনের মুখে। দুই বছরের যুদ্ধের ধাক্কায় চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত। একই হাসপাতালে বসে আছেন আহমদ আল-জাদ নামের আরেক শিশুর বোন শাহদ, কাঁদছেন। তিনি বললেন, ‘আমার ভাইটার মাত্র ১০ বছর বয়সে আমাদের জন্য পানি বিক্রি করে সংসারে সহায়তা করত। কয়েক মাস আগে তার মুখ একদিকে বেঁকে যেতে শুরু করে, হাতও নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে টিউমার হয়েছে।’ শাহদ যোগ করলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে আমাদের বাবা, বাড়ি এবং স্বপ্ন হারিয়েছি—এখন ভাইকেও হারাতে চাই না। যুদ্ধবিরতির খবর আমাদের জন্য কিছুটা আশার আলো দিয়েছে, হয়তো এক শতাংশ সম্ভাবনা আছে যে আহমদ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবে।’ ডব্লিউএইচও গত বুধবার যুদ্ধবিরতির পর প্রথমবারের মতো ৪১ রোগী ও ১৪৫ স্বজনকে ইসরায়েলের কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে জর্দানে পাঠিয়েছে। সংস্থাটি আরও বেশি রোগী বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়েছে। তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাফা সীমান্ত খুলবে না, যেখানে নিহত জিম্মিদের দেহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ডব্লিউএইচও প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসুস বললেন, ‘সর্বোত্তম সমাধান হবে যদি ইসরায়েল গাজার রোগীদের পশ্চিম তীরের পূর্ব জেরুজালেমসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দেয়, যেমনটা যুদ্ধের আগে ছিল।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ২০টিরও বেশি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কর্মকর্তারা এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে চিকিৎসক, সরঞ্জাম ও অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অগাস্টার ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী ড. ফাদি আতরাশ বললেন, ‘জেরুজালেমের হাসপাতালগুলো প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ জন ক্যান্সার ও রেডিয়েশন রোগীর চিকিৎসা দিতে পারে। অন্যান্য হাসপাতালেও অস্ত্রোপচার সম্ভব। গাজা থেকে রোগী পাঠানোই সবচেয়ে দ্রুত ও কার্যকর উপায়।’ কিন্তু ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা দপ্তর (কগাট) বলেছে, সীমান্ত খোলার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এবং তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে—যেখানে কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখিয়ে গাজার রোগীদের পশ্চিম তীরে যেতে দেয়নি ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৪০ জন রোগী, যাদের মধ্যে ১৪০ শিশু, চিকিৎসার অপেক্ষায় মারা গেছে। নাসের হাসপাতালের শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ড. আহমেদ আল-ফাররা বললেন, ‘ডাক্তার হিসেবে রোগ নির্ণয় করতে পারি, কিন্তু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা বা চিকিৎসা দিতে পারি না—এটাই সবচেয়ে কষ্টের বিষয়। প্রতিদিনই আমরা রোগী হারাচ্ছি সীমাবদ্ধতার কারণে।’ সম্প্রতি হাসপাতালে মারা গেছে ৮ বছরের সাদি আবু তাহা (ক্যান্সারে), পরদিন মারা যায় তিন বছরের জাইন তাফেশ ও ৮ বছরের লুয়াই দোয়িক (হেপাটাইটিসে)। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও অনেক গাজাবাসী বাঁচার সুযোগ হারাবে—শান্তিতে বেঁচে থাকার সেই ক্ষীণ আশাটুকুও।


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজায় চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে শিশু

আপডেট সময় ১২ ঘন্টা আগে

গাজায় হাজারো মানুষের জীবন এখনো ঝুলে আছে অস্থিতিশীলতার ছায়ায়। নাসের হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পড়ে রয়েছে অসংখ্য শিশু ও রোগী—তাদের মধ্যে রয়েছে দুই দশকের শিশু। একজন ইসরায়েলি গুলিতে ঘাড় থেকে নিচ পর্যন্ত পঙ্গু হয়েছেন, অপরজনের মস্তিষ্কে টিউমার দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বর্তমানে গাজায় প্রায় ১৫ হাজার রোগী জরুরি চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অপেক্ষায় আছেন। তবে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের বেশিরভাগই মৃত্যুর মুখে আটকে রয়েছে। দক্ষিণ গাজার একটি তাঁবুতে বসে নিজের সন্তান আমারের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন ওলা আবু সাঈদ। পরিবারের দাবি, ইসরায়েলি ড্রোনের গুলিতে আমার আহত হয়েছেন এবং গুলিটি তার মেরুদণ্ডের দুই হাড়ের মাঝে আটকে আছে, ফলে সে সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। ওলা বললেন, ‘আমার ছেলেটির দ্রুত অস্ত্রোপচারের দরকার, কিন্তু এখানকার হাসপাতালে সম্ভব নয়। ডাক্তাররা বলেছেন, অস্ত্রোপচারে তার মৃত্যু বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই ভালো সজ্জিত হাসপাতালে তার চিকিৎসা দরকার।’ গাজার হাসপাতালগুলো এখন কার্যত ভাঙনের মুখে। দুই বছরের যুদ্ধের ধাক্কায় চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত। একই হাসপাতালে বসে আছেন আহমদ আল-জাদ নামের আরেক শিশুর বোন শাহদ, কাঁদছেন। তিনি বললেন, ‘আমার ভাইটার মাত্র ১০ বছর বয়সে আমাদের জন্য পানি বিক্রি করে সংসারে সহায়তা করত। কয়েক মাস আগে তার মুখ একদিকে বেঁকে যেতে শুরু করে, হাতও নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে টিউমার হয়েছে।’ শাহদ যোগ করলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে আমাদের বাবা, বাড়ি এবং স্বপ্ন হারিয়েছি—এখন ভাইকেও হারাতে চাই না। যুদ্ধবিরতির খবর আমাদের জন্য কিছুটা আশার আলো দিয়েছে, হয়তো এক শতাংশ সম্ভাবনা আছে যে আহমদ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবে।’ ডব্লিউএইচও গত বুধবার যুদ্ধবিরতির পর প্রথমবারের মতো ৪১ রোগী ও ১৪৫ স্বজনকে ইসরায়েলের কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে জর্দানে পাঠিয়েছে। সংস্থাটি আরও বেশি রোগী বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়েছে। তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাফা সীমান্ত খুলবে না, যেখানে নিহত জিম্মিদের দেহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ডব্লিউএইচও প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসুস বললেন, ‘সর্বোত্তম সমাধান হবে যদি ইসরায়েল গাজার রোগীদের পশ্চিম তীরের পূর্ব জেরুজালেমসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দেয়, যেমনটা যুদ্ধের আগে ছিল।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ২০টিরও বেশি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কর্মকর্তারা এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে চিকিৎসক, সরঞ্জাম ও অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অগাস্টার ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী ড. ফাদি আতরাশ বললেন, ‘জেরুজালেমের হাসপাতালগুলো প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ জন ক্যান্সার ও রেডিয়েশন রোগীর চিকিৎসা দিতে পারে। অন্যান্য হাসপাতালেও অস্ত্রোপচার সম্ভব। গাজা থেকে রোগী পাঠানোই সবচেয়ে দ্রুত ও কার্যকর উপায়।’ কিন্তু ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা দপ্তর (কগাট) বলেছে, সীমান্ত খোলার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এবং তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে—যেখানে কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখিয়ে গাজার রোগীদের পশ্চিম তীরে যেতে দেয়নি ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৪০ জন রোগী, যাদের মধ্যে ১৪০ শিশু, চিকিৎসার অপেক্ষায় মারা গেছে। নাসের হাসপাতালের শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ড. আহমেদ আল-ফাররা বললেন, ‘ডাক্তার হিসেবে রোগ নির্ণয় করতে পারি, কিন্তু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা বা চিকিৎসা দিতে পারি না—এটাই সবচেয়ে কষ্টের বিষয়। প্রতিদিনই আমরা রোগী হারাচ্ছি সীমাবদ্ধতার কারণে।’ সম্প্রতি হাসপাতালে মারা গেছে ৮ বছরের সাদি আবু তাহা (ক্যান্সারে), পরদিন মারা যায় তিন বছরের জাইন তাফেশ ও ৮ বছরের লুয়াই দোয়িক (হেপাটাইটিসে)। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও অনেক গাজাবাসী বাঁচার সুযোগ হারাবে—শান্তিতে বেঁচে থাকার সেই ক্ষীণ আশাটুকুও।


প্রিন্ট