, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

বই পড়ার অভ্যাসে তলানিতে বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৭:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের বই পড়ার অভ্যাস এখন শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। গড়পড়তা একজন বাংলাদেশি সারাবছরে মাত্র ৬২ ঘণ্টা বই পড়েন, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এই কারণে, পাঠাভ্যাস ও বই পড়ার র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এখন সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করছে। সম্প্রতি সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের পাঠাভ্যাস সংক্রান্ত জরিপে দেখা গেছে, মোট ১০২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। এই জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বই পড়ুয়া দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে নাগরিকরা বছরে গড়ে ৩৫৭ ঘণ্টা বই পড়েন, অর্থাৎ সপ্তাহে প্রায় সাত ঘণ্টা। খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে ভারত (৩৫২ ঘণ্টা) ও ব্রিটেন (৩৪৩ ঘণ্টা)। পঞ্চম স্থানে ফ্রান্স (৩০৫ ঘণ্টা) এবং ইতালি (২৭৮ ঘণ্টা)। চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র ভারতই উল্লেখযোগ্য পাঠাভ্যাস ধরে রাখতে সক্ষম। অন্যদিকে, বাংলাদেশ (৬২ ঘণ্টা), পাকিস্তান (৬০ ঘণ্টা) ও আফগানিস্তান (৫৮ ঘণ্টা) বিশ্বের সবচেয়ে কম বই পড়া দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এক সময়ের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধ দেশ বাংলাদেশে আজ বই পড়ার অভ্যাস দ্রুত কমে যাচ্ছে। প্রকাশক ও শিক্ষকদের মতে, পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বই পড়ার আগ্রহ প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। খুলনার এক লাইব্রেরিয়ান বলছেন, শিশুরা টিকটক ও ফেসবুকের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করে, কিন্তু বইয়ের সঙ্গে মাত্র পাঁচ মিনিটও কাটায় না। এমনকি শিক্ষিত পরিবারেও এখন বই সংগ্রহের প্রবণতা কমে গেছে। একুশে বইমেলা ও অনলাইন বুকস্টোরগুলো বইয়ের বাজার সচল রাখলেও, তথ্য বলছে, পাঠকদের পড়ার অভ্যাস খুবই অনিয়মিত। বড় শহরের বাইরে বেশিরভাগ গ্রন্থাগার নেই বললেই চলে, গ্রামীণ এলাকার অনেক শিক্ষার্থী কখনো গল্পের বই হাতে পায় না। এই জরিপ বিশ্বজুড়ে স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে, এক দিকে কিছু মানুষ এখনও বইকে জীবনের অংশ মনে করে থাকলেও, অন্যদল সোশ্যাল মিডিয়া ও ছোট ভিডিওর জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মানুষ প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টা বই পড়ে, সেখানে বাংলাদেশের গড় পড়ার সময় মাত্র পাঁচ মিনিটের নিচে। ঢাকার এক প্রকাশক বলেন, বই পড়া কমে যাওয়া মানে শুধু পড়ার অভ্যাস হারানো নয়, এর সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে কল্পনা, সহানুভূতি ও জ্ঞান। এটি এক ধরনের মানসিক দারিদ্র্য। গ্লোবাল রিডিং র‍্যাংকিং ২০২৪ শিরোনামে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের গড় বার্ষিক বই পড়ার সময় তুলে ধরা হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র (৩৫৭ ঘণ্টা), ভারত (৩৫২ ঘণ্টা), ব্রিটেন (৩৪৩ ঘণ্টা), ফ্রান্স (৩০৫ ঘণ্টা), ইতালি (২৭৮ ঘণ্টা), কানাডা (২৩২ ঘণ্টা), রাশিয়া (২২৩ ঘণ্টা), অস্ট্রেলিয়া (২১৭ ঘণ্টা), স্পেন (১৮৭ ঘণ্টা) ও নেদারল্যান্ডস (১৮২ ঘণ্টা)। মধ্যম সারির অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড ও তাইওয়ান (১৫৭ ঘণ্টা), সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম ও হংকং (১৫৫ ঘণ্টা)। দক্ষিণ আফ্রিকা ও চীনের মানুষরা (মূল ভূখণ্ড) গড়ে ১৫৪ ঘণ্টা বই পড়ে। জাপানের গড় পড়ার সময় তুলনামূলক কম, বছরে মাত্র ১৩৫ ঘণ্টা। তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রাজিলের নাগরিকরা বছরে ১২৫ থেকে ১৩০ ঘণ্টার মধ্যে বই পড়েন। ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় গড় পড়ার সময় ১২২ থেকে ১২৩ ঘণ্টা। নিউজিল্যান্ডে গড়ে ১১৯ ঘণ্টা, গ্রিস, হাঙ্গেরি ও ইউক্রেনে ১১৭ ঘণ্টা করে, আর স্লোভাকিয়ায় ১১৬ ঘণ্টা। তালিকার নীচে দেখা যায়, কেনিয়া ১০৮ ঘণ্টা, আর্জেন্টিনা ১০৩ ঘণ্টা এবং ভেনেজুয়েলার মানুষ গড়ে ১০৪ ঘণ্টা বই পড়ে। সবচেয়ে নিচে রয়েছে বেশ কিছু আফ্রিকান ও মধ্যপ্রাচ্য দেশের তালিকা। মরক্কো ৬৭ ঘণ্টা, আলজেরিয়া ও কাজাখস্তান ৬৫ ঘণ্টা, ইরাক ৬৪ ঘণ্টা, এবং বাংলাদেশ ৬২ ঘণ্টা বই পড়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ব্রুনেই প্রতিদিন গড়ে ৬০ ঘণ্টার বেশি বই পড়ে না। তালিকার সবচেয়ে নিচে রয়েছে আফগানিস্তান, যেখানে এক নাগরিক গড়ে মাত্র ৫৮ ঘণ্টা বই পড়ে।


প্রিন্ট
ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

বই পড়ার অভ্যাসে তলানিতে বাংলাদেশ

আপডেট সময় ০৭:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের বই পড়ার অভ্যাস এখন শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। গড়পড়তা একজন বাংলাদেশি সারাবছরে মাত্র ৬২ ঘণ্টা বই পড়েন, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এই কারণে, পাঠাভ্যাস ও বই পড়ার র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এখন সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করছে। সম্প্রতি সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের পাঠাভ্যাস সংক্রান্ত জরিপে দেখা গেছে, মোট ১০২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। এই জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বই পড়ুয়া দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে নাগরিকরা বছরে গড়ে ৩৫৭ ঘণ্টা বই পড়েন, অর্থাৎ সপ্তাহে প্রায় সাত ঘণ্টা। খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে ভারত (৩৫২ ঘণ্টা) ও ব্রিটেন (৩৪৩ ঘণ্টা)। পঞ্চম স্থানে ফ্রান্স (৩০৫ ঘণ্টা) এবং ইতালি (২৭৮ ঘণ্টা)। চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র ভারতই উল্লেখযোগ্য পাঠাভ্যাস ধরে রাখতে সক্ষম। অন্যদিকে, বাংলাদেশ (৬২ ঘণ্টা), পাকিস্তান (৬০ ঘণ্টা) ও আফগানিস্তান (৫৮ ঘণ্টা) বিশ্বের সবচেয়ে কম বই পড়া দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এক সময়ের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধ দেশ বাংলাদেশে আজ বই পড়ার অভ্যাস দ্রুত কমে যাচ্ছে। প্রকাশক ও শিক্ষকদের মতে, পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বই পড়ার আগ্রহ প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। খুলনার এক লাইব্রেরিয়ান বলছেন, শিশুরা টিকটক ও ফেসবুকের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করে, কিন্তু বইয়ের সঙ্গে মাত্র পাঁচ মিনিটও কাটায় না। এমনকি শিক্ষিত পরিবারেও এখন বই সংগ্রহের প্রবণতা কমে গেছে। একুশে বইমেলা ও অনলাইন বুকস্টোরগুলো বইয়ের বাজার সচল রাখলেও, তথ্য বলছে, পাঠকদের পড়ার অভ্যাস খুবই অনিয়মিত। বড় শহরের বাইরে বেশিরভাগ গ্রন্থাগার নেই বললেই চলে, গ্রামীণ এলাকার অনেক শিক্ষার্থী কখনো গল্পের বই হাতে পায় না। এই জরিপ বিশ্বজুড়ে স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে, এক দিকে কিছু মানুষ এখনও বইকে জীবনের অংশ মনে করে থাকলেও, অন্যদল সোশ্যাল মিডিয়া ও ছোট ভিডিওর জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মানুষ প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টা বই পড়ে, সেখানে বাংলাদেশের গড় পড়ার সময় মাত্র পাঁচ মিনিটের নিচে। ঢাকার এক প্রকাশক বলেন, বই পড়া কমে যাওয়া মানে শুধু পড়ার অভ্যাস হারানো নয়, এর সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে কল্পনা, সহানুভূতি ও জ্ঞান। এটি এক ধরনের মানসিক দারিদ্র্য। গ্লোবাল রিডিং র‍্যাংকিং ২০২৪ শিরোনামে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের গড় বার্ষিক বই পড়ার সময় তুলে ধরা হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র (৩৫৭ ঘণ্টা), ভারত (৩৫২ ঘণ্টা), ব্রিটেন (৩৪৩ ঘণ্টা), ফ্রান্স (৩০৫ ঘণ্টা), ইতালি (২৭৮ ঘণ্টা), কানাডা (২৩২ ঘণ্টা), রাশিয়া (২২৩ ঘণ্টা), অস্ট্রেলিয়া (২১৭ ঘণ্টা), স্পেন (১৮৭ ঘণ্টা) ও নেদারল্যান্ডস (১৮২ ঘণ্টা)। মধ্যম সারির অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড ও তাইওয়ান (১৫৭ ঘণ্টা), সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম ও হংকং (১৫৫ ঘণ্টা)। দক্ষিণ আফ্রিকা ও চীনের মানুষরা (মূল ভূখণ্ড) গড়ে ১৫৪ ঘণ্টা বই পড়ে। জাপানের গড় পড়ার সময় তুলনামূলক কম, বছরে মাত্র ১৩৫ ঘণ্টা। তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রাজিলের নাগরিকরা বছরে ১২৫ থেকে ১৩০ ঘণ্টার মধ্যে বই পড়েন। ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় গড় পড়ার সময় ১২২ থেকে ১২৩ ঘণ্টা। নিউজিল্যান্ডে গড়ে ১১৯ ঘণ্টা, গ্রিস, হাঙ্গেরি ও ইউক্রেনে ১১৭ ঘণ্টা করে, আর স্লোভাকিয়ায় ১১৬ ঘণ্টা। তালিকার নীচে দেখা যায়, কেনিয়া ১০৮ ঘণ্টা, আর্জেন্টিনা ১০৩ ঘণ্টা এবং ভেনেজুয়েলার মানুষ গড়ে ১০৪ ঘণ্টা বই পড়ে। সবচেয়ে নিচে রয়েছে বেশ কিছু আফ্রিকান ও মধ্যপ্রাচ্য দেশের তালিকা। মরক্কো ৬৭ ঘণ্টা, আলজেরিয়া ও কাজাখস্তান ৬৫ ঘণ্টা, ইরাক ৬৪ ঘণ্টা, এবং বাংলাদেশ ৬২ ঘণ্টা বই পড়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ব্রুনেই প্রতিদিন গড়ে ৬০ ঘণ্টার বেশি বই পড়ে না। তালিকার সবচেয়ে নিচে রয়েছে আফগানিস্তান, যেখানে এক নাগরিক গড়ে মাত্র ৫৮ ঘণ্টা বই পড়ে।


প্রিন্ট