ইউক্রেনের সামরিক প্রধান জেনারেল ওলেক্সান্দর সিরস্কি স্বীকার করেছেন, পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্ক রক্ষায় ইউক্রেনীয় বাহিনী এখন ‘অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি’ মোকাবিলা করছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, সেখানে ইউক্রেনীয় সেনারা ‘বহুসংখ্যক শত্রু বাহিনীর’ বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সিরস্কি রুশ পক্ষের দাবি অস্বীকার করে বলেছেন যে, ইউক্রেনীয় সেনারা শহরটি অবরুদ্ধ বা চারদিক থেকে ঘিরে রাখা হয়নি। তিনি নিশ্চিত করেছেন, সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ পথ রক্ষা করতে ইউক্রেনের বিশেষ অভিযান চালানো বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, যদিও এসব পথ রুশ গোলার আঘাতে ঝুঁকিপূর্ণ। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, কিছু ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছে এবং হেলিকপ্টারযোগে নামানো ১১ জন বিশেষ বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে। তবে কিয়েভ এই দাবি অস্বীকার করেছে। শনিবার এক সামাজিক মাধ্যম বার্তায় সিরস্কি জানান, তিনি আবারও দোনেৎস্ক ফ্রন্টে গিয়েছেন এবং সামরিক কমান্ডারদের কাছ থেকে সরাসরি পরিস্থিতি শুনেছেন। প্রকাশিত এক ভিডিওতে তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র বিশ্লেষণ করতে দেখা যায়, যেখানে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভও উপস্থিত ছিলেন। ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বুদানভ নিজে দোনেৎস্ক এলাকায় বিশেষ বাহিনীর তদারকি করছেন। এর মানে হলো, পোকরোভস্ক শহর রক্ষায় কিয়েভের দৃঢ় সংকল্প। রাশিয়া এক বছর ধরে এই শহর দখলের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনের সপ্তম র্যাপিড রেসপন্স কর্পস জানিয়েছে, পোকরোভস্কে তাদের সেনারা কিছুটা কৌশলগত অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবে পরিস্থিতি এখনও ‘জটিল ও পরিবর্তনশীল’। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার বলেন, পোকরোভস্ক রক্ষা এখন তাদের সরকারের ‘শীর্ষ অগ্রাধিকার’। রুশ দখলকৃত দোনেৎস্কের পশ্চিমে এই শহরটি অবস্থিত, যেখানে রুশ আগ্রাসনের খবর বেড়েই চলেছে। শুক্রবার প্রকাশিত কিছু ছবিতে দেখা যায়, ইউক্রেনের একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার প্রায় ১০ জন সেনাকে শহরের কাছাকাছি নামিয়ে দিচ্ছে—যদিও সময় ও স্থান যাচাই করা যায়নি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনীয় বিশেষ বাহিনীর ওই অবতরণ ঠেকিয়ে দিয়েছে এবং সব ১১ জন সেনাকে হত্যা করেছে। ইউক্রেনের ওপেন সোর্স মনিটরিং গ্রুপ ডিপস্টেট জানায়, পোকরোভস্কের প্রায় অর্ধেক এলাকা এখন ‘গ্রে জোন’ বা উভয় পক্ষের অনিয়ন্ত্রিত অঞ্চল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার জানায়, ইউক্রেনীয় বাহিনী সাম্প্রতিক পাল্টা হামলায় শহরের উত্তরাংশে কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবে পোকরোভস্ক এখনো মূলত ‘গ্রে জোন’ হিসেবে রয়েছে। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালায় এবং বর্তমানে দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে ২০১৪ সালে সংযুক্ত ক্রিমিয়া উপদ্বীপও রয়েছে। পোকরোভস্ক দখল করতে পারলে রাশিয়া দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক—এই দুটি অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার বড় সাফল্য পাবে। অন্যদিকে, কিয়েভ মনে করে, এই শহর দখল রাশিয়াকে পশ্চিমাদের বোঝাতে সাহায্য করবে যে, তারা যুদ্ধে এগিয়ে আছে, যা পশ্চিমা সমর্থন দুর্বল করতে পারে। ওয়াশিংটন শান্তি আলোচনা সফল না হওয়ায় ক্রেমলিনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার দুই বৃহৎ তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন। জেলেনস্কি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পক্ষে সম্মতি জানিয়ে বলেছেন, এর মাধ্যমে সীমারেখা বজায় রেখে যুদ্ধ ‘স্থগিত’ রাখা সম্ভব। কিন্তু পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করে আগের অবস্থানে রয়েছেন, যা কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো ‘ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ’ হিসেবে দেখছে। সূত্র: বিবিসি।