ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী মাওবাদীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দেশের মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ছয়জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। দশকখানেক ধরে চলমান সশস্ত্র আন্দোলনের স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ ঘটনা ঘটল। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার, ভারতের পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাওবাদী বিদ্রোহ দমন করার জন্য কেন্দ্র সরকার কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। একই সঙ্গে, তারা আগামী মার্চের মধ্যে এই বিদ্রোহ দমন সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করেছে। এই সময়ে মঙ্গলবার ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষ হয়েছে। ছত্তিশগড়ের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা সুন্দররাজ পাট্টিলিনগম টেলিফোনে এএফপিকে বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর, আমরা এখন পর্যন্ত জঙ্গলে ছয় মাওবাদীর দেহ উদ্ধার করেছি। তিনি আরও জানান, বিজাপুরে পুলিশের যৌথ অভিযানে মাওবাদী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গুলি বিনিময়ের সময় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে আধুনিক অস্ত্রও রয়েছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, নিহতদের মধ্যে মাওবাদীদের ‘জ্যেষ্ঠ কমান্ডার’ও রয়েছেন। তবে তিনি এই বিষয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি। কয়েক দশক ধরে চলমান সশস্ত্র সংগ্রামের স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে দুই মাস আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন মাওবাদী বিদ্রোহীরা। এই প্রস্তাবের মধ্যেই মঙ্গলবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগে, গত মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, “যারা আত্মসমর্পণ করতে চান, তাদের স্বাগত জানানো হবে। যারা এখনও অস্ত্র ধরে রাখতে চান, তাদের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।” চীনা বিপ্লবী নেতা মাও সেতুংয়ের অনুপ্রেরণায় ১৯৬৭ সালে ভারতের মাওবাদী বিদ্রোহ শুরু হয়। আদিবাসী অধিকার সংগ্রামের দাবিতে এই বিদ্রোহ শুরু হয়, যারা নকশাল নামেও পরিচিত। সেই বছর কয়েকজন গ্রামবাসী জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে সংঘাতের সূচনা হয়। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাওবাদীদের সংঘর্ষ চলমান, যেখানে এখন পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি বিদ্রোহী, সেনা সদস্য ও সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, মাওবাদীরা দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং তাদের সংখ্যাও ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজারের বেশি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। গত অক্টোবর মাসে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জানিয়েছিল, দুই দিনের অভিযানে মাওবাদী নেতাদের মধ্যে মল্লোজুলা ভেনুগোপাল রাওসহ ২৫০ জনেরও বেশি সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন। সূত্র: এএফপি।