, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে আফগানিস্তানের ৯০ শতাংশ পরিবার : জাতিসংঘ

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০২:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

আফগানিস্তানে বর্তমানে প্রতিটি দশটির মধ্যে নয়টি পরিবার না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে বা জীবন ধারণের জন্য ঋণ গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। দেশটিতে ফিরে আসা লাখো মানুষের কারণে পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকার পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫ লাখ আফগান নিজ দেশে ফিরেছেন, যার মধ্যে ১৫ লাখকে চলতি বছর পাকিস্তান ও ইরান থেকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তারা তীব্র অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। বুধবার প্রকাশিত ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিরতে বাধ্য পরিবারগুলোর অর্ধেকের বেশি খাদ্য যোগাতে গিয়ে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আবার ৯০ শতাংশেরও বেশি ঋণে ডুবে রয়েছে। সাধারণত তাদের ঋণের পরিমাণ ৩৭৩ থেকে ৯০০ ডলারের মধ্যে, যেখানে মাসিক আয় মাত্র ১০০ ডলার। আবাসনের সংকটও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাড়িভাড়া তিনগুণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার থাকার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। অর্ধেকের বেশি পরিবার জানাচ্ছে, তাঁদের পর্যাপ্ত জায়গা বা বিছানা নেই। পশ্চিম আফগানিস্তানের ইনজিল ও গুজারা জেলায় অধিকাংশ ফিরিয়ে আনা মানুষ জরাজীর্ণ ঘর বা তাবুতে বসবাস করছে। ইউএনডিপি জরুরি ভিত্তিতে জীবিকা ও মৌলিক সেবা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির আফগানিস্তান প্রতিনিধি স্টিফেন রদ্রিগেস বলেন, ‘যদি আয়, আবাসন ও মৌলিক সেবাগুলোর উন্নয়ন একসঙ্গে হয়, তাহলে এই এলাকার চাপ কমানো সম্ভব হবে এবং মানুষকে দ্বিতীয়বার বাস্তুচ্যুত হওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে।’ ২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। জাতিসংঘের ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের আহ্বানও দাতারা পূরণ করেনি। চলতি বছরের ভূমিকম্পের পর তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন জানায় এবং পাকিস্তানের শরণার্থী বহিষ্কারের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নারীদের কর্মসংস্থান সীমিত থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। বর্তমানে আফগানিস্তানে নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ মাত্র ৬ শতাংশে নেমে এসেছে—যা বিশ্বের অন্যতম নিম্ন হার। ফলে নারীপ্রধান পরিবারগুলো চাকরি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও ইউএনডিপির এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক কানি উইগ্নারাজা বলেন, ‘অনেক প্রদেশে প্রতি চারটি পরিবারের মধ্যে একটি নারী উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। নারীরা কাজ না করলে পরিবার, সমাজ ও দেশের ক্ষতি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের মানবিক সেবার মূল থেকে সরিয়ে দেওয়া মানে সবচেয়ে বিপর্যস্ত মানুষগুলো, বিশেষ করে ফিরিয়ে আনা ও দুর্যোগপ্রবণ জনগোষ্ঠীকে, সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা।’ সূত্র: আল জাজিরা


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে আফগানিস্তানের ৯০ শতাংশ পরিবার : জাতিসংঘ

আপডেট সময় ০২:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে বর্তমানে প্রতিটি দশটির মধ্যে নয়টি পরিবার না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে বা জীবন ধারণের জন্য ঋণ গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। দেশটিতে ফিরে আসা লাখো মানুষের কারণে পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকার পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫ লাখ আফগান নিজ দেশে ফিরেছেন, যার মধ্যে ১৫ লাখকে চলতি বছর পাকিস্তান ও ইরান থেকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তারা তীব্র অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। বুধবার প্রকাশিত ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিরতে বাধ্য পরিবারগুলোর অর্ধেকের বেশি খাদ্য যোগাতে গিয়ে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আবার ৯০ শতাংশেরও বেশি ঋণে ডুবে রয়েছে। সাধারণত তাদের ঋণের পরিমাণ ৩৭৩ থেকে ৯০০ ডলারের মধ্যে, যেখানে মাসিক আয় মাত্র ১০০ ডলার। আবাসনের সংকটও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাড়িভাড়া তিনগুণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার থাকার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। অর্ধেকের বেশি পরিবার জানাচ্ছে, তাঁদের পর্যাপ্ত জায়গা বা বিছানা নেই। পশ্চিম আফগানিস্তানের ইনজিল ও গুজারা জেলায় অধিকাংশ ফিরিয়ে আনা মানুষ জরাজীর্ণ ঘর বা তাবুতে বসবাস করছে। ইউএনডিপি জরুরি ভিত্তিতে জীবিকা ও মৌলিক সেবা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির আফগানিস্তান প্রতিনিধি স্টিফেন রদ্রিগেস বলেন, ‘যদি আয়, আবাসন ও মৌলিক সেবাগুলোর উন্নয়ন একসঙ্গে হয়, তাহলে এই এলাকার চাপ কমানো সম্ভব হবে এবং মানুষকে দ্বিতীয়বার বাস্তুচ্যুত হওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে।’ ২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। জাতিসংঘের ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের আহ্বানও দাতারা পূরণ করেনি। চলতি বছরের ভূমিকম্পের পর তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন জানায় এবং পাকিস্তানের শরণার্থী বহিষ্কারের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নারীদের কর্মসংস্থান সীমিত থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। বর্তমানে আফগানিস্তানে নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ মাত্র ৬ শতাংশে নেমে এসেছে—যা বিশ্বের অন্যতম নিম্ন হার। ফলে নারীপ্রধান পরিবারগুলো চাকরি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও ইউএনডিপির এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক কানি উইগ্নারাজা বলেন, ‘অনেক প্রদেশে প্রতি চারটি পরিবারের মধ্যে একটি নারী উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। নারীরা কাজ না করলে পরিবার, সমাজ ও দেশের ক্ষতি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের মানবিক সেবার মূল থেকে সরিয়ে দেওয়া মানে সবচেয়ে বিপর্যস্ত মানুষগুলো, বিশেষ করে ফিরিয়ে আনা ও দুর্যোগপ্রবণ জনগোষ্ঠীকে, সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা।’ সূত্র: আল জাজিরা


প্রিন্ট