ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির লাল কেল্লার কাছে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তেরো। বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজন আহত বিলালের মৃত্যু হলে এই তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ঘটনাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে ফরিদাবাদে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড ও হরিয়ানা পুলিশের নতুন তল্লাশি অভিযানে একটি লাল রঙের গাড়ি উদ্ধার হয়েছে, যা মূল সন্দেহভাজন ডা. উমর নবীর বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি ভারতের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বাসিন্দা। নবীর আসল পরিচয় নিশ্চিত করতে তার বাবা–মায়ের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বিস্ফোরণস্থলে পাওয়া দেহাংশের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশের মতে, বিস্ফোরণের আগে কয়েক ঘণ্টায় অন্তত পঞ্চাশটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে নবীর গতিবিধি ধরা পড়েছে। পিটিআইয়ের প্রকাশিত একটি ফুটেজে দেখা যায়, বিস্ফোরণের আগে তিনি তুর্কমান গেটের একটি মসজিদ থেকে বের হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা একটি প্রস্তাবে বিস্ফোরণকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানায় এবং দ্রুত তদন্ত শেষ করে হামলাকারী ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নির্দেশ দেয়। কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পুলিশ সূত্রের বরাতে দাবি করেছিল, হামলার সন্দেহভাজনদের সাথে তুরস্কের যোগাযোগ রয়েছে। বলা হয়, বিস্ফোরণের আগে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ইস্তাম্বুল ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংস্থার প্রধান ফারহান নবি সিদ্দিকিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিদেশ থেকে হাওয়ালার মাধ্যমে ১১ কোটি রুপি তাদের কাছে এসেছে। একই মামলায় তুরস্কের নাগরিক নাসি তোরবারের নামও উঠে আসে। তবে বৃহস্পতিবার তুরস্ক সরকার এক বিবৃতিতে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। তারা জানায়, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তুরস্ককে জড়িয়ে যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তা দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট করার উদ্দেশ্যে চালানো ‘দুরভিসন্ধিমূলক মিথ্যা প্রচারণা’। তুরস্ক সব ধরনের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে অটল থাকবে। দিল্লি পুলিশের যে আটজনের তালিকা প্রকাশ পেয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন— মুহাম্মদ জুম্মান, মহসীন মালিক, দিনেশ মিশ্র, লোকেশ আগরওয়াল, অশোক কুমার, নোমান, পঙ্কজ সাহনী ও আমন কাটারিয়া। তারা কেউ রিকশাচালক, কেউ ট্যাক্সিচালক; কয়েকজনের ব্যবসা ছিল লাল কেল্লা এলাকায়। ২৮ বছরের মহসীন মালিক মেরঠের বাসিন্দা হলেও সিভিল লাইন্সে থাকতেন এবং ই–রিকশা চালাতেন। বিস্ফোরণের সময় তিনি ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন। পুলিশের হাতে তার মোবাইল ফোন পাওয়ার পর পরিবার হাসপাতালে গিয়ে তার মৃত্যুর খবর জানতে পারে। মালিকের দুই সন্তান রয়েছে। মুহাম্মদ জুম্মানও কাছেই রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরিবার সারা রাত তাকে খুঁজে না পেয়ে পরের দিন মর্গে গিয়ে পোশাক দেখে তার দেহ শনাক্ত করে। তদন্ত এখনো চলছে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বলেছে, হামলার পেছনে কারা জড়িত, তাদের অর্থায়ন কোথা থেকে এসেছে, সবকিছু দ্রুত ও পেশাদারভাবে বের করা হবে।