খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে সুখবর দিলেন তথ্য উপদেষ্টা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক ইউপি সদস্যের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা অন্তত ১৯৩
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু
হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গেলেন তামিম ইকবাল
নোয়াখালীতে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় কোরআন খতম ও দোয়া
মসজিদে বিয়ে ও সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন শবনম ফারিয়া
দেশে বাড়লো সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম
ইসরায়েলি হামলার গাজায় নিহত ৭০ হাজারের বেশি
খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস
আজীবন দায়মুক্তিসহ নতুন ক্ষমতা পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
- আপডেট সময় ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
- / ২৪ বার পড়া হয়েছে
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী পাস করেছে, যা সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁকে আজীবন গ্রেপ্তার–মুক্তির অধিকার দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের সমালোচকরা মনে করেন, এর ফলে দেশটি আরও স্বৈরশাসনমুখী হয়ে উঠবে। বৃহস্পতিবার এই সংশোধনীতে দেশের শীর্ষ আদালতগুলোয় কাঠামো ও কার্যপ্রণালীতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকার বলছে, এর মূল উদ্দেশ্য হলো সেনাবাহিনী ও আদালতের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করা। পাকিস্তান যেখানে পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিশ্বের এক শক্তিশালী দেশ, সেখানে সেনাবাহিনী সবসময়ই রাজনৈতিক প্রভাবশালী। কখনো সরাসরি ক্ষমতা দখল, আবার কখনো গোপনে সরকার পরিচালনা করে তারা। বিশ্লেষকরা একে ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’ হিসেবে অভিহিত করেন। অনেকের ধারণা, নতুন এই সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য সেনাবাহিনীর দিকে আরও ঝুঁকে পড়েছে। ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এটি স্পষ্ট—পাকিস্তান এখন আর হাইব্রিড শাসনব্যবস্থায় নেই, বরং পোস্ট–হাইব্রিড শাসনে প্রবেশ করছে। নাগরিক ও সামরিক ক্ষমতার ভারসাম্য এখন প্রায় একচেটিয়া সামরিক বাহিনীর হাতে।’ নতুন আইনে ২০২২ সাল থেকে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের দায়িত্বের পাশাপাশি নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাঁর ফিল্ড মার্শাল উপাধি থাকছে আজীবন, এবং অবসরের পরেও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরামর্শে তাঁকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া যাবে। ফলে তিনি দীর্ঘদিন জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন—এমনটাই ধারণা। সরকার বলছে, এটি সেনাবাহিনীর প্রশাসনিক কাঠামোকে সুসংগঠিত করছে। সরকারি সংস্থা এপিপি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের বরাত দিয়ে, এই নতুন কাঠামো আধুনিক যুদ্ধের চাহিদা অনুযায়ী সেনাবাহিনীকে সাজাবে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই পরিবর্তনের ফলে বেসামরিক ক্ষমতার স্থান সংকুচিত হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থার সহসভাপতি ও সাংবাদিক মুনিজায়ে জাহাঙ্গীর মন্তব্য করেন, ‘সামরিক ও বেসামরিক সম্পর্কের ভারসাম্য এখন লোপ পেয়েছে। যেখানে সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের দরকার ছিল, সেখানে বরং তাদের ক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়েছে।’ সংশোধনীর আরেকটি বড় বিতর্ক আদালত ও বিচারব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। নতুন ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট (এফসিসি) গঠন করা হবে, যার বিচারপতি ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেবে রাষ্ট্রপতি। সংবিধান ও বিচারবিভাগ সম্পর্কিত মামলাগুলোর এখানেই নিষ্পত্তি হবে। মুনিজায়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এটা মূলত ন্যায্য বিচারধিকারকে বদলে দিচ্ছে। বিচারকদের নিয়োগ ও বেঞ্চ গঠনে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব বেড়ে গেছে।’ আরিফা নূর বলেন, ‘এখন বিচারব্যবস্থা কার্যত নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ হয়ে পড়বে। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ কমে যাবে।’ আগে এসব মামলা সুপ্রিম কোর্ট শুনত। কেউ কেউ বলছেন, এতে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার জট বাড়ছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী সালাহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, এই যুক্তি ভুল; কারণ অন্য আদালতের মামলার চাপ বেশি। আইন পাসের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি পদত্যাগ করে দেন। বিচারপতি আথার মিনাল্লাহ বলেন, ‘আমাদের শপথ ছিল সংবিধান রক্ষা করা—তা আর রক্ষা হয় না।’ মনসুর আলী শাহ বলেন, সংশোধনী আদালতকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। এখন থেকে বিচারকদের মতামত ছাড়াই অন্য আদালতে বদলি করা যাবে। আপত্তি জানালে বিচারকরা তা খতিয়ে দেখবেন; বিষয়টি অগ্রাহ্য হলে, তাঁকে বাধ্য হয়ে অবসর নিতে হবে। সমালোচকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এতে বিচারকদের উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। আইনজীবী আহমেদ বলেন, ‘একজন বিচারক যদি নিজের প্রদেশ থেকে সরিয়ে অন্য আদালতে পাঠানো হয়, তবে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সংকোচবোধ করবেন।’ তাঁর মতে, এর ফলে পাকিস্তানের ক্ষমতার ভারসাম্য আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। কুগেলম্যানও সতর্ক করে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ চেপে রাখা সমাজের জন্য শুভ নয়।’ সাংবাদিক নূর মনে করেন, গত বছরের ২৬তম সংশোধনীসহ ধারাবাহিক পরিবর্তন পাকিস্তানকে ধীরে ধীরে কর্তৃত্ববাদী পথে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৮তম সংশোধনী নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। সব মিলিয়ে, এই সংশোধনী দ্বারা পাকিস্তানে ক্ষমতার ভারসাম্য এখন আরও বেশি সেনাবাহিনীর পক্ষে ঝুঁকে পড়েছে—এটাই বিশ্লেষকদের মত।
প্রিন্ট














