জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, যা গাজায় দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং পুনর্গঠনের পথে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি। সোমবারের ভোটে পরিষদের মোট ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, আর রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত থাকে। এই প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা গাজার পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়ার উদ্দেশ্যে আনা হয়। এই পরিকল্পনার কিছু অংশ গত মাসে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল। প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পরে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে বলেন, ‘বিশ্বের শক্তিশালী নেতাদের নিয়ে যে শান্তি বোর্ড গঠন হবে, তার নেতৃত্ব আমি দিচ্ছি।’ প্রস্তাবের মধ্যে ‘শান্তি বোর্ড’ নামে একটি মধ্যবর্তী সংস্থা এবং গাজার জন্য আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে আইএসএফ নামে একটি বাহিনী গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন বলছে, এই বাহিনী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসহ বিভিন্ন অংশীদারদের সমন্বয়ে গাজায় নিরাপত্তা, নিরস্ত্রীকরণ, বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা এবং নিরাপদ দুরত্ব নিশ্চিত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই প্রস্তাব পাস হওয়ায় আইএসএফ গঠনে দেশগুলোর অংশগ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে। পশ্চিমা কূটনীতিক মহল জানায়, খসড়া প্রস্তাবের সময়সূচি ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা স্পষ্ট নয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, শান্তি বোর্ড হামাসসহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিরস্ত্রীকরণ ও গাজা পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেবে—যা ইসরায়েলের মূল দাবি। এতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ রয়েছে, যদিও নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি। রাশিয়া ও চীন এই প্রস্তাবে নিরপেক্ষতা ও ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের অভাব দেখিয়ে ভোটদানে বিরত থাকে। হামাস এই প্রস্তাবকে গাজায় আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ চাপানোর চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করছে। তাদের অভিযোগ, আইএসএফ–কে নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব দিলে এটি ‘নিরপেক্ষতা হারিয়ে সংঘাতের পক্ষ হয়ে উঠবে’। গাজার সাধারণ মানুষেরও আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক বাহিনী তাদের জীবনে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ইসরায়েল জোরালোভাবে বলছে, যেকোনো উপায়েই হোক—গাজা নিরস্ত্রীকরণই হবে। ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এই পরিস্থিতিকে ‘বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, শান্তি বোর্ড মানবিক সহায়তা বিতরণ, গাজার উন্নয়ন এবং ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের মাধ্যমে দৈনন্দিন প্রশাসন চালাতে সহায়তা করবে। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার সংক্রান্ত কর্মসূচির বিস্তারিত এখনো জানানো হয়নি। সূত্র: সিএনএন