, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা এখনও হাতে পায়নি রাশিয়া

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৯:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে এখনো তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পায়নি। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, তিনি যুদ্ধ শেষ করতে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ভিশন’ নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। মার্কিন পরিকল্পনার খসড়া অনুযায়ী পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকাকে রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে, সেনাবাহিনী কমাতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার মতো শর্ত রয়েছে—যা কিয়েভ আগে থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এসব শর্ত রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, রুশ হামলায় বৃহস্পতিবার রাতে জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে পাঁচজন এবং দিনিপ্রোপেত্রোভ্স্কে একজন নিহত হয়েছেন। অঞ্চলটিতে রাশিয়া সামান্য অগ্রগতি দাবি করেছে, আর কিয়েভ অভ্যন্তরীণভাবে ১০০ মিলিয়ন ডলার দুর্নীতির কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শান্তি-পরিকল্পনা তৈরিতে ইউক্রেনকে বাদ দেওয়া হয়নি। এক মার্কিন কর্মকর্তার ভাষ্য, জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা রুস্তেম উমেরভের সঙ্গে আলোচনার পরে এই খসড়া তৈরি হয় এবং তিনি বেশিরভাগ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন। তবে উমেরভ বলেছেন, তিনি পরিকল্পনার অনুমোদন দেননি এবং এখনও ‘সহযোগী দেশগুলোর প্রস্তাব মনোযোগ দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে’। জেলেনস্কি প্রকাশ্যে এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেননি। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্প ও তার দলের উদ্যোগকে আমরা মূল্য দিই।’ তার অফিস জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে এই প্রস্তাব কূটনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। জেলেনস্কি শিগগিরই ট্রাম্পের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘কিছু নতুন তথ্য দেখছি, কিন্তু এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাইনি। এসব বিষয়ে কোনো গঠনমূলক আলোচনা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ‘শান্তি আলোচনা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত’। রাশিয়ার মতে, কোনও চুক্তিতে ‘সংঘর্ষের মূল কারণ’ সমাধান করতে হবে—যা কিয়েভের কাছে আত্মসমর্পণের মতো শোনায়। অন্যদিকে, ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অগ্রগতি না হওয়ায় রাশিয়ার দুটি বড় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে, যেখানে রাশিয়া আর কোনও এলাকা দখল করতে পারবে না। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কালাস বলেন, পরিকল্পনা খসড়া তৈরিতে ইউরোপ অংশগ্রহণ করেনি। তার মতে, ‘কোনো পরিকল্পনা সফল করতে হলে ইউক্রেন ও ইউরোপকে সঙ্গে নিতে হবে।’ জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা নয়, বরং ‘বিষয় ও বিকল্পের তালিকা’। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়র স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎস জেলেনস্কির সঙ্গে খসড়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। এই খসড়ায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার ৬ লাখে সীমিত রাখা, কিছু অস্ত্র পরিত্যাগ করা এবং পোল্যান্ডে ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান মোতায়েনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইউক্রেনকে ‘বিশ্বস্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে, তবে বিস্তারিত জানা যায়নি। ন্যাটো বিস্তার না করা এবং রাশিয়া পাশের দেশগুলোতে আক্রমণ করবে না—এমন প্রত্যাশার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ফিরিয়ে আনা এবং জি৭-এ আবার যোগ দেওয়ার পথ খোলা রাখা যেতে পারে। মার্কিন প্রস্তাবের খবর শুনে ইউক্রেনের মানুষের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট—অনেকে মনে করছেন এটি শান্তি নয়, বরং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা। কিয়েভে এক শহীদ সেনার স্ত্রী বলেন, ‘এটা শান্তি পরিকল্পনা নয়, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা।’ দখলকৃত অঞ্চল থেকে এক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রচারণার মাঝে মানসিকভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছি। আশা করি এমন কোনো চুক্তি হবে না।’ জাপোরিঝঝিয়ায় এক ইউক্রেনীয় সেনা বলেন, ইউক্রেন একাই যুদ্ধ থামাতে না পারলে ইউরোপের উচিত এগিয়ে আসা। সূত্র: বিবিসি


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা এখনও হাতে পায়নি রাশিয়া

আপডেট সময় ০৯:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে এখনো তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পায়নি। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, তিনি যুদ্ধ শেষ করতে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ভিশন’ নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। মার্কিন পরিকল্পনার খসড়া অনুযায়ী পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকাকে রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে, সেনাবাহিনী কমাতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার মতো শর্ত রয়েছে—যা কিয়েভ আগে থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এসব শর্ত রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, রুশ হামলায় বৃহস্পতিবার রাতে জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে পাঁচজন এবং দিনিপ্রোপেত্রোভ্স্কে একজন নিহত হয়েছেন। অঞ্চলটিতে রাশিয়া সামান্য অগ্রগতি দাবি করেছে, আর কিয়েভ অভ্যন্তরীণভাবে ১০০ মিলিয়ন ডলার দুর্নীতির কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শান্তি-পরিকল্পনা তৈরিতে ইউক্রেনকে বাদ দেওয়া হয়নি। এক মার্কিন কর্মকর্তার ভাষ্য, জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা রুস্তেম উমেরভের সঙ্গে আলোচনার পরে এই খসড়া তৈরি হয় এবং তিনি বেশিরভাগ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন। তবে উমেরভ বলেছেন, তিনি পরিকল্পনার অনুমোদন দেননি এবং এখনও ‘সহযোগী দেশগুলোর প্রস্তাব মনোযোগ দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে’। জেলেনস্কি প্রকাশ্যে এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেননি। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্প ও তার দলের উদ্যোগকে আমরা মূল্য দিই।’ তার অফিস জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে এই প্রস্তাব কূটনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। জেলেনস্কি শিগগিরই ট্রাম্পের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘কিছু নতুন তথ্য দেখছি, কিন্তু এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাইনি। এসব বিষয়ে কোনো গঠনমূলক আলোচনা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ‘শান্তি আলোচনা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত’। রাশিয়ার মতে, কোনও চুক্তিতে ‘সংঘর্ষের মূল কারণ’ সমাধান করতে হবে—যা কিয়েভের কাছে আত্মসমর্পণের মতো শোনায়। অন্যদিকে, ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অগ্রগতি না হওয়ায় রাশিয়ার দুটি বড় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে, যেখানে রাশিয়া আর কোনও এলাকা দখল করতে পারবে না। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কালাস বলেন, পরিকল্পনা খসড়া তৈরিতে ইউরোপ অংশগ্রহণ করেনি। তার মতে, ‘কোনো পরিকল্পনা সফল করতে হলে ইউক্রেন ও ইউরোপকে সঙ্গে নিতে হবে।’ জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা নয়, বরং ‘বিষয় ও বিকল্পের তালিকা’। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়র স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎস জেলেনস্কির সঙ্গে খসড়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। এই খসড়ায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার ৬ লাখে সীমিত রাখা, কিছু অস্ত্র পরিত্যাগ করা এবং পোল্যান্ডে ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান মোতায়েনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইউক্রেনকে ‘বিশ্বস্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে, তবে বিস্তারিত জানা যায়নি। ন্যাটো বিস্তার না করা এবং রাশিয়া পাশের দেশগুলোতে আক্রমণ করবে না—এমন প্রত্যাশার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ফিরিয়ে আনা এবং জি৭-এ আবার যোগ দেওয়ার পথ খোলা রাখা যেতে পারে। মার্কিন প্রস্তাবের খবর শুনে ইউক্রেনের মানুষের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট—অনেকে মনে করছেন এটি শান্তি নয়, বরং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা। কিয়েভে এক শহীদ সেনার স্ত্রী বলেন, ‘এটা শান্তি পরিকল্পনা নয়, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা।’ দখলকৃত অঞ্চল থেকে এক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রচারণার মাঝে মানসিকভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছি। আশা করি এমন কোনো চুক্তি হবে না।’ জাপোরিঝঝিয়ায় এক ইউক্রেনীয় সেনা বলেন, ইউক্রেন একাই যুদ্ধ থামাতে না পারলে ইউরোপের উচিত এগিয়ে আসা। সূত্র: বিবিসি


প্রিন্ট