ভারতের বিহার রাজ্যে স্তন্যদানকারী মােদের বুকের দুধে বিপজ্জনক মাত্রায় ইউরেনিয়াম (U-238) অন্বেষণ করা হয়েছে। একাধিক গবেষণা সংস্থার যৌথ সমীক্ষায় এই উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। গবেষকরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৪০ জন মােদের দুধের নমুনা সংগ্রহ করেন। পরীক্ষার ফলাফলে প্রতিটি নমুনায়ই ইউরেনিয়াম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খাগড়িয়া জেলায় সর্বোচ্চ গড় মাত্রা এবং কাটিহার জেলায় ব্যক্তিগতভাবে সর্বোচ্চ মাত্রা শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিশ্লেষণে দেখা গেছে—এই ইউরেনিয়াম শরীরে প্রবেশের ফলে শিশুদের মধ্যে ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে ক্যানসারসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিশুদের দেহ থেকে ইউরেনিয়াম নির্গমন করতে সক্ষমতা কম হওয়ায় তারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এই সংস্পর্শে কিডনির ক্ষতি, স্নায়বিক বিকাশে বাধা, বুদ্ধিমত্তা হ্রাস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে বলে গবেষকরা উল্লেখ করেছেন। গবেষণার সহ-লেখক দিল্লির আমেরিকান মেডিকেল সেন্টার (এমসিসি) থেকে ডা. অশোক শর্মা বলেন, ঝুঁকি থাকলেও মোটামুটি মাত্রা এখনও সহনীয় সীমার নিচে রয়েছে। মায়ের শরীরে শোষিত ইউরেনিয়ামের বেশিরভাগই প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়, ফলে দুধে এর ঘনত্ব তুলনামূলক কম থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বুকের দুধ বন্ধ করা উচিত নয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ইউরেনিয়াম একটি প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় উপাদান, যা শিলা ও মাটিতে থাকা। তবে খননকাজ, কয়লা পোড়ানো, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্গমন এবং ফসফেট সার ব্যবহারের কারণে এটি ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে যেতে পারে। বর্তমানে ভারতের অন্তত ১৫১টি জেলায় ১৮টি রাজ্যের ভূগর্ভস্থ পানিতে ইউরেনিয়াম দূষণের তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ভবিষ্যতে মাতৃদুগ্ধে কীটনাশক ও অন্যান্য পরিবেশ দূষকের উপস্থিতি নিয়েও আরও গবেষণা চলবে, যাতে শিশুদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।