যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন জানিয়েছে, জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় দুই দেশ একটি ‘অপডেটেড ও সংশোধিত শান্তি কাঠামো’ প্রণয়ন করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। রোববার প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় জেনেভার বৈঠকটি ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও উল্লেখ করেন, এই পরিকল্পনায় ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হয়েছে, তবে রাশিয়ার কাছে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেওয়ার আগে এখনও কিছু কাজ সম্পন্ন করতে হবে। গত সপ্তাহে ফাঁস হওয়া এই পরিকল্পনার খসড়া রাশিয়া সতর্কতার সাথে স্বাগত জানালেও ইউক্রেন ও ইউরোপের নেতারা সমালোচনা করেছেন, কারণ তাদের দৃষ্টিতে তা ক্রেমলিনের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার বলেন, জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন বৈঠকের ফলাফল নিয়ে তারা এখনও কোনো তথ্য পাননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টিম ‘আমাদের বক্তব্য শুনছে’—এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সোমবার সুইডেনের সংসদে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এটি ইউক্রেনের জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’। জেলেনস্কি বলেন, ‘পুতিন যা দখল করেছেন, তার আইনগত স্বীকৃতি চায়। ভূখণ্ডের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের নীতি ভেঙে দিতে চায়। এটিই মূল সমস্যা।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট শুধু ইউক্রেনের নয়, পুরো বিশ্বের কাছ থেকেও এই স্বীকৃতি পেতে চান। তিনি জানান, আলোচনায় ইউক্রেন ‘সংবেদনশীল বিষয়গুলো’—বিশেষ করে সব যুদ্ধবন্দিকে মুক্ত করার দাবিসহ—টেবিলে তুলতে সক্ষম হয়েছে। তবে ‘বাস্তব শান্তি’ প্রতিষ্ঠার জন্য এখনো আরও কাজ বাকি। রোববার রাতের আলোচনায় রুবিও বলেন, মূল লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফা পরিকল্পনা নিয়ে মতপার্থক্য কমানো—এবং তারা এতে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ অর্জন করেছেন। তবে যেকোনো চূড়ান্ত প্রস্তাব রাশিয়ার সামনে দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টদের অনুমোদন নিতে হবে। অন্যদিকে, বৈঠকের অগ্রগতি সংক্রান্ত খবর আসার কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার জন্য ‘শূন্য কৃতজ্ঞতা’ দেখাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ইউরোপ এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে—যা ক্রেমলিনের যুদ্ধের অর্থায়নের মূল উৎস। ইউরোপীয় নেতারাও বলছেন, জেনেভার বৈঠকে কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে আরও কাজ বাকি। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব বলেন, ‘বৈঠকের অগ্রগতি হয়েছে, তবে এখনো বড় কিছু প্রশ্ন অমীমাংসিত।’ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় নেওয়া হবে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল জানান, এই বৈঠকটি ইউরোপের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য’, কারণ ইইউ ও ন্যাটো সম্পর্কিত বিতর্কগুলো পরিকল্পনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার ভাষায়, ‘ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয়দের ওপর দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।’ ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্তাও জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন ও ইউরোপের স্বার্থে শান্তি আলোচনায় ঐক্যবদ্ধ ইইউর অবস্থান অত্যন্ত জরুরি।’ অন্যদিকে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতৃত্বে ইউরোপীয় দেশগুলো যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি বিকল্প পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছে। তবে বিবিসি এটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি, এবং রুবিওও এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।