ভ্লাদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সাথে লড়াই শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তির কাঠামো অগ্রসর করতে তিনি প্রস্তুত। একই সঙ্গে তিনি জানান, এই পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলোচনা করবেন এবং তাতে ইউরোপীয় সহযোগীরাও অংশ নেবে। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি উদ্যোগের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইউক্রেনের উদ্বেগ, রাশিয়ার শর্ত মানতে তাদের উপর চাপ বাড়তে পারে—বিশেষ করে ভূখণ্ড ছাড়ার মতো কঠিন বিষয়ে। ইউরোপীয় সহযোগীদের সাথে এক বক্তব্যে (যার অনুলিপি রয়টার্স দেখেছে) জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যাবে না। তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোকে ‘বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা বাহিনী’ পাঠানোর জন্য একটি কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেনের নিরাপত্তা, এবং ইউরোপকে বাদ দিয়ে ইউরোপের নিরাপত্তা—এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় না। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরাসরি অংশগ্রহণে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।’ ট্রাম্প গত সপ্তাহে শান্তি আলোচনায় দ্রুত অগ্রগতি জন্য সময়সীমা দিয়েছিলেন, তবে মঙ্গলবার তা কিছুটা শিথিল করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার জন্য সময়সীমা হলো—যখন যুদ্ধ শেষ হবে। সবাই যুদ্ধের ক্লান্তি অনুভব করছে।’ মস্কো-কিয়েভে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের আলাদা বৈঠক মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, আলোচনা এখনো কিছু অপ্রত্যাশিত বিষয় নিয়ে বিতর্কিত। তিনি তার বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফকে মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এবং সেনাবাহিনীর প্রধান ড্যান ড্রিসকলকে কিয়েভে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইউক্রেন বলছে, ভূখণ্ড ছাড়ার বিষয়টি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতে, এত সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে আপস করা সহজ নয়। এরই মধ্যে, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় কিয়েভে সাতজন নিহত এবং শহরের বিদ্যুৎ ও তাপ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা প্রধান রুস্তেম উমেরভ জানিয়েছেন, জেলেনস্কি শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে সফরে যেতে পারেন চূড়ান্ত আলোচনার জন্য। তবে মার্কিন পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত হয়নি। জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের আলোচনার পরে আবুধাবিতে রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন ড্রিসকল। ইউক্রেন জানায়, তারা মূল কাঠামোতে নীতিগতভাবে রাজি, তবে কিছু সংবেদনশীল বিষয় দুই প্রেসিডেন্টের আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, সম্ভাব্য শান্তির চুক্তির খবরের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কিছুটা কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বড় ধরনের ওঠানামা দেখা গেছে। আগস্টে আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক ইউক্রেন ও ইউরোপে উদ্বেগ সৃষ্টি করলেও পরে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ায়। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাবটি সবাইকে অবাক করে দেয়—কারণ এতে ইউক্রেনের বেশি ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে, সামরিক সক্ষমতা সীমিত করতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সুযোগ চিরতরে বন্ধ হবে—যা ইউক্রেন ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবে দেখছে। রাশিয়ার ক্রমাগত হামলা ও সাম্প্রতিক দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে মন্ত্রিসভার দুই সদস্য বরখাস্ত হওয়ায় জেলেনস্কির ওপর চাপ আরও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার আক্রমণের মুখে ইউক্রেনকে ছাড় দেওয়া কঠিন হবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সতর্ক করে বলেছেন, শান্তি প্রস্তাবটি অবশ্যই আলাস্কা বৈঠকে ট্রাম্প-পুতিনের বোঝাপড়ার ‘আত্মা ও বর্ণনা’ বজায় রাখতে হবে। তা না হলে রাশিয়ার জন্য পরিস্থিতি ‘সম্পূর্ণ ভিন্ন’ হয়ে উঠবে। সূত্র: রয়টার্স