পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতাকর্মী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তার সঙ্গে বারবার দেখা করার জন্য তার বোনরা আবেদন করলেও অনুমতি দেওয়া হয়নি। আদিয়ালা কারাগারের বাইরে তাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার পরে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি ওঠে যে, ইমরান খান কারাগারে মারা গেছেন। এই খবর শুনে তার সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে পুরো পাকিস্তান উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আদিয়ালা কারাগার এলাকায় হাজার হাজার পিটিআই নেতা-কর্মী জমায়েত হয়েছেন। ২০২৩ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির এই কারাগারে বন্দি রয়েছেন ইমরান খান। সম্প্রতি তার সঙ্গে সাক্ষাতের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে শেহবাজ শরিফের সরকার। ইমরান খানের তিন বোন— নরীন খান, আলিমা খান এবং উজমা খান অভিযোগ করেন, তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাদের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। গত মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে দলের নেতাকর্মীসহ তারা কারাগারের সামনে জড়ো হয়। কিন্তু তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। পিটিআই বলেছে, খানের তিন বোন ও সমর্থকদের কারাগার বাইরে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ হামলা চালায়। পুলিশ নৃশংসভাবে তাদের মারধর করে। দলটি অভিযোগ করে, ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি করাই ছিল তাদের অপরাধ। এই ঘটনায় ইমরানের তিন বোন ও সমর্থকদের ওপর পুলিশি হামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে পিটিআই। পাঞ্জাব পুলিশের প্রধান উসমান আনোয়ারের কাছে লেখা এক চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে ‘নৃশংস ও পরিকল্পিত’ হামলা চালিয়েছে। নরীন খান বলেন, আমরা তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা রাস্তা অবরোধ করিনি, জনসাধারণের চলাচলে বাধা দিইনি। এমনকি বেআইনি কোনো কাজও করিনি। এর পরই কারাগারের সামনে স্ট্রিটলাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর পাঞ্জাব পুলিশের সদস্যরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। নরীন খান বলেন, আমার বয়স ৭১ বছর। আমাকে চুল ধরে টেনে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। রাস্তার ওপর ফেলে মারধর করা হয়। সেখানে থাকা অন্য নারীদেরও মারধর ও টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। পিটিআইয়ের দাবি, ইমরান খানকে একেবারে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় একক কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ইমরান খানের একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, বই ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না। আইনজীবী খালিদ ইউসুফ চৌধুরী বলেন, এখানে জঙ্গলের শাসন চলছে; যেখানে শাসন করে, কেবল তারই অধিকার রয়েছে। অন্য কারও কোনো অধিকার নেই। তবে কারা কর্তৃপক্ষ ইমরান খানের মৃত্যুর গুজব অস্বীকার করেছে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তিনি ‘কারাগারে সুস্থ আছেন’। কারা কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেন, তার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে গুজব ‘অবৈধ’। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, পিটিআই প্রধান চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি।