, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

বিহারে ‘চুরির অপবাদে’ মারধরে আহত মুসলিম ব্যবসায়ীর মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ৪ ঘন্টা আগে
  • / ১ বার পড়া হয়েছে

ভারতের বিহারে এক ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে মারধর করার ফলে মোহাম্মদ আতহার হুসাইন (৪০) নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহতের পরিবারের দাবি, তাকে চুরির অভিযোগে নিরীহভাবে পেটানো হয়। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নিহত মোহাম্মদ আতহার হুসাইন নালন্দা জেলার গগন দিওয়ান এলাকার একজন কাপড় ব্যবসায়ী। গত ১২ ডিসেম্বর পওয়াপুরি সরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনায় বিহার পুলিশের পক্ষ থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ ডিসেম্বর আতহার হুসাইনের স্ত্রী শবনম পারভীন মামলা দায়ের করেন। এফআইআর-এ তিনি ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছেন, যারা তার স্বামীকে চুরির অপবাদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মারধর করে। নিহতের ভাই মোহাম্মদ শাকিব জানান, আতহার হুসাইন নওয়াদা জেলার রোহ থানার মুরুই গ্রামে থাকতেন। সেখানে তিনি সাইকেলে কাপড় বিক্রি করে পরিবারে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শাকিব বলেন, ‘৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যার প্রায় ৭টার দিকে আতহার বাড়ি ফেরার সময় তার সাইকেলের টায়ার পাংচার হয়ে যায়। ভট্টাপুর গ্রামের কাছে তিনি কয়েকজনকে আগুনের পাশে বসে থাকতে দেখে সাহায্য চাইতে যান। তারা তার নাম জানতে চাইলে, আতহার হুসাইন নাম শুনে পোড়া কাঠ দিয়ে মারধর শুরু করে। পরে তার কানের অংশ, পা ও আঙুল কেটে ফেলা হয়। তাকে একটি ঘরে টেনে নিয়ে মাথা ও বুকে মারধর করা হয়। লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয় এবং প্রস্রাবনালীতেও ঢুকানো হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেটানোর পরে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন এবং মধ্যরাতে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হয়।’ পরে প্রথমে তাকে স্থানীয় রোহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, এরপর নওয়াদা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পওয়াপুরিতে রেফার করা হয়, যেখানে তিনি মারা যান। শবনম পারভীন জানান, তার স্বামীকে ধর্ম বিষয়ক প্রশ্ন করার পর মারধর করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তিনি। আমার তিন ছোট সন্তান রয়েছে। এখন আমি কীভাবে তাদের দেখাশোনা করব? এইভাবে তাকে মারধর করা হয়েছে, পশুদেরও এ ধরনের মারধর হয় না। সব দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।’ নওয়াদা পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট অভিষেক ধীমন বলেন, ‘ঘটনার গুরুত্বের কারণে সদর এসডিপিও নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরে তদন্তের ভিত্তিতে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন পর্যন্ত মোট আটজন গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ অপরদিকে এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মুখপাত্র এজাজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘হোম মিনিস্টার সম্রাট চৌধুরী প্রায়শই আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে আলোচনা করেন, কিন্তু বাস্তবে ধর্ম ও জাতের ভিত্তিতে অপরাধের ঘটনা ঘটছে এবং মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে মারা হচ্ছে।’


প্রিন্ট
ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

বিহারে ‘চুরির অপবাদে’ মারধরে আহত মুসলিম ব্যবসায়ীর মৃত্যু

আপডেট সময় ৪ ঘন্টা আগে

ভারতের বিহারে এক ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে মারধর করার ফলে মোহাম্মদ আতহার হুসাইন (৪০) নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহতের পরিবারের দাবি, তাকে চুরির অভিযোগে নিরীহভাবে পেটানো হয়। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নিহত মোহাম্মদ আতহার হুসাইন নালন্দা জেলার গগন দিওয়ান এলাকার একজন কাপড় ব্যবসায়ী। গত ১২ ডিসেম্বর পওয়াপুরি সরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনায় বিহার পুলিশের পক্ষ থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ ডিসেম্বর আতহার হুসাইনের স্ত্রী শবনম পারভীন মামলা দায়ের করেন। এফআইআর-এ তিনি ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছেন, যারা তার স্বামীকে চুরির অপবাদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মারধর করে। নিহতের ভাই মোহাম্মদ শাকিব জানান, আতহার হুসাইন নওয়াদা জেলার রোহ থানার মুরুই গ্রামে থাকতেন। সেখানে তিনি সাইকেলে কাপড় বিক্রি করে পরিবারে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শাকিব বলেন, ‘৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যার প্রায় ৭টার দিকে আতহার বাড়ি ফেরার সময় তার সাইকেলের টায়ার পাংচার হয়ে যায়। ভট্টাপুর গ্রামের কাছে তিনি কয়েকজনকে আগুনের পাশে বসে থাকতে দেখে সাহায্য চাইতে যান। তারা তার নাম জানতে চাইলে, আতহার হুসাইন নাম শুনে পোড়া কাঠ দিয়ে মারধর শুরু করে। পরে তার কানের অংশ, পা ও আঙুল কেটে ফেলা হয়। তাকে একটি ঘরে টেনে নিয়ে মাথা ও বুকে মারধর করা হয়। লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয় এবং প্রস্রাবনালীতেও ঢুকানো হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেটানোর পরে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন এবং মধ্যরাতে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হয়।’ পরে প্রথমে তাকে স্থানীয় রোহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, এরপর নওয়াদা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পওয়াপুরিতে রেফার করা হয়, যেখানে তিনি মারা যান। শবনম পারভীন জানান, তার স্বামীকে ধর্ম বিষয়ক প্রশ্ন করার পর মারধর করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তিনি। আমার তিন ছোট সন্তান রয়েছে। এখন আমি কীভাবে তাদের দেখাশোনা করব? এইভাবে তাকে মারধর করা হয়েছে, পশুদেরও এ ধরনের মারধর হয় না। সব দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।’ নওয়াদা পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট অভিষেক ধীমন বলেন, ‘ঘটনার গুরুত্বের কারণে সদর এসডিপিও নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরে তদন্তের ভিত্তিতে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন পর্যন্ত মোট আটজন গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ অপরদিকে এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মুখপাত্র এজাজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘হোম মিনিস্টার সম্রাট চৌধুরী প্রায়শই আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে আলোচনা করেন, কিন্তু বাস্তবে ধর্ম ও জাতের ভিত্তিতে অপরাধের ঘটনা ঘটছে এবং মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে মারা হচ্ছে।’


প্রিন্ট