, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নওগাঁয় ভুয়া পুলিশ চক্রের ৪জন গ্রেপ্তার Logo জামায়াতের আমিরের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ Logo নওগাঁয় ব্যতিক্রমীভাবে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্যজীবী সমাবেশ নৌকাবাইচ ও হাঁস খেলা Logo আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা: নওগাঁয় প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্টিত জেলায় এ বছর ৮৮১টি মন্ডপে শারদ উৎসব পালিত হবে Logo নওগাঁয় সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন Logo এ বিজয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর Logo জাবিতে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনৈতিক চর্চা বন্ধ করব Logo জাবিতে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনৈতিক চর্চা বন্ধ করব Logo এ বিজয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর Logo জাবিতে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনৈতিক চর্চা বন্ধ করব
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়
জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত নওগাঁর কলেজ ছাত্র মাহফুজ আলম শ্রাবন

শেখ হাসিনা বিদায়ের আনন্দ মিছিলে গিয়ে মা জানলেন তার ছেলে শ্রাবন ও দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৩:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৯২ বার পড়া হয়েছে

জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ (পালানোর) করার খবরে নওগাঁয় আনন্দ মিছিল বের হয়। কিন্তু এই আনন্দ মিছিলে অংশ নেওয়া এক মা হঠাৎ জানতে পারেন, তার কলেজপড়ুয়া ছেলে মাহফুজ আলম শ্রাবন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।

ঢাকার মিরপুর-২ এ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে গত ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কলেজ ছাত্র মাহফুজ আলম শ্রাবন। শ্রাবনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই আনন্দ মিছিল মুহূর্তে শোকের মিছিলে রূপ নেয়। সন্তান হারানোর বেদনায় শোকাহত মা রাস্তায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও থামেনি শ্রাবনের মায়ের কান্না।

শহীদ শ্রাবনের মা বেবি নাজনীন জানান, তাদের বাড়ি নওগাঁ শহরতলীর দোগাছী গ্রামে। এইচএসসি পাস করে ভালো কলেজে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলেন শ্রাবন। তার স্বপ্ন ছিলো ভালো ক্রিকেটার হওয়া; না হলে চাকরি করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা, বাবা-মাকে হজ করানো। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ স্বপ্নই রয়ে গেছে।

পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় শ্রাবন পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি করতেন। এ সময় তিনি জড়িয়ে পড়েন জুলাই আন্দোলনে। মিরপুর ১০ নম্বরে তিনি নিয়মিত মিছিল ও সভায় অংশ নিতেন। ৫ আগস্ট মিরপুর ২ নম্বর থানার সামনে পুলিশের গুলিতে আহত ছাত্র জনতাকে উদ্ধারের সময় বিকেল পৌনে ৩টার দিকে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।

শ্রাবনের ভাই শফিকুর রহমান বাপ্পী জানান, ৬ আগস্ট গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে শ্রাবনকে দাফন করা হয়। শ্রাবন হত্যার ঘটনায় একটি মামলা ট্রাইব্যুনালে চলমান রয়েছে। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাসহ ৪০০ জনকে আসামি করে সিএমএসএস আদালতে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

শ্রাবনসহ নওগাঁর নিহত ৯ জনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বনবিভাগ, বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহরের মুক্তির মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ৯টি করে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। এছাড়া নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের নওহাটার মোড়ে গোলচত্ত্বরের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ মাহফুজ চত্ত্বর’ হিসেবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহরতলীর ইয়াদালি মোড়ের নামকরণ ‘শহীদ শ্রাবন চত্ত্বর’ করার দাবিও জানানো হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নওগাঁর ছাত্রনেতা ফজলে রাব্বী শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও খুনিদের বিচার দাবি করেছেন। এনসিপি নওগাঁর সদস্য মাহবুব আলম সোহাগও একই দাবি জানিয়েছেন।

শ্রাবনের মা বেবি নাজনীন বলেন, “আমার ছেলে শ্রাবন দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। আমি শুধু শ্রাবন নয়, দেশের সব শহীদের ন্যায্য বিচার চাই।”

জুলাই অভ্যুত্থানে নওগাঁর ৯ শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তার বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনে সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। আহতদের স্বাস্থ্য কার্ড প্রদানসহ অন্যান্য সহায়তার প্রক্রিয়া চলছে।


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত নওগাঁর কলেজ ছাত্র মাহফুজ আলম শ্রাবন

শেখ হাসিনা বিদায়ের আনন্দ মিছিলে গিয়ে মা জানলেন তার ছেলে শ্রাবন ও দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন

আপডেট সময় ০৩:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ (পালানোর) করার খবরে নওগাঁয় আনন্দ মিছিল বের হয়। কিন্তু এই আনন্দ মিছিলে অংশ নেওয়া এক মা হঠাৎ জানতে পারেন, তার কলেজপড়ুয়া ছেলে মাহফুজ আলম শ্রাবন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।

ঢাকার মিরপুর-২ এ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে গত ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কলেজ ছাত্র মাহফুজ আলম শ্রাবন। শ্রাবনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই আনন্দ মিছিল মুহূর্তে শোকের মিছিলে রূপ নেয়। সন্তান হারানোর বেদনায় শোকাহত মা রাস্তায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও থামেনি শ্রাবনের মায়ের কান্না।

শহীদ শ্রাবনের মা বেবি নাজনীন জানান, তাদের বাড়ি নওগাঁ শহরতলীর দোগাছী গ্রামে। এইচএসসি পাস করে ভালো কলেজে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলেন শ্রাবন। তার স্বপ্ন ছিলো ভালো ক্রিকেটার হওয়া; না হলে চাকরি করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা, বাবা-মাকে হজ করানো। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ স্বপ্নই রয়ে গেছে।

পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় শ্রাবন পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি করতেন। এ সময় তিনি জড়িয়ে পড়েন জুলাই আন্দোলনে। মিরপুর ১০ নম্বরে তিনি নিয়মিত মিছিল ও সভায় অংশ নিতেন। ৫ আগস্ট মিরপুর ২ নম্বর থানার সামনে পুলিশের গুলিতে আহত ছাত্র জনতাকে উদ্ধারের সময় বিকেল পৌনে ৩টার দিকে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।

শ্রাবনের ভাই শফিকুর রহমান বাপ্পী জানান, ৬ আগস্ট গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে শ্রাবনকে দাফন করা হয়। শ্রাবন হত্যার ঘটনায় একটি মামলা ট্রাইব্যুনালে চলমান রয়েছে। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাসহ ৪০০ জনকে আসামি করে সিএমএসএস আদালতে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

শ্রাবনসহ নওগাঁর নিহত ৯ জনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বনবিভাগ, বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহরের মুক্তির মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ৯টি করে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। এছাড়া নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের নওহাটার মোড়ে গোলচত্ত্বরের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ মাহফুজ চত্ত্বর’ হিসেবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহরতলীর ইয়াদালি মোড়ের নামকরণ ‘শহীদ শ্রাবন চত্ত্বর’ করার দাবিও জানানো হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নওগাঁর ছাত্রনেতা ফজলে রাব্বী শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও খুনিদের বিচার দাবি করেছেন। এনসিপি নওগাঁর সদস্য মাহবুব আলম সোহাগও একই দাবি জানিয়েছেন।

শ্রাবনের মা বেবি নাজনীন বলেন, “আমার ছেলে শ্রাবন দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। আমি শুধু শ্রাবন নয়, দেশের সব শহীদের ন্যায্য বিচার চাই।”

জুলাই অভ্যুত্থানে নওগাঁর ৯ শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তার বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনে সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। আহতদের স্বাস্থ্য কার্ড প্রদানসহ অন্যান্য সহায়তার প্রক্রিয়া চলছে।


প্রিন্ট