বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গবাদিপশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের বিস্তার ঘটেছে, ফলে রোগটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জরুরি কার্যক্রম শুরু করেছে। রোববার (৫ অক্টোবর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অ্যানথ্রাক্স একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত জুনোটিক রোগ, যা গবাদিপশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও প্রশাসনের সহযোগিতায় গবাদিপশুর টিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উঠান বৈঠক, পথসভা, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদিপশুর তড়কা রোগ প্রতিরোধে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে আক্রান্ত এলাকা মনিটরিং, অসুস্থ পশু জবাইয়ের প্রতিরোধ এবং খামারের প্রতিটি পশুকে টিকার আওতায় আনার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘ওয়ান হেলথ’ কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে জনসচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করছেন— অসুস্থ পশু জবাই না করা, মৃত পশুকে খোলা স্থানে বা পানিতে না ফেলা, বরং গভীরে মাটি চাপা দেওয়া এবং যেকোনো পশুজনিত অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত নিকটস্থ ভেটেরিনারি হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাকে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শীঘ্রই প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে প্রায় ৩০ লাখ অ্যানথ্রাক্স টিকা সরবরাহ করবে, যার মধ্যে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাতেই ২০ লাখ টিকা বিতরণ করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রংপুর জেলার নয়টি উপজেলায় মোট ১,৬৭,০০০ গরুকে টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া উঠান বৈঠক, পথসভা এবং প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৩৬টি কসাইখানায় গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স টিকা দেওয়ার জন্য ৩২টি মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬,৪০০ গরুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গরু পুঁতে ফেলা, টিকাদান, মাইকিং, উঠান বৈঠক এবং লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৫,০০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ৫টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া, ১১টি রক্তের নমুনা পরীক্ষায় সবগুলো নেগেটিভ পাওয়া গেলেও সংগৃহীত ১১টি মাংসের নমুনার মধ্যে ১০টি পজিটিভ এসেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে, যা আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।