বড়পুকুরিয়ায় খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া
ফুলবাড়ীতে শিশু পার্ক উদ্বোধন
আমি চাই ও আমার হাত ছেড়ে দিক
চীনের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের
টিকটকে উসকানিমূলক ভিডিও, আ.লীগ নেত্রী সুলতানা আটক
শুরু হলো মহান বিজয়ের মাস
সেন্টমার্টিনে আজ থেকে রাতযাপনের সুযোগ, মানতে হবে যেসব শর্ত
বাবা-ভাইদের হাতে প্রেমিকের মৃত্যু, মরদেহকেই ‘বিয়ে’ তরুণীর
পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শ্রমিককে হত্যার অভিযোগ
নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে ফের জটিলতা
ঢাকা–বেইজিং সম্পর্ক তৃতীয় পক্ষের নির্দেশনায় হবে না: চীনা রাষ্ট্রদূত
- আপডেট সময় ১০:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৫ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা–বেইজিং সম্পর্ক কোনও তৃতীয় পক্ষের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে না বলে স্পষ্ট করেছেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশ–চীন সম্পর্ক: অগ্রগতির পথ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। এই আলোচনা আয়োজন করে সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসেডরস (এওএফএ)। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূতগণ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
গত ৫০ বছরে পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পথে চলায় চীন একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে সহযোগিতা করতে চায়। সার্কের অকার্যকরতা বাংলাদেশের, চীন ও পাকিস্তানের ত্রিদেশীয় সুসম্পর্ক এই অঞ্চলের উন্নয়নে নতুন দিক দেখাবে।’
মার্কিন উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল পররাষ্ট্রনীতি আমি প্রশংসা করি। এই নীতি বাংলাদেশের অতীতের সরকারগুলোর অনুসরণ। বাংলাদেশ কোনও বিদেশি শক্তির নির্দেশনা অনুসরণ করে না। চীনের অবস্থান হলো, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বকীয় শক্তির ভিত্তিতে নীতি গ্রহণে সমর্থন দেওয়া। আপনাদের কোনও বিদেশি শক্তির নির্দেশনায় পরিচালিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা এই সম্পর্ককে সমর্থন করি।’
চীনের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ–চীন সম্পর্ক জনগণের স্বার্থে। জনগণ বলতে সরকার ও রাজনৈতিক দল বোঝায়। আমি এই বিষয়ে আশাবাদী। গত মার্চে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনে গিয়েছিলেন। এর বাইরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সফর হয়েছে চীনে। এইসব রাজনৈতিক দলের নেতারা আরও কিছু অন্যান্য দলের প্রতিনিধিরাও চীন সফর করেছেন। তারা দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা চান। এই সম্পর্কের শক্তি এখানেই—জনগণের স্বার্থে।’
‘আমরা আরও বলব, এই সম্পর্ক আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়নের জন্য। আমাদের এই সহযোগিতা কোনও তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে নয়। তাই এটি অন্যের দ্বারা পরিচালিত হবে না। নির্বাচনের পরেও বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। এই সম্পর্ক আরও টেকসই হবে। বিদেশি কোনও শক্তির হস্তক্ষেপে এই সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না,’ যোগ করেন তিনি।
চীনের প্রেসিডেন্টের বিশ্বব্যাপী সুশাসন উদ্যোগ (জিজিআই) নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছর সেপ্টেম্বরে সাংহাই কোঅপারেশন সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট জিজিআই ঘোষণা করেছেন। এটি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বিবেচনায় করা হয়েছে। সবাই জানে, এক দেশ তার নীতির মাধ্যমে বিশ্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করছে। এই কারণে দক্ষিণ ও উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনের কাছে যায়। আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষায় বিশ্বকে একত্র করতে চীন ভূমিকা রাখতে চায়। অন্যথায় পুরো বিশ্বের জন্য অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাই জিজিআই প্রস্তাব আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুশাসন জরুরি।’
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ই চীনকে অনুরোধ করেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। তবে এটি একা চীনের পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ এটি অত্যন্ত জটিল বিষয়। অনেক স্টেকহোল্ডার এতে যুক্ত। ২০২৩ সালে যখন প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তখন বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়। কিছু দেশ ও সংস্থা প্রত্যাবাসন চায় না। সকল স্টেকহোল্ডারদের দায়িত্ব নিতে হবে। চীন তার দায়িত্ব পালন করবে।’
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘তিস্তা প্রকল্পের অনুরোধটি ছিল আগের সরকারের (আওয়ামী লীগ)। তারা চীনকে এই প্রকল্পে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমাদের জানা, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের কাছে এই প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আমরা আগের সরকারের কাছে তিস্তা প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। নদীর ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুটি ভাগে প্রকল্পটি ভাগ করা হয়েছিল। প্রথমটি ছিল বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ নির্মাণ, দ্বিতীয়টি ছিল শহরতলির মতো করে গড়ে তোলা, যেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পর্যন্ত এই প্রকল্পের কোনও সাড়া পাইনি। এর কারণও আপনি জানেন। তাই আমাদের ধারণা, এই প্রকল্প বাতিল হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে সুখবর হলো, সেপ্টেম্বরে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে তিস্তা প্রকল্পের নতুন প্রস্তাব পেয়েছি। তারা নতুন করে এই প্রস্তাব দিয়েছে। চীন এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা এতে কাজ করছেন। এই প্রকল্পের মোট খরচ প্রায় ১০০ কোটি ডলার। এটি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে প্রায় সাত থেকে আট বছর।’
বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করছি। অবকাঠামো নির্মাণের আগে বেশ কিছু নথিপত্র স্বাক্ষর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আশা করি, এই বছরের নভেম্বরের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে। এখন পর্যন্ত ৩০টি চীনা প্রতিষ্ঠান ১০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে বলে আশা করি।’
প্রিন্ট


















