প্রাক্তন প্রধান সচিব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল সিদ্দিকী আজ পৃথিবীর কাছে নেই। সোমবার ভোরে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে তিনি পরলোক গমন করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সরকারের একটি বিজ্ঞপ্তিতে তার মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়েছে। সোমবার বাদ আসর গুলশান আজাদ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাক্তন প্রধান সচিব, বিশিষ্ট প্রশাসক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “ড. কামাল সিদ্দিকী ছিলেন প্রশাসন, উন্নয়নচিন্তা ও একাডেমিক গবেষণার একজন উজ্জ্বল তারকা। তিনি একজন সত্, দূরদর্শী ও নিষ্ঠাবান সরকারি কর্মকর্তা, যিনি দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে আধুনিক করার জন্য নিরলস কাজ করেছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও নীতিনির্ধারক হিসেবে তার অবদান জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে।” তিনি আরও বলেন, “আমার সঙ্গে ড. কামাল সিদ্দিকীর দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ছিল। আমরা প্রায়ই দেশের ভবিষ্যৎ, প্রশাসনিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। তিনি ছিলেন নীতিবান, বিনয়ী ও দেশপ্রেমিক মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন প্রিয় বন্ধু ও প্রজ্ঞাবান সহযাত্রীকে হারালাম।” শোকবার্তায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “দেশের দুর্ব্যবহার ও প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির কারণে তাকে বহুবার দেশ ছাড়তে হয়েছে। অন্যায়ভাবে একাধিক মামলায় হয়রানি তাকে সহ্য করতে হয়েছে—এটি ছিল খুবই দুঃখজনক। তবুও তিনি কখনও তার মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম থেকে সরে যাননি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ড. সিদ্দিকী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কিংবদন্তি কর্মকর্তা। তার সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন ছিল অনুকরণীয়। ভাবতে অবাক লাগে যে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে বিএসসি ও এমএসসি করেছেন, এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি লাভ করেছেন। তার জ্ঞানপ্রেম ছিল অদম্য।“ তিনি আরও বলেন, “ড. সিদ্দিকী অসংখ্য গবেষণামূলক বই লিখে তার পাণ্ডিত্যের পরিচয় রেখে গেছেন। তার তিন খণ্ডের আত্মজীবনী বাংলাদেশের সমাজ, মানুষ ও রাষ্ট্রের এক আন্তরিক ও অকপট দলিল। গবেষণামূলক বিভিন্ন গ্রন্থে তিনি তার কৌতূহলী মনোভাবের স্বাক্ষর রেখেছেন।” প্রাক্তন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রধান সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘের শিশু অধিকার কমিটির সদস্য হিসেবে ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে মাস্টার্স ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানান।