, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

সমালোচনার মুখে মাঠে না থাকার ঘোষণা দিলেন সর্ব মিত্র চাকমা

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৩ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবৈধ দোকানপাট, উদ্বাস্তু, ভবঘুরে ও মাদকাসক্তদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলার জন্য কাজ করার কথা জানালেও, সমালোচনার মুখে মাঠে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন সর্ব মিত্র চাকমা। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টে তিনি এই ঘোষণা দেন।

ফেসবুকে তিনি লেখেন, যে বৃদ্ধ ব্যক্তিকে আপনি দেখছেন, আমি শুরু থেকেই এই মানুষটিকে প্রতিরাতে মেট্রো স্টেশন থেকে তুলে আনছি। লোকটি ক্যাম্পাস ছেড়ে যায় না, তার সঙ্গে আরও একজন বৃদ্ধ আছেন, যিনি মাদকাসক্ত। এর আগে এই লোকটির কাছে গাঁজা পাওয়া গিয়েছিল। এই ধরনের মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন, তুলতে গেলে চার পা এগিয়ে যায়। তাই, লাঠিসোঁটা বা ভয় দেখানোর ছাড়া তাদের তোলা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগত স্বার্থে এই কাজ করছি না, আমার উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাসকে ভবঘুরে, পাগল ও গাঁজাখোর মুক্ত করা। আজ আমাদের দুজন নারী শিক্ষার্থী হেনস্থার শিকার হয়েছেন। আমি চাই, এই ভবঘুরে, পাগল ও হেনস্থামুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে।

ডাকসুর এই সদস্য বলেন, তবে, এ ধরনের নিয়মিত বিতর্ক আমার ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করছে। রাতে প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে উচ্ছেদ অভিযান চালানো আমার কাজ নয়, আবার এটি আমার ক্ষমতার মধ্যে পড়ে না বলেও মনে করেন তিনি। আরও বলেন, কিছুদিন আগে তিনজন মাদকাসক্তকে তোলার সময়ও আমাকে বিপত্তি সৃষ্টি করার জন্য পোস্ট করে সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের তাড়ানোর জন্য লাঠি হাতে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না, যারা মাঠে কাজ করেন, তারা জানেন এটি কতটা কঠিন। শেষের দিকে তিনি জানান, একজন সদস্য হিসেবে আমি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে কাজ করবো, তবে আমি মাঠে থাকছি না। ধন্যবাদ। এরপর কিছু সময় পরে তিনি একটি নতুন পোস্টে লেখেন—‘নির্ঘুম রাত কাটছে বেশ কিছুদিন ধরে। হঠাৎ রাতে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে কঠোর সমালোচনা হয়েছে। পাল্টা যুক্তিও এসেছে, প্রমাণ হয়েছে- লোকটা মা দ কসেবী ইত্যাদি। দায়িত্বের জায়গাটা বিশাল, যতটা না কর্তৃত্ব। নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার শিকার হয়ে চোখে পানি এসে যায়, রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে। একজন নারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি কখনোই এই অনুভূতিগুলো বুঝতে পারবেন না। প্রতিরাতে ভাবি, চার-পাঁচটা পাতা উল্টিয়ে ভোট দিয়েছে ১৯৭ নম্বর ব্যালটে, এটা শুধু একটা ক্রসচিহ্ন নয়, কত ভরসা করেছে মানুষ! গতরাত তিনটায় প্রক্টরিয়াল টিমসহ ভবঘুরে তাড়ানোর সময় বেশ কয়েকজন বাইক নিয়ে ভিডিও করে। মানুষের মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব, দলীয় দ্বন্দ্ব বা ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকতে পারে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা! এ জন্য রাজনীতি কেন করতে হবে? রাজনীতি করার অনেক জায়গা রয়েছে। দেখলাম, “অমর একুশে হলের ফুটপাত” বলে পরিচয় না দিয়ে পোস্টদাতা লিখেছেন বার্ন ইন্সটিটিউট, যাতে এটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা বাইরে বলে প্রচার করা যায়। তাহলে কি সে স্ট্র্যাচার ছাড়া হাঁটতে পারে? এবং মানুষকে বশ করতে স্ট্র্যাচার ব্যবহার করে প্রতারণা করে? সে কি লিখেছে, তার মা দ কসেবনের কথা? না, তারা নিরাপত্তা চায় না, রাজনীতি সব। তার ক্লাসের নারী সহপাঠীর নিরাপত্তা নিয়ে তার কিছু যায় আসে না। শব্দগুলো লিখছি আর একেকটি দীর্ঘশ্বাস পড়ছে… এতদূর আসতে চাইনি, যতদূর গেলে সব এলোমেলো হয়ে যাবে, প্রতিনিয়ত শত্রুর সংখ্যা বাড়বে আমার অজান্তে। ভাবছি, সরে দাঁড়াবো। এভাবে আর পারা যায় না… রাজনীতিকদের কিছু মনোভাব সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করাটা বেমানান, আমি পুরোপুরি রাজনীতিক নই বলেই সাহস করে লিখছি।’


প্রিন্ট
ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

সমালোচনার মুখে মাঠে না থাকার ঘোষণা দিলেন সর্ব মিত্র চাকমা

আপডেট সময় ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবৈধ দোকানপাট, উদ্বাস্তু, ভবঘুরে ও মাদকাসক্তদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলার জন্য কাজ করার কথা জানালেও, সমালোচনার মুখে মাঠে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন সর্ব মিত্র চাকমা। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টে তিনি এই ঘোষণা দেন।

ফেসবুকে তিনি লেখেন, যে বৃদ্ধ ব্যক্তিকে আপনি দেখছেন, আমি শুরু থেকেই এই মানুষটিকে প্রতিরাতে মেট্রো স্টেশন থেকে তুলে আনছি। লোকটি ক্যাম্পাস ছেড়ে যায় না, তার সঙ্গে আরও একজন বৃদ্ধ আছেন, যিনি মাদকাসক্ত। এর আগে এই লোকটির কাছে গাঁজা পাওয়া গিয়েছিল। এই ধরনের মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন, তুলতে গেলে চার পা এগিয়ে যায়। তাই, লাঠিসোঁটা বা ভয় দেখানোর ছাড়া তাদের তোলা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগত স্বার্থে এই কাজ করছি না, আমার উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাসকে ভবঘুরে, পাগল ও গাঁজাখোর মুক্ত করা। আজ আমাদের দুজন নারী শিক্ষার্থী হেনস্থার শিকার হয়েছেন। আমি চাই, এই ভবঘুরে, পাগল ও হেনস্থামুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে।

ডাকসুর এই সদস্য বলেন, তবে, এ ধরনের নিয়মিত বিতর্ক আমার ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করছে। রাতে প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে উচ্ছেদ অভিযান চালানো আমার কাজ নয়, আবার এটি আমার ক্ষমতার মধ্যে পড়ে না বলেও মনে করেন তিনি। আরও বলেন, কিছুদিন আগে তিনজন মাদকাসক্তকে তোলার সময়ও আমাকে বিপত্তি সৃষ্টি করার জন্য পোস্ট করে সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের তাড়ানোর জন্য লাঠি হাতে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না, যারা মাঠে কাজ করেন, তারা জানেন এটি কতটা কঠিন। শেষের দিকে তিনি জানান, একজন সদস্য হিসেবে আমি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে কাজ করবো, তবে আমি মাঠে থাকছি না। ধন্যবাদ। এরপর কিছু সময় পরে তিনি একটি নতুন পোস্টে লেখেন—‘নির্ঘুম রাত কাটছে বেশ কিছুদিন ধরে। হঠাৎ রাতে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে কঠোর সমালোচনা হয়েছে। পাল্টা যুক্তিও এসেছে, প্রমাণ হয়েছে- লোকটা মা দ কসেবী ইত্যাদি। দায়িত্বের জায়গাটা বিশাল, যতটা না কর্তৃত্ব। নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার শিকার হয়ে চোখে পানি এসে যায়, রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে। একজন নারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি কখনোই এই অনুভূতিগুলো বুঝতে পারবেন না। প্রতিরাতে ভাবি, চার-পাঁচটা পাতা উল্টিয়ে ভোট দিয়েছে ১৯৭ নম্বর ব্যালটে, এটা শুধু একটা ক্রসচিহ্ন নয়, কত ভরসা করেছে মানুষ! গতরাত তিনটায় প্রক্টরিয়াল টিমসহ ভবঘুরে তাড়ানোর সময় বেশ কয়েকজন বাইক নিয়ে ভিডিও করে। মানুষের মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব, দলীয় দ্বন্দ্ব বা ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকতে পারে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা! এ জন্য রাজনীতি কেন করতে হবে? রাজনীতি করার অনেক জায়গা রয়েছে। দেখলাম, “অমর একুশে হলের ফুটপাত” বলে পরিচয় না দিয়ে পোস্টদাতা লিখেছেন বার্ন ইন্সটিটিউট, যাতে এটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা বাইরে বলে প্রচার করা যায়। তাহলে কি সে স্ট্র্যাচার ছাড়া হাঁটতে পারে? এবং মানুষকে বশ করতে স্ট্র্যাচার ব্যবহার করে প্রতারণা করে? সে কি লিখেছে, তার মা দ কসেবনের কথা? না, তারা নিরাপত্তা চায় না, রাজনীতি সব। তার ক্লাসের নারী সহপাঠীর নিরাপত্তা নিয়ে তার কিছু যায় আসে না। শব্দগুলো লিখছি আর একেকটি দীর্ঘশ্বাস পড়ছে… এতদূর আসতে চাইনি, যতদূর গেলে সব এলোমেলো হয়ে যাবে, প্রতিনিয়ত শত্রুর সংখ্যা বাড়বে আমার অজান্তে। ভাবছি, সরে দাঁড়াবো। এভাবে আর পারা যায় না… রাজনীতিকদের কিছু মনোভাব সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করাটা বেমানান, আমি পুরোপুরি রাজনীতিক নই বলেই সাহস করে লিখছি।’


প্রিন্ট