, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৯:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা নেতা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার (১৭ নভেম্বর) পালিত হচ্ছে। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। ১৮৮০ সালে ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। যদিও সিরাজগঞ্জে তার জন্ম হলেও অধিকাংশ জীবন তিনি কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। এই মাটিতেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তার কৈশোর থেকে তরুণ বয়স পর্যন্ত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশের মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। লাইন-প্রথা দূরীকরণ, জমিদারদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সারাজীবন সাধারণ মানুষের কল্যাণে লড়াই চালিয়ে গেছেন। তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতার পর তার শেষ কীর্তি হিসেবে দেখা যায় ফারাক্কা লং মার্চ। ১৯১১ সালে তিনি মওলানা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগ দেন রাজনীতিতে। ১৯১৭-১৮ সালে তিনি প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে তুরস্কের সহায়তায় ভারতকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা রূপায়ণে রেশমী রুমাল আন্দোলন চালান এবং ১৯১৯ সালে কারাবরণ করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তিনি দেশবন্ধুর স্বরাজ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ১৯২৫ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত তিনি আসাম ও পূর্ব বাংলায় কৃষক-মজুরদের স্বার্থে সংগঠন গঠন করে জমিদার ও সুদখোর মহাজনের বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯২৮ সালে কলকাতায় খিলাফত সম্মেলন এবং ১৯২৯ সালে আসামের ভাসান চরে দ্বিতীয়বারের কৃষক-প্রজা সম্মেলনে যোগ দেন। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ১৯৩৬ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। আসামের প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি হন। ১৯৩৭ সালে আসামে লাইন প্রথার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং আসাম প্রদেশ পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের ৫ মার্চ আসামে আন্দোলনের ডাক দেন এবং এরপর বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ১৯৪৮ সালে ১৭ মার্চ পূর্ব বাংলার ব্যবস্থাপক সভায় বাংলা ভাষার পক্ষে সমর্থন দেন এবং পাকিস্তানে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশ করেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালে ১৫ জুন পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের জন্য পল্টন ময়দানে জনসভা করেন। ১৯৫৭ সালের ৬ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি কাগমারী সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশে ‘আসসালামু আলাইকুম’ ঘোষণা করেন। ওই বছর মার্চে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে রাজনৈতিক ভিন্নমত প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন এবং ২৬ জুলাই ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৫ সালে আইয়ুববিরোধী নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে দাঁড়ান। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় দেশপ্রেমিকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালে ন্যাপের পক্ষ থেকে ১৪ দফা দাবি উত্থাপন করেন, আবার ১৯৬৮ সালে আইয়ুবের পতনের জন্য ১০ দফা ‘দাবি সপ্তাহ’ পালন করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুবের আহ্বানে গোলটেবিল বৈঠক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালের জানুয়ারি মাসে সন্তোষে ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলন, পাকিস্তানের টোবাটেক সিং-এ মার্চে কৃষক সম্মেলন এবং পাঁচবিবির মহিপুরে এপ্রিলে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৪ ডিসেম্বর পল্টনের জনসভায় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালইয়া দ্বীন’। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় তিনি গৃহবন্দি ছিলেন, তবে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। ১৯৭২ সালে তিনি আলোড়ন সৃষ্টিকারী সাপ্তাহিক হক-কথা প্রকাশ করেন। ৯ এপ্রিল ঢাকার পল্টন ময়দানে প্রথম জনসভায় ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান। তিনি আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন। দেশের দুর্ভিক্ষের সময় ১৯৭৪ সালে তার দেশব্যাপী ভুখা মিছিল আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭৬ সালে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ফারাক্কা মিছিলের ডাক দেন। ১৬ ও ১৭ মে রাজশাহী থেকে কানসাট পর্যন্ত ফারাক্কা অভিমুখে দীর্ঘ লংমার্চের নেতৃত্ব দেন। ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ উপলক্ষে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তার মাজারে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠন, যার মধ্যে রয়েছে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএনপি।


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আপডেট সময় ০৯:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা নেতা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার (১৭ নভেম্বর) পালিত হচ্ছে। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। ১৮৮০ সালে ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। যদিও সিরাজগঞ্জে তার জন্ম হলেও অধিকাংশ জীবন তিনি কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। এই মাটিতেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তার কৈশোর থেকে তরুণ বয়স পর্যন্ত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশের মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। লাইন-প্রথা দূরীকরণ, জমিদারদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সারাজীবন সাধারণ মানুষের কল্যাণে লড়াই চালিয়ে গেছেন। তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতার পর তার শেষ কীর্তি হিসেবে দেখা যায় ফারাক্কা লং মার্চ। ১৯১১ সালে তিনি মওলানা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগ দেন রাজনীতিতে। ১৯১৭-১৮ সালে তিনি প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে তুরস্কের সহায়তায় ভারতকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা রূপায়ণে রেশমী রুমাল আন্দোলন চালান এবং ১৯১৯ সালে কারাবরণ করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তিনি দেশবন্ধুর স্বরাজ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ১৯২৫ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত তিনি আসাম ও পূর্ব বাংলায় কৃষক-মজুরদের স্বার্থে সংগঠন গঠন করে জমিদার ও সুদখোর মহাজনের বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯২৮ সালে কলকাতায় খিলাফত সম্মেলন এবং ১৯২৯ সালে আসামের ভাসান চরে দ্বিতীয়বারের কৃষক-প্রজা সম্মেলনে যোগ দেন। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ১৯৩৬ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। আসামের প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি হন। ১৯৩৭ সালে আসামে লাইন প্রথার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং আসাম প্রদেশ পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের ৫ মার্চ আসামে আন্দোলনের ডাক দেন এবং এরপর বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ১৯৪৮ সালে ১৭ মার্চ পূর্ব বাংলার ব্যবস্থাপক সভায় বাংলা ভাষার পক্ষে সমর্থন দেন এবং পাকিস্তানে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশ করেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালে ১৫ জুন পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের জন্য পল্টন ময়দানে জনসভা করেন। ১৯৫৭ সালের ৬ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি কাগমারী সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশে ‘আসসালামু আলাইকুম’ ঘোষণা করেন। ওই বছর মার্চে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে রাজনৈতিক ভিন্নমত প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন এবং ২৬ জুলাই ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৫ সালে আইয়ুববিরোধী নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে দাঁড়ান। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় দেশপ্রেমিকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালে ন্যাপের পক্ষ থেকে ১৪ দফা দাবি উত্থাপন করেন, আবার ১৯৬৮ সালে আইয়ুবের পতনের জন্য ১০ দফা ‘দাবি সপ্তাহ’ পালন করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুবের আহ্বানে গোলটেবিল বৈঠক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালের জানুয়ারি মাসে সন্তোষে ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলন, পাকিস্তানের টোবাটেক সিং-এ মার্চে কৃষক সম্মেলন এবং পাঁচবিবির মহিপুরে এপ্রিলে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৪ ডিসেম্বর পল্টনের জনসভায় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালইয়া দ্বীন’। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় তিনি গৃহবন্দি ছিলেন, তবে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। ১৯৭২ সালে তিনি আলোড়ন সৃষ্টিকারী সাপ্তাহিক হক-কথা প্রকাশ করেন। ৯ এপ্রিল ঢাকার পল্টন ময়দানে প্রথম জনসভায় ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান। তিনি আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন। দেশের দুর্ভিক্ষের সময় ১৯৭৪ সালে তার দেশব্যাপী ভুখা মিছিল আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭৬ সালে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ফারাক্কা মিছিলের ডাক দেন। ১৬ ও ১৭ মে রাজশাহী থেকে কানসাট পর্যন্ত ফারাক্কা অভিমুখে দীর্ঘ লংমার্চের নেতৃত্ব দেন। ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ উপলক্ষে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তার মাজারে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠন, যার মধ্যে রয়েছে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএনপি।


প্রিন্ট