ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রিয় অতিথি ভবন যমুনায় রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানে এ বছর রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত ছিলেন রুবহানা রাকিব, নাবিলা ইদ্রিস, কল্পনা আক্তার ও ঋতুপর্ণা চাকমা। অনুষ্ঠানের প্রথমেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায় রোকেয়া পদকপ্রাপ্তরা। তারা বলেন, আপনাদের সংবর্ধনা পাবো এই প্রত্যাশায় আমরা উচ্ছসিত ছিলাম। কিন্তু গতকালকের ঘটনায় আমরা বিচলিত। নির্বাচনের জন্য দেশের রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ঐক্য বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা। প্রধান উপদেষ্টা জানান, এই হামলা পূর্বপরিকল্পিতভাবে চালানো হয়েছে। আমি পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। হাদির চিকিৎসার খোঁজ নিচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তারা সহায়তা করছে। রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত প্রত্যেকের কাছে তাদের কর্মস্থল ও অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ নেন তিনি। শ্রম আইনের পরিবর্তন ও শ্রম কনভেনশনে স্বাক্ষর করার জন্য কল্পনা আক্তারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, শ্রম আইনের সংশোধনী ও কনভেনশন দুটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এত দ্রুত সময়ের মধ্যে এ কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য ধন্যবাদ। আরও বলেন, গত সরকারের সময়ে মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গুলশানের নাভানা টাওয়ারের চশমা লুটের মতো অমূলক ঘটনার জন্য আমাকে আসামি করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা কেউ রোকেয়া পদক পাবে এটা আগে কেউ কল্পনা করেনি। অন্তর্বর্তী সরকারকে এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। তিনি আরও বলেন, কল্পনা আক্তার একজন শক্তিশালী নারী, সবসময় ন্যায্য কথা বলেন। বিশ্বজুড়ে তিনি সম্মানিত। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর যা কিছু করা উচিত ছিল, তার কিছুই করা হয়নি। শ্রম অধিকার ও কনভেনশনের গুরুত্ব আমি বুঝি এবং চেষ্টা করেছি যতটুকু সম্ভব এগুলো বাস্তবায়ন করতে। এ সময় তিনি শ্রমিকদের বেতন, কর্মপরিবেশসহ অন্যান্য বিষয়ে কল্পনা আক্তারের সঙ্গে আলোচনা করেন। গবেষক ড. রুবহানা রাকিবের খোঁজ নেন তিনি, বিশেষ করে আইসিডিডিআরবি’র পরিস্থিতি সম্পর্কে। বলেন, বিদেশি সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আইসিডিডিআরবি ও রোহিঙ্গারা। এ ব্যাপারে সরকার অবিরত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার কাছেও দলের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন তিনি। নারী দলের খেলার সময়, খাওয়া-দাওয়া ও অনুশীলনের ব্যবস্থা, নতুন খেলোয়াড় আসছে কি না, তারা কেমন পারফর্ম করছে—all এসব বিষয়ে তিনি জানতে চান। তিনি বলেন, দেশের সবাই তোমাদের (নারী ফুটবল দল) ভক্ত। অনেক তরুণ-তরুণী তোমাদের অনুসরণ করে। তোমাকে সম্মান দেওয়া আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তোমাকে সম্মানিত করার মানে হলো, যারা তোমাদের অনুসরণ করে, তাদের অনুপ্রাণিত করা। আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও উৎসাহিত হোক। মানবাধিকার বিভাগের রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত নাবিলা ইদ্রিসের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তুমি শুরু থেকেই তোমার দৃঢ়তার জন্য প্রশংসিত। তোমার সাহস মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। বহু মানুষকে মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছে। ভবিষ্যতেও যেন তোমার লড়াই অব্যাহত থাকে। গুমের বিচার শুরু করার জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে নাবিলা বলেন, এই তদন্ত ও বিচার বর্তমানে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা ঐতিহাসিক। আপনার উপস্থিতি না থাকলে আমরা গুম ও জুলাই গণহত্যার বিচার দেখতে পারতাম না। অনুষ্ঠানে রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত চারজনকে গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক সংগ্রাম ও জীবনযাত্রা নিয়ে লেখক প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তার নিজের লেখা বই ‘বেলতৈল গ্রামের জরিমন, ও অন্যান্যরা’ উপহার দেন। এসময় নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।