দেশের প্রায় ৯৫.৪ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৮৭.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উন্নত পানির সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। তবে, 'বেসিক ওয়াটার সার্ভিস' বা মৌলিক পানির পরিষেবার সংজ্ঞা অনুযায়ী— যেখানে উন্নত পানির উৎস প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে অবস্থিত থাকতে হবে—সেই হিসাবে এই অনুপাত কিছুটা কমে যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ৮৬.১ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৭০.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এই মানদণ্ড পূরণ করে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত ‘ওয়াশ ইন এডুকেশন অ্যান্ড হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ সার্ভে ২০২৪’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী ও বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি ফারুক আদ্রিয়ান ডুমুন। এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট মো. আলমগীর হোসেন জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন এবং বিবিএসের জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য শাখার পরিচালক মো. এমদাদুল হক স্বাগত বক্তব্য দেন। বিবিএস জানায়, জরিপে দেশের আটটি বিভাগ ও ৬৪টি জেলায় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। জরিপে বলা হয়, ৯০.৬ শতাংশ স্কুল এবং ৯৮.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত একটি টয়লেট রয়েছে। তবে, এই টয়লেটগুলোর মান, পর্যাপ্ততা ও ব্যবহারযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান হাত ধোয়ার জন্য স্থান থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে পানি ও সাবানের অভাব দেখা যায়। ফলে, মাত্র ৫১.৭ শতাংশ স্কুল এবং মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ‘বেসিক হ্যান্ডওয়াশিং’ পরিষেবার মানদণ্ড পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। মাত্র ২০.৭ শতাংশ স্কুলে কিশোরী মেয়েদের জন্য আলাদা, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার রয়েছে এবং মাত্র ৬.৯ শতাংশ স্কুল মৌলিক মাসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। এই অভাবগুলোর কারণে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি, অস্বস্তি ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বাড়ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আলাদা ছবি দেখা যায়। ৭৮.৩ শতাংশ স্কুল কঠোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা রাখলেও মাত্র ২৫.৪ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল মান অনুসরণ করা হয়। ৪১.৬ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বর্জ্য পোড়ানো হয় খোলা আকাশের নীচে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। গত ১২ মাসে ২৪.০ শতাংশ স্কুল ও ১৯.৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা সরাসরি পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামোর ক্ষতি ডেকে এনেছে। জরিপের উল্লেখ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশাধিকার এখনও সীমিত। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পানির উৎস রয়েছে ৫৫.৪ শতাংশ স্কুলে এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এই হার মাত্র ৪০.৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। মাত্র ১১.১ শতাংশ স্কুল ও ৩৪.৯ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘ওয়াশ’ খাতে নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ফলাফল দেখাচ্ছে, মাত্র ২৮.৬ শতাংশ স্কুল আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ৫০ শিক্ষার্থীর জন্য একটি উন্নত শৌচাগার সরবরাহ করে। বিবিএস সতর্ক করে বলেছে, বিনিয়োগ বাড়ানো, উন্নত পরিকল্পনা গ্রহণ ও জলবায়ু সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ওয়াশ ব্যবস্থার উপর জোর না দিলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে মৌলিক পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবা অপর্যাপ্ত থেকে যাবে। এর ফলে জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষার উপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।