শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) তিনি নিজের ফেসবুক পোষ্টে এ কথা জানান। পোষ্টে ড. আসিফ নজরুল লিখেন, ‘শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে। আইন, ২০০২ এর ১০ নম্বর ধারা অনুযায়ী পুলিশ রিপোর্ট আসার পর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করা হবে।’ এর আগে, ইনকিলাব মঞ্চ দাবি জানিয়েছে, শরীফ ওসমান হাদির হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে বারোটায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল জাবের এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা জরুরি। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থার সহায়তা নেওয়া দরকার। কোন ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নয়—আমরা চাই প্রকাশ্য ও অবাধ বিচার। আব্দুল্লাহ আল জাবের আরও বলেন, শহীদ ওসমান হাদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক ছিলেন। তাকে আড়াল করা যাবে না। তার হত্যার বিচার হওয়া উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, শরীফ ওসমান হাদির জানাজায় দশ লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত ছিল, যা প্রমাণ করে বাংলাদেশের জনগণ এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চায়। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি, গতকাল (২১ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে শহীদ ওসমান হাদির নাম বা হত্যার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এতে বোঝা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দপ্তর এই ঘটনায় উপেক্ষা বা তুচ্ছতা দেখানোর চেষ্টা করছে। তারা মনে করছে, এই ঘটনাকে চাপা দেওয়া যাবে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট বলতে চাই—বাংলাদেশের জনগণ চুপ করে থাকেনা। ইনকিলাব মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক জাবের আরও বলেন, গতকালের বিবৃতিতে স্পষ্ট—এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সরকারের কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই। কখনো বলা হয়, খুনি ভারতে পালিয়েছে, আবার কখনো বলা হয়, দেশেই রয়েছে। তখন প্রশ্ন হলো, দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা কি? জনগণের করের টাকায় তারা কি শুধু সুবিধা ভোগে লিপ্ত? আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, শহীদ ওসমান হাদি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তার হত্যাকে যদি এভাবে উপেক্ষা করা হয়, তাহলে আমরা বলতে চাই—আমাদের দুই দফার দাবির কোনওটাই বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও খুনির অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি, এমনকি ড্রাইভারকেও গ্রেফতার করা হয়নি। কখনো খুনির পরিবার বা সহয়োগীদের ধরে আনলেও বলা হচ্ছে, তারা পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারেনি। তাহলে গোয়েন্দা সংস্থার সক্ষমতা কোথায়? বাস্তবতা হলো, ইনকিলাব মঞ্চ বারবার তথ্য দিয়ে আপনাদের সহযোগিতা করেছে। আমরা না থাকলে, আপনি আজ পর্যন্ত খুনিকে শনাক্ত করতে পারতেন না। তাহলে এই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রয়োজন কি? সব কিছু যদি ইনকিলাব মঞ্চের করে নিতে হয়, তাহলে দায়িত্ব আমাদেরকেই দিয়ে দিন। তিনি আরও বলেন, আমাদের দ্বিতীয় দাবি ছিল, সিভিল ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে থাকা দোসরদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা। এ বিষয়ে কোনো শব্দও উচ্চারণ করেননি আপনারা। কোটি মানুষের দাবি উপেক্ষা করে, এটা খুবই দায়িত্বহীনতা। জাবের বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এই সরকারকে টিকিয়ে রাখেনি। যদি এই সরকার বিচার নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে এর কোনো নৈতিক অধিকার নেই সরকারের। আইন উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন, দায় এড়িয়ে যাওয়াই কি একমাত্র কাজ? জনগণ আপনাদের ভোট দিয়ে দায়িত্ব দিয়েছে, দায় এড়ানোর জন্য নয়। কারা তদন্তে বাধা দিচ্ছে, কারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে—সব পরিষ্কার করে বলুন, তারপর পদত্যাগ করুন। অন্য কোনো পথ নেই। তিনি বলেন, ড. ইউনূসকেও বলতে চাই—বাংলাদেশের জনগণ আপনাকে প্রধান উপদেষ্টা করেছে দেশের স্বাধীচ্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। জানাজার মাঠে আপনি শহীদ ওসমান হাদির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, কিন্তু একবারও বলেননি, এই হত্যার বিচার কেমন হবে। আপনার এই নীরবতা আমাদের গভীর হতাশ করেছে। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান—নির্বাচনের আগে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। বিচার ছাড়া কোনো নির্বাচন মানা হবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা আর রক্ত দিতে চাই না। কিন্তু যদি বিচারহীনতা চালু থাকে, তাহলে এর জন্য দায়ী থাকবে সরকার। ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। তারা যদি বিদেশে থাকে, তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।