তেত্রিশতম সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ বিষয়ে গণভোটের প্রচারাভিযানের জন্য সারাদেশে যাত্রা শুরু করেছে দশটি ভোটের গাড়ি—‘সুপার ক্যারাভান’। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করে এই ক্যারাভান যাত্রা শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত থেকে ফিতা কেটে ভোটের গাড়ির উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উপনীত হয়েছে। সামনে রয়েছে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট।
তিনি বলেন, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে ১০টি ভোটের গাড়ি—‘সুপার ক্যারাভান’। এই গাড়িগুলো দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩০০টি উপজেলায় ঘুরে বেড়াবে। তারা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে নির্বাচন ও গণভোটের তথ্য পৌঁছে দেবে, ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং গণতন্ত্রের বার্তা ছড়িয়ে দেবে। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘ভোটাধিকার কারো দয়া নয়—এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা ঠিক করি, আমাদের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়; এটি দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সুপার ক্যারাভান শুধুমাত্র একটি গাড়ি নয়—এটি গণতন্ত্রের আনন্দের বার্তা বহনকারী একটি যাত্রা। এটি আমাদের বুঝিয়ে দেবে, আপনার একটি ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি মনে করিয়ে দেবে, নিষ্ক্রিয়তা নয়—অংশগ্রহণই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।’ তিনি বিশেষভাবে অনুরোধ জানান, তরুণ সমাজ, নারী ভোটার ও প্রথমবারের ভোটাররা যেন এগিয়ে আসেন। প্রশ্ন করুন, জানুন, বুঝুন এবং ভোট দিন। আপনার সিদ্ধান্তই গড়ে তুলবে আগামী দিনের বাংলাদেশ—নতুন বাংলাদেশ।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা চাই এক এমন নির্বাচন যেখানে ভয়, বাধা থাকবেনা—শুধুমাত্র জনগণের মুক্ত ও নির্ভীক মতপ্রকাশ থাকবে। সরকার সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে বদ্ধপরিকর।’ তিনি জানান, ‘আপনি দেশের মালিক। এই দেশের ভবিষ্যৎ পাঁচ বছর কার হাতে থাকবে, সেটা আপনি ঠিক করবেন। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন, সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বেছে নিন। চিন্তা করে ভোট দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচনে আপনি একটি অতিরিক্ত ভোট দেবেন—জুলাই সনদে ভোট। দীর্ঘ নয় মাস ধরে রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে এই সনদ প্রণীত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি দেশের মানুষ এই সনদকে পছন্দ করেন, তবে দেশের ভবিষ্যৎ দীর্ঘকাল শান্তিপূর্ণভাবে চলবে। আপনি যদি এই সনদকে সমর্থন করেন, তবে গণভোটে অবশ্যই হ্যাঁ ভোট দিন।’
শেষে তিনি বলেন, ‘চলুন, সবাই মিলে এই গণতান্ত্রিক যাত্রাকে সফল করি। চলুন, ভোট দিই—নিজের জন্য, দেশের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, নতুন পৃথিবীর জন্য।’