রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হচ্ছে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার গঠন করা—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে বিএনপি সরকার গঠন করলেও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে, সেগুলো মোকাবিলা করতে হবে।
সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে নওগাঁ শহরের কনভেনশন সেন্টারে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও সরকারের প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস করে রেখে গেছে। দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা বিএনপির আছে। তাই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে সক্ষম হবে দলটি।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরে বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমি বসেছিলাম। তখন আপনাদের বলেছিলাম—আমাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই ভাবছে একটি প্রতিপক্ষ তো আর মাঠে নেই, আগামী নির্বাচন কি আর কঠিন হবে? আমি তখনই বলেছিলাম, আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন হবে। এক বছর আগে আমি বলেছিলাম, অদৃশ্য শক্তি বিভিন্নভাবে কাজ করছে, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আজকে কি আমার কথার অর্থ বুঝতে পারছেন? আমার কথার অর্থ অনুধাবন করতে পারছেন? কিন্তু যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, আগামী দিনে আমরা ইনশাআল্লাহ সফল হবো—যদি বিএনপি নামক পরিবারটির সকল সদস্য ঐক্যবদ্ধ থাকে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপিতে মানুষ আস্থা রাখতে চায়। যে কাজ করলে দেশ ও মানুষ উপকৃত হবে, তা বিএনপিরা করছে। অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত ফেব্রুয়ারিতে ভোটের মাধ্যমে জনগণ বিএনপিকে নির্বাচিত করবে। এ নির্বাচন ঘিরে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করা গেলে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তারা দেশের স্বার্থ চিন্তা না করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করেছে। তারা যখন দেশ লুটপাট করছিল, রাষ্ট্র মেরামতের জন্য তখন বিএনপি ৩১ দফা দাবি ঘোষণা করে। যারা এখন ‘সংস্কার, সংস্কার’ বলে দাবি তুলছেন—বিএনপি আড়াই বছর আগে সংস্কারের দাবি তুলেছিল।
সময় এসেছে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচনের—বলেন তারেক রহমান।
এর আগে দুপুরে নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম।
জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম রেজুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, রাজশাহী বিভাগ বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন এবং বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও দ্বিবার্ষিক সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক রেজাউল করিম বাদশাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে সভাপতির ১টি পদে ৮ জন, সাধারণ সম্পাদকের ১টি পদে ৪ জন এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের ৩টি পদে ৯ জনসহ মোট ২১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলার ১৪ ইউনিটের ১৪১৪ জন কাউন্সিলর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করছেন।
এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় সম্মেলন করতে না পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ ঘটা করে সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি। ১৫ বছর পর বিএনপির সম্মেলন ঘিরে পুরো শহর সেজেছে—নেতৃত্বে আসা নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। এই সম্মেলন ঘিরে ১৭ বছরের হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরণে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য।