জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক সারজিস আলম উল্লেখ করেন, ‘একটি স্পষ্ট কথা বলে দিতে চাই, এই অভ্যুত্থানে কতজন বড় রাজনৈতিক নেতার সন্তান জীবন হারিয়েছে, একবার হিসাব করে দেখবেন। এই ঘটনায় জীবন হারিয়েছেন আমাদের মতো সাধারণ মানুষ, শ্রমিকেরা এবং তাদের সন্তানরা। এর মধ্য দিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদরা লাভবান হচ্ছেন।’ শনিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার চৌরাস্তা বাজারের তেঁতুলতলায় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও সব অপকর্মের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধার পথে লংমার্চের পথসভায় এই মন্তব্য করেন তিনি। এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পাঁচ থেকে দশজন চাঁদাবাজ, চোরাকারবারি, সিন্ডিকেট চালক, মাদক ব্যবসায়ী এবং বাটপাররা মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই কারণেই আমি এ অঞ্চলে কাজ করছি। কারণ, আপনাদেরকে পুনরায় সচেতন হতে হবে।’ বক্তৃতায় তিনি পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের ঘটনা তুলে ধরেন। বলেন, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনীতে ৫০ হাজারের বেশি সৈন্য ছিল, হাজার হাজার মানুষ তার পক্ষে ছিল, কিন্তু মাত্র দুই-তিন হাজার ব্রিটিশ সেনার কাছে পরাজিত হতে হয়েছিল। কারণ, সবাই নির্বিকারভাবে দেখছিল। যদি কেউ একটুও এগিয়ে আসতো, তাহলে এই বাংলার স্বাধীনতা ২০০ বছর ধরে হারাতে হতো না। আজও একই অবস্থা।’ তিনি বলেন, ‘তেঁতুলিয়ায় দশ-পাঁচজন লোক মিলে রক্ত চুষে খাচ্ছে, আর আপনি নীরব দর্শকের মতো ভয় পেয়ে বসে থাকছেন।’ তেঁতুলিয়ায় ড্রেজার দিয়ে পাথর উত্তোলনের কড়া সমালোচনা করে সারজিস আলম বলেন, ‘যেদিন আপনার ঘরের নিচে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে তোলা পাথর সরবে, আপনার বাড়ি ধসে যাবে, পাঁচ বছরেও আপনার ঘর মেরামত সম্ভব হবে না। বৃষ্টির সময় ঘরে পানি প্রবেশ করবে, তখন আপনার নেতারা আপনাকে দেখবে না। মনে রাখবেন, সোনার হাঁস থেকে প্রতিদিন একটা ডিম আসুক, সমস্যা নেই; সনাতন পদ্ধতিতে বালু-পাথর উত্তোলন করলেও চলে। কিন্তু একদিনে সব ডিম চাইলে, ড্রেজিং মেশিন বসালে, প্রতিদিন দশজনকে লাখ লাখ টাকা পকেটে ঢুকালে, কিছু দিন পরে আপনার ঘর-ঘর থাকবে না, সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, আর আপনার ফসলি জমিতেও ফসল হবে না। যদি আপনি নিজে সচেতন না হন, কেউ আপনাদেরকে সচেতন করবে না।’ পঞ্চগড় জেলার আয়োজনের অংশ হিসেবে শনিবার দুপুর সোয়া বারোটায় জেলার ঐতিহাসিক চিনিকল মাঠ থেকে বাংলাবান্ধার উদ্দেশে এই লংমার্চ শুরু হয়। এতে এনসিপির পাঁচ উপজেলার নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় কর্মীরা অংশ নেন।