বড়পুকুরিয়ায় খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া
ফুলবাড়ীতে শিশু পার্ক উদ্বোধন
আমি চাই ও আমার হাত ছেড়ে দিক
চীনের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের
টিকটকে উসকানিমূলক ভিডিও, আ.লীগ নেত্রী সুলতানা আটক
শুরু হলো মহান বিজয়ের মাস
সেন্টমার্টিনে আজ থেকে রাতযাপনের সুযোগ, মানতে হবে যেসব শর্ত
বাবা-ভাইদের হাতে প্রেমিকের মৃত্যু, মরদেহকেই ‘বিয়ে’ তরুণীর
পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শ্রমিককে হত্যার অভিযোগ
নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে ফের জটিলতা
সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ একপেশে, জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে: মির্জা ফখরুল
- আপডেট সময় ০১:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৫ বার পড়া হয়েছে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক দেওয়া সুপারিশ একপাক্ষিক এবং তা জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন। মির্জা ফখরুল আরও বলেন-
১। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ব্যাপক বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন একটি গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সূচনা হয়। এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাঠামো ও ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য জাতির প্রত্যাশা এবং শহীদদের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য যে, বিএনপি প্রায় এক বছর আগে ২০২৩ সালে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে ৩১ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। এর আগে ২০২২ সালে ২৭ দফা এবং ২০১৭ সালে ভিশন-২০৩০ প্রকাশ করে। ফলে, বিএনপি ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ব্যক্তিবর্গ ও শক্তিগুলো জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সার্বিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আসছে। তাই, প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কারই বিএনপির অগ্রগণ্য রাজনৈতিক এজেন্ডা। ২। গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তীতে বর্তমান মধ্যবর্তী সরকারের ঘোষিত ও গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। এই কমিশনগুলোর কাছে আমরা সংবিধান, বিচারবিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বিস্তারিত মতামত প্রদান করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে। এরপর ওই ছয়টি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও মতবিনিময় চলে। এই আলোচনা ও মতবিনিময়ের ভিত্তিতে প্রণীত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়, যার সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা। ৩। প্রথম বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও স্বাক্ষরিত হবে। পরবর্তীতে নির্বাচিত সংসদ সেই সনদের বাস্তবায়ন করবে। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাষণে এই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জুলাই ঘোষণাপত্রেও এই বক্তব্য রয়েছে। ৪। দীর্ঘ আলোচনা ও আলোচনার মাধ্যমে কিছু কিছু বিষয় নিয়ে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট থাকলেও, বেশিরভাগ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জুলাই ২০২৫ সালের জাতীয় সনদে উল্লেখ আছে যে, ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী রাজনৈতিক দল বা জোট, যদি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক জনগণের ম্যান্ডেট পায়, তাহলে তারা সেমতে বা গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে পারবে। উল্লেখ্য, এই সকল অনুষ্ঠান বিটিভিসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়েছে, যা সকলেই প্রত্যক্ষ করেছেন। এরপর ১৭ অক্টোবর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এক ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে আমরা কেবল আলোচনা করে প্রণীত সনদে স্বাক্ষর করেছি; কিন্তু সেই দিন চূড়ান্ত কপি আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়নি। ৫। পরে প্রকাশিত প্রিন্টেড পুস্তক হিসেবে জুলাই সনদের কপি দেখায়, কিছু কিছু দফা আমাদের অজান্তে পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে। যেমনঃ সরকারী ও বেসরকারী অফিসে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোর বিধান [অনুচ্ছেদ ৪ (ক)] সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এর অনুমোদন দিয়েছে। আবার সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ ও তফসিলের সংশোধন নিয়ে ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও অজান্তে সেটি চূড়ান্ত সনদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৬। জুলাই সনদ ২০২৫ এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ২৮ অক্টোবর সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সুপারিশের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়দ্বয় দুই পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হবে এবং আইনগত ভিত্তি প্রদান করা হবে। ৭। চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকার “জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫” জারি করবে। এই আদেশের খসড়া সংযুক্তি-২ ও সংযুক্তি-৩ এ দেয়া হয়েছে। ৮। সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুসারে, এই ধরনের আদেশ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ব্যতিরেকে জারি করা সম্ভব নয়। ৯। বিকল্প-১ এ বলা হয়েছে, সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করবে, যার তফসিল-১ এ সব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই বিল গেজেটে প্রকাশিত হবে। ১০। এই বিলের মধ্যে উল্লেখ আছে যে, সংবিধানের তফসিল-১ এ বর্ণিত ৪৮ দফার উপর গণভোট হবে। ১১। এই দফাগুলোর বিপরীতে স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের মতামত বা ভিন্নমত, নোট অব ডিসেন্ট উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ ও প্রস্তাবগুলো একপাক্ষিক ও জোরপূর্বকভাবে জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এর ফলে বোঝা যায়, প্রায় এক বছর ধরে চলা সংশ্লিষ্ট কমিশন ও রাজনৈতিক দলের আলোচনা অর্থহীন, সময়ের অপচয় এবং প্রতারণামূলক। ১২। গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক, এবং তা নিয়ে আলোচনার দরকার ছিল। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতকে আমলই দেয়নি। ১৩। বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় সংসদ গঠনের পাশাপাশি একটি “সংবিধান সংস্কার পরিষদ” গঠিত হবে, যেখানে সংসদ সদস্য ও পরিষদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে। তবে, নির্বাচন কমিশন সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। এই বিষয়টি আলোচনায় আসেনি, এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কোন আলোচনা হয়নি। পরবর্তী সংসদে এই পরিষদ গঠন করতে হবে। যদি গণভোটে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসে, তাহলে সংশ্লিষ্ট বিল সংবিধান সংস্কার পরিষদে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু এর আগেই নির্বাচন ও গণভোটের আয়োজন সম্পন্ন হওয়া অযৌক্তিক। ১৪। বলা হয়েছে, যদি সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশনের ২৭০ দিন মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই সংস্কার বিল সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হাস্যকর। কারণ, সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় না। ১৫। বিকল্প-২ এ উল্লেখ রয়েছে, জুলাই সনদ সম্পর্কিত প্রস্তাব সরাসরি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে, বিল আকারে নয়। তবে, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অনেক মতামত, ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট উপস্থাপন হয়নি। ১৬। চিঠিতে বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচনের দিনই এই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। বিএনপি এর আগেও এই প্রস্তাব করেছিল, যেন জাতীয় ঐক্য রক্ষায়। ১৭। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ক্ষেত্রে, নির্বাচন আগে হওয়ার কারণে, গণভোট সম্ভব নয়। সময়ের অভাব, ব্যয়বহুলতা ও নিরাপত্তার কারণে, নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক। একই সময়ে ও একই খরচে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনই সুবিধাজনক। ১৮। জুলাই সনদ ২০২৫ এ উল্লেখিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারে সরকার (সংযুক্তি-৪), এবং নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কিছু সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নও সম্ভব (সংযুক্তি-৫)। এই বিষয়গুলোতে আমরা ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করেছি। এছাড়া, আইনী ভিত্তি ও গণভোটের মাধ্যমে এই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টিও আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে, যেসব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি, বা ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে, সেগুলো অগ্রহণযোগ্য বলে আমরা মনে করি। এই সুপারিশগুলো জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টি করবে—এমনটাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। দীর্ঘ সময়ের আলোচনার পরও কিছু বিষয় অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করি। ১৯। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দীর্ঘ ১৬ বছরের সংগ্রাম, শহীদদের রক্তের অঙ্গীকার, এবং গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন পূরণে আমরা একত্রিতভাবে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব। এই রাষ্ট্রে থাকবে সমতা, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার। এই লক্ষ্যেই সকলের ঐক্য প্রয়োজন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হবে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সত্যিকার প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রতিষ্ঠা।
প্রিন্ট






















