জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্যের জন্য কমিশনের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) পক্ষ থেকে আবারও বলী দেওয়া হয় যে, বিবাদমান পক্ষগুলো ইগো ও তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে গিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ কার্যকর করার জন্য একযোগে সম্মত হওয়া প্রয়োজন। যদি এই ঐক্য না আসে, তবে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পদত্যাগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তদ্ব্যতীত, পরিস্থিতি খুবই জটিল রূপ নিতে পারে বলে দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্যের সুপারিশের বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন, যেখানে জানানো হয় যে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই সুপারিশ জমা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাহী আদেশ জারি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত যে কোনো দিন গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। যদি সংসদের প্রথম ৯ মাসে (২৭০ দিন) সংবিধান সংস্কার পরিষদ এই সংস্কার শেষ করতে না পারে, তবে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই সনদে আইনি ভিত্তি হিসেবে তিনটি ধাপে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথমে, জুলাই সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়নের জন্য আদেশ জারি। দ্বিতীয়ত, এই আদেশের প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন এবং শেষ পর্যায়ে, আগামী জাতীয় সংসদে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও সংসদ) দেওয়ার মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা। এই তিন ধাপে এই সুপারিশের বাস্তবায়ন হবে—৯টি নির্বাহী আদেশ, ২৮টি অধ্যাদেশ এবং সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি প্রস্তাব সংবিধান সংস্কার পরিষদের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। মঞ্জু বললেন, সংবিধান সংশ্লিষ্ট নয় এমন বিষয়গুলো সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। সুপারিশে অনেক বিষয় রয়েছে যা অফিস আদেশের মাধ্যমেও সম্পন্ন সম্ভব। এসব বিষয়ে দলের সঙ্গে কমিশনের কোনো মতবিরোধ নেই। প্রথম দুই ধাপ দ্রুত সম্পন্ন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যায়ের প্রস্তাবগুলোর জন্য দুটো বিকল্প রাখা হয়েছে এবং জনগণের ভোটে বৈধতা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। এবি পার্টি কখন গণভোট চায়? এ প্রশ্নের উত্তরে মঞ্জু বলেন, আমরা আশা করি, সরকার যখন চূড়ান্তভাবে গণভোটের আয়োজন করবে, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তা মেনে নেবে। গণভোটের সময় নোট অফ ডিসেন্টের ব্যাপার কী হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের মাধ্যমে এই দেশের নাগরিকরা জুলাই সনদের সফল বাস্তবায়নের প্রত্যয় প্রকাশ করবেন। অতএব, নোট অফ ডিসেন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। তবে, আমরা আশা করি যে, যারা রাজনৈতিক দল নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছেন, তারা গণভোটের পূর্বেই জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সেগুলো প্রত্যাহার করবেন। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক অঙ্গীকারের দলিল। এর বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত সময় (২৭০ দিন) যথেষ্ট বলে মনে করেন তিনি। দীর্ঘ আলোচনা ও যুক্তিতর্কের মধ্যে দিয়ে প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরবর্তী সংসদে এগুলো নিয়ে নতুন করে বিশদ আলোচনা খুব বেশি প্রয়োজন হবে না। এগুলো সংবিধানে সন্নিবেশিত করতেও খুব বেশি সময় লাগবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা যথেষ্ট আলোচনা ও যুক্তি উপস্থাপন করেছি। বিবাদমান পক্ষগুলো যেন আবার ইগো ও বিতর্ক এড়িয়ে গিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ কার্যকর করতে একমত হন, সেটাই জরুরি। সংবাদ সম্মেলনে দলের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, আনোয়ার সাদাত টুটুল, ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, এবিএম খালিদ হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক সেলিম খান প্রমুখ।