গণভোটের সিদ্ধান্ত যারা মানতে নারাজ, তাদের জনগণই প্রত্যাখ্যান করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা বিষয়ক সেমিনারে বক্তৃতাকালে তিনি এই কথা বলেন। আখতার বলেন, সম্প্রতি এক দলের নেতারা চূড়ান্তভাবে গণভোটের বিরোধিতা করে অবস্থান নিয়েছেন। তারা আগে থেকেই গণভোটের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে জনগণের রায়কে অস্বীকার করেছে। যারা গণভোটের সিদ্ধান্ত মানবে না, তারা জনগণের প্রতিনিধিত্বকেও অস্বীকার করেছে। তাদেরকেও জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। সংস্কার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘জুলাই সনদের ব্যাপারে অনেক দল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, যা আমরা সন্দেহের চোখে দেখি। সংস্কার প্রক্রিয়া ‘সরকারের ইচ্ছেমতো’ ভাগের কারণে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’ আখতার হোসেন কৃষকদের অধিকারের বিষয়েও আলোচনা করে বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক দল গণভোটের আড়ালে কৃষকের অধিকারকে অবহেলা করছে। গণভোট এবং কৃষকদের অধিকার দুইটাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কার ও কৃষকদের অধিকার আলাদা কিছু নয়, বরং একই সূত্রে গাঁথা।’ আখতার অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভাষণে উন্নয়নের বাংলাদেশে কৃষকরা এখনো ক্ষতিগ্রস্ত ও ঋণের জালে আবদ্ধ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা দেশের টাকা লুকিয়ে বাইরে পাচার করেছেন। আমরা আশা করি, কৃষিকে রক্ষা করে একটি পলিসি-ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।’ দেশের আইনশৃঙ্খলার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পরও এ ধরনের সহিংসতা ও মারামারিতে আমরা হতাশ।’ এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘দেশে কৃষি জমি খালি রাখা যাবে না, সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেখানে অবশ্যই চাষাবাদ চালিয়ে যেতে হবে। সার সংকটের জন্য তিনি চোরাচালানকেই দায়ী করে বলেন, বাংলাদেশে সার মিয়ানমারে চোরাচালান হচ্ছে, ফলে দেশের সারের অভাব দেখা দিয়েছে। যদি ঘরে চোর থাকে, তাহলে বিদেশের চোরের দরকার হয় না।’ দেশের দখলদারিত্ব ও দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে হান্নান মাসউদ বলেন, ‘প্রভাবশালী দখলদাররা খাল ও নদী উদ্ধার করতে বাধা দেয়। হোসিনা পালানোর জন্য নয়, বরং খাল-নদী উদ্ধার করতে গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। কারণ, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব খাল দখল করে রাখে।’ গত ৫০ বছরে গঠিত কমিশনগুলোকে ‘দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করার জন্য’ দায়ী করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে এসব কমিশন নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে এতদিন দেশে কৃষিবিপ্লব সম্ভব হয়নি। এতদিন যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক অর্থনীতি চালু ছিল, তা পরিবর্তন করতে Nobel বিজয়ী অর্থনীতিবিদকে আনা হয়েছিল। তবে চাপের কারণে প্রফেসর ইউনূস আত্মসমর্পণ করেছেন। পুরোনো সময়ে আমাদের ফেলে রেখে এখন লড়াই চালিয়ে যেতে বলছেন।’ অনুষ্ঠানে দেশের সাংবিধানিক সংকট ও রাজনীতির মান নিয়ে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, কারণ এই দেশের সামাজিক ও আইনি ভিত্তি ব্রিটিশরা তৈরি করে দিয়ে গেছে। তিনি ছাত্র ও জাতীয় রাজনীতির মধ্যে বিশাল ফারাক তুলে ধরে বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতির মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত আমরা বুঝতে পেরেছি। জাতীয় রাজনীতি এখন গুণ্ডা ও চাঁদাবাজদের দখলে। কৃষিকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে তিনি বলেন, ‘কৃষিকে আলাদা খাত হিসেবে বিবেচনা না করে মূল ধারায় নিয়ে আসা দরকার। এনসিপি চায়, একজন কৃষক যেন সংসদে যেতে পারে, নিজের অধিকার নিজেই বলতে পারে। কৃষিকে দখলমুক্ত করে যদি কৃষিবিপ্লব সম্ভব হয়, তবে তবেই পরিবর্তন আসবে।’