, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

জুলাই অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার সকল প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৩:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ৭ বার পড়া হয়েছে

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির উপর হামলার ঘটনাকে জুলাই অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রের অংশ বলে উল্লেখ করে রাজনৈতিক নেতারা বলেছেন, এই অভ্যুত্থানকে দমন করার জন্য সকল প্রচেষ্টা রুখে দিতে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই আশ্বাস দেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি নেতারা। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ওসমান হাদির উপর হামলা পরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বৃহৎ শক্তি কাজ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন সম্পন্ন হতে না দেওয়া। এই হামলাটি খুবই প্রতীকী। তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনকে অচল করে দিতে চায়। এসব মোকাবিলায় একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।’ আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মনে হচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’ বৈঠকে ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে ওসমান হাদীর ওপর ন্যক্কারজনক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সকল দলের সমন্বিত প্রতিবাদ সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই ঐ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যকে দৃঢ়ভাবে বজায় রাখতে দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা। এ ব্যাপারে তারা দৃঢ় অবস্থান নেবে বলে আশ্বাস দেন। পাশাপাশি, নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও কঠোর অভিযান চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা অপরিহার্য। একে অন্যের দোষত্রুটি দেখানো থেকে বিরত থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে ও একত্রে প্রতিবাদ জানাতে হবে। কোন অপশক্তির দমন আমরা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও, জাতির স্বার্থে ও জুলাইয়ের স্বার্থে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।’ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর তাগিদ দেন তিনি। জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বক্তব্যে একে অন্যের দোষারোপের প্রবণতা বেড়েছে, যা আমাদের দুর্বল করেছে। আমাদের ঐক্য বজায় রাখতে হবে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানানোর প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে হবে। জাতিকে বিভক্ত করে এমন ভাষণ দিতো চলবে না। সকল দল তাদের দায়িত্বে সচেতন হোক।’ এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে কিছু লোক এই ঘটনার গুরুত্ব কমানোর জন্য বিভিন্ন অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠিতভাবে এই বিষয়ে ক্যাম্পেইন চলছে। মিডিয়া ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এই কাজ চলমান। নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা কেউই এর থেকে মুক্ত থাকবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন গল্প চালানো হচ্ছে, যেন অভিযুক্তরা অপরাধী। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টকশোতে নিয়মিত অংশ নেয়া, প্রশাসনের বৈঠক, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমাবেশ ও আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।’ ‘আমাদের কোন নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই, আমরা সেটি নেব না। সবাইকে একত্রে মিলেমিশে জুলাইকে মোকাবিলা করতে হবে। এই টানাপোড়েন আমাদের দুর্বল করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের অখণ্ডতা দেখছে, আর আমরা কিছুই করতে পারছি না,’ বলেন তিনি। আরও বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীর বেশে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকারীদের থামাতে হবে। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।’ হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘নিজেদের ঐক্যবদ্ধ না থাকলে কোন নিরাপত্তা কাজে আসবে না। রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো নানা সুযোগ তৈরি করছে আওয়ামী লীগকে।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ভাবতে হবে—আমরা কি করতে পারি। শুধু সরকার নয়, সবাইকে শক্তিশালী হতে হবে। যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে। রাজনৈতিক ভাষ্য থাকবে, তবে শত্রু বা আক্রমণের সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের সময় উত্তেজনা বাড়ে, তবে মনে রাখতে হবে—এটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।’ আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ায় আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে।’ তিনি তাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নিজেদের দলীয় স্বার্থের পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থের বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।’


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

জুলাই অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার সকল প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো

আপডেট সময় ০৩:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির উপর হামলার ঘটনাকে জুলাই অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রের অংশ বলে উল্লেখ করে রাজনৈতিক নেতারা বলেছেন, এই অভ্যুত্থানকে দমন করার জন্য সকল প্রচেষ্টা রুখে দিতে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই আশ্বাস দেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি নেতারা। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ওসমান হাদির উপর হামলা পরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বৃহৎ শক্তি কাজ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন সম্পন্ন হতে না দেওয়া। এই হামলাটি খুবই প্রতীকী। তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনকে অচল করে দিতে চায়। এসব মোকাবিলায় একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।’ আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মনে হচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’ বৈঠকে ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে ওসমান হাদীর ওপর ন্যক্কারজনক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সকল দলের সমন্বিত প্রতিবাদ সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই ঐ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যকে দৃঢ়ভাবে বজায় রাখতে দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা। এ ব্যাপারে তারা দৃঢ় অবস্থান নেবে বলে আশ্বাস দেন। পাশাপাশি, নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও কঠোর অভিযান চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা অপরিহার্য। একে অন্যের দোষত্রুটি দেখানো থেকে বিরত থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে ও একত্রে প্রতিবাদ জানাতে হবে। কোন অপশক্তির দমন আমরা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও, জাতির স্বার্থে ও জুলাইয়ের স্বার্থে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।’ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর তাগিদ দেন তিনি। জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বক্তব্যে একে অন্যের দোষারোপের প্রবণতা বেড়েছে, যা আমাদের দুর্বল করেছে। আমাদের ঐক্য বজায় রাখতে হবে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানানোর প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে হবে। জাতিকে বিভক্ত করে এমন ভাষণ দিতো চলবে না। সকল দল তাদের দায়িত্বে সচেতন হোক।’ এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে কিছু লোক এই ঘটনার গুরুত্ব কমানোর জন্য বিভিন্ন অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠিতভাবে এই বিষয়ে ক্যাম্পেইন চলছে। মিডিয়া ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এই কাজ চলমান। নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা কেউই এর থেকে মুক্ত থাকবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন গল্প চালানো হচ্ছে, যেন অভিযুক্তরা অপরাধী। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টকশোতে নিয়মিত অংশ নেয়া, প্রশাসনের বৈঠক, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমাবেশ ও আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।’ ‘আমাদের কোন নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই, আমরা সেটি নেব না। সবাইকে একত্রে মিলেমিশে জুলাইকে মোকাবিলা করতে হবে। এই টানাপোড়েন আমাদের দুর্বল করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের অখণ্ডতা দেখছে, আর আমরা কিছুই করতে পারছি না,’ বলেন তিনি। আরও বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীর বেশে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকারীদের থামাতে হবে। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।’ হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘নিজেদের ঐক্যবদ্ধ না থাকলে কোন নিরাপত্তা কাজে আসবে না। রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো নানা সুযোগ তৈরি করছে আওয়ামী লীগকে।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ভাবতে হবে—আমরা কি করতে পারি। শুধু সরকার নয়, সবাইকে শক্তিশালী হতে হবে। যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে। রাজনৈতিক ভাষ্য থাকবে, তবে শত্রু বা আক্রমণের সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের সময় উত্তেজনা বাড়ে, তবে মনে রাখতে হবে—এটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।’ আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ায় আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে।’ তিনি তাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নিজেদের দলীয় স্বার্থের পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থের বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।’


প্রিন্ট