বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ আশঙ্কাজনক দিকে মোড় নিচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক বিশেষ জরুরি সভায় ইনকিলাব মঞ্চের সভাপতি শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুসহ সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় জানানো হয়, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় হাদির মৃত্যু একটি কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড এবং এই ঘটনায় দলটির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি আবারও ব্যক্ত করা হয়। সভায় আরও বলা হয়, হাদির মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একদল অশৃঙ্খল ব্যক্তি দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এতে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি মোকাবিলা করছে। সেই সঙ্গে, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবিরের ওপর হামলা, ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপি বলেছে, কিছু চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে দেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইছে। দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ করে নতুন করে ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে। এসব ঘটনা সরকারের নাকের ডগায় ঘটলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন জনগণ, যা দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করছে। সভায় আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে হাদির হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ন্যায়বিচার দাবি জানিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে এসব হামলা ও সহিংসতা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চাওয়া ষড়যন্ত্র হিসেবে বিএনপি মনে করে। দলটি দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষদের উদ্দেশ্যে সতর্ক করে বলেছে, বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশকে ধ্বংস করতে দেওয়া হবে না। নৈরাজ্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ পতন ঘটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচনের ব্যবস্থা সম্ভব হয়েছিল, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আবারও সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে একত্র হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সভায় সাম্প্রতিক সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারতের হাইকমিশনের কার্যালয় ও বাসভবনে হামলা, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অগ্নিসংযোগ, ছায়ানট ও ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারে হামলা, উত্তরা ও রাজশাহীতে ভাঙচুর, ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা, চট্টগ্রামে প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসা ও সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, এবং সাংবাদিক নুরুল কবিরের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।