, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নোটিশ :
সংবাদের বিষয়ে কিছু জানাতে ইমেইল করুন [email protected] ঠিকানায়

ইন্দোনেশিয়ার বন্যায় মৃত্যু ৫০০ ছাড়াল

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় ৩ ঘন্টা আগে
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে

ইন্দোনেশিয়ায় গত সপ্তাহের বিপজ্জনক বন্যায় মৃতের সংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়েছে। এখনও অনেক এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধারকারীরা দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মালাক্কা প্রণালীর উপর এক বিরল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর এই বন্যা তিনটি প্রদেশে আঘাত হানে। এতে প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আরও প্রায় পাঁচশো মানুষ নিখোঁজ এবং হাজারো মানুষ আহত। একই সময়ে এশিয়ার অন্যান্য কয়েকটি দেশে অবিরাম বর্ষা ও ঝড়ের কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ, উত্তর সুমাত্রা ও পশ্চিম সুমাত্রা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ এখনও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন এবং জরুরি খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছেন না। আচেহর পিদিয়ে জায়া এলাকার বাসিন্দা আরিনি আমালিয়া বিবিসিকে বলেন, বন্যার পানি ছিল ‘সুনামির মতো’। তিনি আরও জানান, তার দাদীর জীবনে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার কারণে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় উদ্ধারকর্মীরা পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেলে দুর্গম এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন স্থানে সেতু ধসে গেছে, রাস্তাঘাট কাদার ঢেউয়ে ভরে গেছে এবং কাঠগাছের স্তূপ জমেছে। পশ্চিম সুমাত্রার টুইন ব্রিজেস এলাকায় পাহাড়ি স্রোতে কাদা ও ধ্বংসাবশেষ জমে থাকার মধ্যে মারিয়ানা নামের এক নারী তার নিখোঁজ পরিবারের খোঁজে অপেক্ষা করছিলেন। তার ১৫ বছরের ছেলে ও অন্যান্য স্বজনদের খুঁজে পাওয়ার আশায় তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ কাদা দেখছি, ভাবছি আমার সন্তানকে কীভাবে পাবো।’ উত্তর সুমাত্রার সেন্ট্রাল তাপানুলিতে মাইসান্তি নামে এক নারী জানান, তাদের এলাকায় সাহায্য পৌঁছাতে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। খাবার নেই। এমনকি ইনস্ট্যান্ট নুডল নিয়েও মারামারি চলছে। আমাদের খাবার ও চাল দরকার। আমাদের যাওয়ার সব পথ বন্ধ।’ তিনি আরও জানান, ইন্টারনেট ও পানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে তাকে কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হচ্ছে। সেন্ট্রাল আচেহতে স্থানীয় প্রশাসন স্টারলিংক ডিভাইস বসিয়েছে। সেখানে রবিবার রাতে হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বা ফোন চার্জ দিতে। মার নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে কোনো সিগনাল নেই। আমি আমার মাকে ফোন করতে চাইছি, কিন্তু পারছি না।’ উদ্ধারকাজের অগ্রগতি যেমন হচ্ছে, তেমনি সরকারের দুর্যোগ প্রস্তুতির বিষয়ে ক্ষোভও বাড়ছে। সমালোচকদের অভিযোগ, সরকার যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না এবং জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্য পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। সোমবার উত্তর সুমাত্রার বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো স্বীকার করেন যে কিছু রাস্তা এখনও বিচ্ছিন্ন। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবকিছু করছি। দৃঢ়তা ও ঐক্য দিয়ে আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি।’ ইন্দোনেশিয়ায় নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মৌসুমি বৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের ঝড় আরও ঘনঘন ও তীব্র হয়ে উঠছে, ফলে বাড়ছে ভারী বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা ও ঝোড়ো হাওয়ার ঘটনা। সূত্র- বিবিসি


প্রিন্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

ইন্দোনেশিয়ার বন্যায় মৃত্যু ৫০০ ছাড়াল

আপডেট সময় ৩ ঘন্টা আগে

ইন্দোনেশিয়ায় গত সপ্তাহের বিপজ্জনক বন্যায় মৃতের সংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়েছে। এখনও অনেক এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধারকারীরা দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মালাক্কা প্রণালীর উপর এক বিরল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর এই বন্যা তিনটি প্রদেশে আঘাত হানে। এতে প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আরও প্রায় পাঁচশো মানুষ নিখোঁজ এবং হাজারো মানুষ আহত। একই সময়ে এশিয়ার অন্যান্য কয়েকটি দেশে অবিরাম বর্ষা ও ঝড়ের কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ, উত্তর সুমাত্রা ও পশ্চিম সুমাত্রা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ এখনও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন এবং জরুরি খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছেন না। আচেহর পিদিয়ে জায়া এলাকার বাসিন্দা আরিনি আমালিয়া বিবিসিকে বলেন, বন্যার পানি ছিল ‘সুনামির মতো’। তিনি আরও জানান, তার দাদীর জীবনে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার কারণে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় উদ্ধারকর্মীরা পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেলে দুর্গম এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন স্থানে সেতু ধসে গেছে, রাস্তাঘাট কাদার ঢেউয়ে ভরে গেছে এবং কাঠগাছের স্তূপ জমেছে। পশ্চিম সুমাত্রার টুইন ব্রিজেস এলাকায় পাহাড়ি স্রোতে কাদা ও ধ্বংসাবশেষ জমে থাকার মধ্যে মারিয়ানা নামের এক নারী তার নিখোঁজ পরিবারের খোঁজে অপেক্ষা করছিলেন। তার ১৫ বছরের ছেলে ও অন্যান্য স্বজনদের খুঁজে পাওয়ার আশায় তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ কাদা দেখছি, ভাবছি আমার সন্তানকে কীভাবে পাবো।’ উত্তর সুমাত্রার সেন্ট্রাল তাপানুলিতে মাইসান্তি নামে এক নারী জানান, তাদের এলাকায় সাহায্য পৌঁছাতে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। খাবার নেই। এমনকি ইনস্ট্যান্ট নুডল নিয়েও মারামারি চলছে। আমাদের খাবার ও চাল দরকার। আমাদের যাওয়ার সব পথ বন্ধ।’ তিনি আরও জানান, ইন্টারনেট ও পানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে তাকে কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হচ্ছে। সেন্ট্রাল আচেহতে স্থানীয় প্রশাসন স্টারলিংক ডিভাইস বসিয়েছে। সেখানে রবিবার রাতে হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বা ফোন চার্জ দিতে। মার নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে কোনো সিগনাল নেই। আমি আমার মাকে ফোন করতে চাইছি, কিন্তু পারছি না।’ উদ্ধারকাজের অগ্রগতি যেমন হচ্ছে, তেমনি সরকারের দুর্যোগ প্রস্তুতির বিষয়ে ক্ষোভও বাড়ছে। সমালোচকদের অভিযোগ, সরকার যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না এবং জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্য পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। সোমবার উত্তর সুমাত্রার বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো স্বীকার করেন যে কিছু রাস্তা এখনও বিচ্ছিন্ন। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবকিছু করছি। দৃঢ়তা ও ঐক্য দিয়ে আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি।’ ইন্দোনেশিয়ায় নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মৌসুমি বৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের ঝড় আরও ঘনঘন ও তীব্র হয়ে উঠছে, ফলে বাড়ছে ভারী বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা ও ঝোড়ো হাওয়ার ঘটনা। সূত্র- বিবিসি


প্রিন্ট